ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সীতাকুণ্ডে লরির ধাক্কায় শ্রমিক নিহত, ব্যাপক সংঘর্ষ, গুলিতে আহত ৭

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৯ মার্চ ২০১৬

সীতাকুণ্ডে লরির ধাক্কায় শ্রমিক নিহত, ব্যাপক সংঘর্ষ, গুলিতে আহত ৭

চট্টগ্রাম অফিস/নিজস্ব সংবাদদাতা, সীতাকুণ্ড ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড উপজেলার বার আউলিয়া এলাকায় সোমবার সকালে পণ্যবাহী লরির ধাক্কায় এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার জের ধরে নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে এলাকাবাসী ও শ্রমিকদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় নিরাপত্তা কর্মী আনসার সদস্যদের ছোড়া গুলিতে আহত হন ৭ জন। সকালে সংঘটিত দুর্ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতির রেশ থেকে যায় দুপুর পর্যন্ত। শত শত যানবাহন আটকা পড়ে সড়কে। আনসার সদস্যদের গুলিতে একজনের মৃত্যু হয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বার আউলিয়ার সংলগ্ন দক্ষিণ সোনাইছড়ি কবির শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড এলাকায় ওই প্রতিষ্ঠানেরই এক লরি নিয়ন্ত্রণ হারালে এর চাপায় নিহত হন এক শ্রমিক। ঘটনাটি ঘটে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসী ও শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়। উদ্ভূত অবস্থায় নিরাপত্তা কর্মীরা গুলি চালায়। এতে আহত হন নুরুন নবী (২০), দেলোয়ার (২৪), ওসমান (২৫), মুন্না (২০), শাহানাজ (২৫), শাহাবউদ্দিন (১৮) ও সামির আহাদ (১৬)। তাদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ছররা গুলি ও ইট-পাথরের আঘাতে তারা আহত হয়েছেন বলে জানা যায় হাসপাতাল সূত্রে। লরির চাপায় সকালে নিহত শ্রমিকের নাম মোঃ সুমন (২৮)। তিনি সেখানে গেটম্যান হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। কবির স্টিলের গাড়ির চাপায় এই মৃত্যুর খবর জানাজানি হওয়ার পর প্রতিবাদ জানাতে ছুটে আসে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। তারা সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ব্যস্ততম এ মহাসড়কের উভয় লেনে আটকা পড়ে শত শত যানবাহন। শ্রমিক ও এলাকার লোকজন সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে শুরু করে। এ সময় তাদের হামলায় সাইফুল্লাহ নামের পুলিশের এক এসআই আহত হন। কবির স্টিলের নিরাপত্তা কর্মীর গুলিতে একজন নিহত হয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকাবাসীর ক্ষোভ ঝরে পড়ে ওই প্রতিষ্ঠানটির ওপর। ফলে তারা চড়াও হয়। সীতাকু- থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রিয়াদ মাহমুদ জানান, পরে তারা খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হন যে, গুলিতে কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ততক্ষণে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি চালায় কবির স্টিলে নিরাপত্তার দায়িত্বরত আনসার বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ এ ঘটনায় কবির স্টিল ইয়ার্ডের সিকিউরিটি ইনচার্জসহ ৭ জনকে আটক করে। আটকদের মধ্যে যাদের নাম জানা যায় তারা হলেন- সিকিউরিটি ইনচার্জ গিয়াস উদ্দিন, পুনিল বাবু, কাউসার ও হক সাহেব। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা য়ায়, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলাধীন সোনাইছড়ি ইউনিয়নের গামারিতল এলাকায় কবির স্টিল গ্রুপের খাজা স্টিল শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে প্রবেশ করছিলেন শ্রমিক মোঃ সুমন ও তার ভাই দেলোয়ার। পেছন থেকে ২টি লরি প্রবেশ করার সময় একটি লরি আরেকটি লরির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। এতে চাপা পড়েন সুমন ও তার ভাই মোঃ দেলোয়ার। এর মধ্যে সুমনের মৃত্যু হয়। প্রায় এক ঘণ্টা পর প্রতিবাদে ফেটে পড়ে গ্রামবাসী। তখনই তাদের ওপর চলে গুলি। ইয়ার্ডের সিকিউরিটি ইনচার্জের নির্দেশে সেলিম বাবুর্চি এ গুলি চালান বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। আহতাবস্থায় তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ওসমান হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনার জের ধরে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর অবরোধে প্রায় ৩ ঘণ্টার জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এতে দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার সড়কে জানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাসে এলাকাবাসী মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নিলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়। চট্টগ্রাম উত্তর অতিরিক্ত পুলিশ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সকালে সামান্য দুর্ঘটনা থেকে ইয়ার্ডের গাফিলতির কারণে এত বড় ঘটনা। আমরা মহাসড়ক সচল রেখেছি এবং সুনির্দিষ্টভাবে আসামি ও অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করছি।
×