ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যেভাবে সেমিতে চার দল

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৯ মার্চ ২০১৬

যেভাবে সেমিতে চার দল

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ দেখতে দেখতে ছোট হয়ে এলো টি২০ বিশ্বকাপের পরিধি। শুরু হয়েছিল প্রথম পর্ব দিয়ে (কার্যত বাছাই)। এরপর সুপার টেন বা সেরা দশ। নানা ঘটন-অঘটনের মধ্য দিয়ে সেখান থেকে ঝরে গেল ছয় দল। রইল বাকি চার। শিরোপার দৌড়ে শেষ চারে স্বাগতিক ভারতের সঙ্গী হলো নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড। গ্রুপ-১ থেকে ‘ডিফেন্ডিং’ চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা, শক্তিধর দক্ষিণ আফ্রিকা ও সহযোগী দেশ আফগানিস্তানকে ছিটকে দিয়ে সেমিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ইংল্যান্ড। অন্যদিকে ‘ডেথ গ্রুপ’ খ্যাত গ্রুপ-২ থেকে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে শিরোপার রেসে নিউজিল্যান্ড ও ভারত। বুধবার দিল্লীর প্রথম সেমিফাইনালে গ্রুপ-২ সেরা নিউজিল্যান্ডের প্রতিপক্ষ গ্রুপ-১ রানার্সআপ ইংল্যান্ড। বৃহস্পতিবার মুম্বাইয়ে গ্রুপ-১ সেরা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মোকাবেলা করবে গ্রুপ-২ রানার্সআপ ভারত। নিউজিল্যান্ড ॥ সবার আগে সেমির টিকেট নিশ্চিত করে চমক দেখায় নিউজিল্যান্ড। উপমহাদেশের মাটিতে বাইরের দলগুলোর রেকর্ড ভাল নয়। ভারতে অনেক অনেক খাবি খাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা কিউইদের। সেই তারাই কি না এবার দুর্দান্ত। নাগপুরে উদ্বোধনী ম্যাচেই হট-ফেবারিট স্বাগতিক ভারতকে কুপোকাত করে ব্ল্যাক-ক্যাপস শিবির পুরো ক্রিকেট বিশ্বকেই যেন তাক লাগিয়ে দেয়। ১২৬ রানের পুঁজি নিয়েও জয় ৪৭ রানে! ভারতকে ৭৯ রানে অলআউট করার দিনে ১০ উইকেটের ৯টিই নেন তিন কিউই স্পিনার মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোধি ও নাথান ম্যাককুলাম! মাত্র ৪ ম্যাচে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ উইকেট তরুণ বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার স্যান্টনারের। সরসারি সুপার টেনে খেলা দলগুলোর মধ্যে যা সর্বোচ্চ। সমান ম্যাচে সোধির শিকার সংখ্যা ৮। এরপর একে একে ওয়ানডের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান ও বিচ্ছু বাংলাদেশকে যথাক্রমে ৮, ২২ ও ৭৫ রানে হারিয়ে টানা চার জয় তুলে নেয় কিউইরা। একমাত্র দল হিসেবে অপরাজিত থেকে উঠে আসে সেমিতে। দারুণ নেতৃত্বে ব্রেন্ডন ম্যাককুলামের অভাব ভুলিয়ে দিচ্ছেন কেন উইলিয়ামসন। ভারত ॥ ভারতের পথটা মসৃণ ছিল না। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। কলকাতায় উন্মাদনার সেই ম্যাচে ১৮ ওভারে ৫ উইকেটে মাত্র ১১৮ রান করে পাকিরা। জবাবে ম্যাচের ‘নায়ক’ বিরাট কোহলির ৩৭ বলে অপরাজিত ৫৫ রানে ভর করে ৬ উইকেটের বিশাল জয় তুলে নেয় স্বাগতিকরা। তবে বাংলাদেশের কাছে হারতে হারতে বেঁচে যায় ক্রিকেটের মোড়লরা। ব্যাঙ্গালুরুতে আল আমিন-মুস্তাফিজুর রহমানের দুরন্ত বোলিংয়ের মুখে ৭ উইকেটে ১৪৬ রানের বেশি সংগ্রহ করতে পারেনি ধোনির দল। জবাবে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের সেরা ম্যাচ উপহার দিয়ে ১৪৫-এ থামে বাংলাদেশ! শেষ ওভারে মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদুল্লহ রিয়াদের ঐতিহাসিক ভুলে ১ রানের জয় পায় ভারত! সেমিতে যেতে হলে নিজেদের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারাতেই হবেÑ এমন সমীকরণে জ্বলে ওঠেন বিরাট কোহলি। সুপার হিরোর সুপার ব্যাটে ভর করে ৬ উইকেটের দুর্দান্ত এক জয় পায় স্বাগতিকরা। ৫১ বলে ৮২ রানের অনবদ্য ইনিংস উপহার দেন ভারতীয়দের ‘আগামীর শচীন’। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ॥ সুপার টেনে গ্রুপ-১এর লড়াইগুলোও ছিল আকর্ষণীয়। যে উইন্ডিজকে অনেকে গোনায় ধরেননি সেই তারাই ছুটে চলে দুর্বার গতিতে। ক্যারিবীয়দের শুরুটা ইংল্যান্ডকে হারিয়ে। মুম্বাইয়ে ১৮২ রানের বড় স্কোর গড়েও এক ক্রিস গেইলের কাছে হেরে যায় ইংলিশরা। ৪৮ বলে ৫ চার ও ১১ ছক্কায় সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে (১০০) অপরাজিত থাকেন জ্যামাইকান উইলোবাজ। প্রায় ২ ওভার আগে ৬ উইকেটের বড় জয় পায় উইন্ডিজ। ব্যাঙ্গালুরুতে পরের ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন লঙ্কানদেরও উড়িয়ে দেয় তারা। প্রতিপক্ষকে ১২২ রানে থামিয়ে গেইলকে ছাড়াই ৭ উইকেটের জয়। ৬৪ বলে ৮৪* রান করে ‘হিরো’ আন্দ্রে ফ্লেচার। দুর্বার ক্যারিবীয়দের কাছে পাত্তা পায়নি শক্তিধর দক্ষিণ আফ্রিকাও। ২ উইকেট নিয়ে এদিন বল হাতে চমক দেখান গেইল। ১২২-এ থামে আগের ম্যাচেই ২৩০ রানের রেকর্ড গড়ে ইংল্যান্ডকে হারানো প্রোটিয়ারা! জবাবে মারলন স্যামুয়েলস (৪৩) ও জনসন চার্লসের (৩২) ব্যাটে ভর করে ৩ উইকেটের জয় পায় উইন্ডিজ। তিন জয়ে সবার আগে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ড্যারেন সামির দল। তবে আফগানদের কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরেও গ্রুপসেরা ক্যারিবীয়রা! ইংল্যান্ড ॥ ইংলিশদের গল্পটা আবার উল্টো। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারের পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আসরের অন্যতম সেরা ম্যাচের জন্ম দেয় ইয়ন মরগানের দল। মুম্বাইয়ে ২২৯ রান টপকে তুলে নেয় ২ উইকেটের অবিশ্বাস্য জয়। ৪৪ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৩ রানে দুরন্ত ইনিংস উপহার দেন বড় তারকা জো রুট। অথচ সেই তাদেরই আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় পেতে ঘাম ঝরে যায়। দিল্লীতে ১৪২ রানে থামে মরগানদের সংগ্রহ। এরপর প্রতিপক্ষকে ১২৭ রানে থামিয়ে আসে ১৫ রানের হাসফাস ওঠা এক জয়। ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৩৩ বলে অপরাজিত ৪১ রানের মান বাঁচানো ইনিংস খেলার পর বল হাতে ১ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন অলরাউন্ডার মঈন আলি। ‘ইংল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা’ ম্যাচটা শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকা দুদলের জন্য ছিল টিকে থাকার লড়াই। চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে সেদিন প্রোটিয়াদেরও বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে দেয় মরগান-বাহিনী। দিল্লীতে জয়ের নায়ক জস বাটলার (৩৭ বলে ৬৬*), সৌজন্যে ১৭১ রান করার পর প্রতিপক্ষকে ১৬১তে থামিয়ে দেয় ইংলিশরা।
×