ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সি-হীলের মধ্যে মেরিন ড্রাইভ নির্মাণে বৃদ্ধি পেয়েছে সৈকত রানীর সৌন্দর্য

প্রকাশিত: ০১:৩৭, ২৮ মার্চ ২০১৬

সি-হীলের মধ্যে মেরিন ড্রাইভ নির্মাণে বৃদ্ধি পেয়েছে সৈকত রানীর সৌন্দর্য

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ দেশ-বিদেশে পরিচিত বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত সি-হীল কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর তত্ত্ববধানে নির্মিত মেরিন ড্রাইভ সড়কের কারণে সৈকত রানীর সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। একদিকে সাগর সাগর অপরদিকে উচু উচু পাহাড়ের মধ্যখানে এ মেরিন ড্রাইভ পর্যটকদের সেতুবন্ধন তৈরী করেছে। গত বছরের ২৩ অক্টোবর মেরিন ড্রাইভ সড়কের ইনানীতে বড় খাল ও ছোট খাল সেতু উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কক্সবাজার থেকে টেকনাফে পৌছানোর দীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার এ সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিচ্ছে সেনা সদস্যরা। দ্বিতীয় পর্যায়ে ইনানী থেকে টেকনাফের শীলখালী পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার কাজ শেষ করা হয়। শীলখালী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার সড়কের তৃতীয় দফায় মাটি ভরাটের কাজও প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী বছরে জুন মাসের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করছেন ১৬ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের (ইসিবি) মেরিন ড্রাইভ সড়ক তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর মোঃ নাহিদুল ইসলাম। মেজর নাহিদ জানান, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ১৯৯৩-১৯৯৪ অর্থ বছরে ফিডার রোড টাইপ-এ হিসাবে শুরু হয়। ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৬ ইসিবি নির্মাণ কাজ আরম্ভ করে। কাজের সুবিধার্থে প্রকল্পটি ৩ পর্যায়ে ভাগ করা হয়। ২০০৮ সালে ১ম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়। এরপর অর্থছাড়ে বিলম্ব হওয়ায় দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ ধীরগতিতে চললেও বর্তমান সরকারের আন্তরিকতায় প্রকল্প মেয়াদের ৬ মাস আগেই কাজ শেষ হয়। মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান সরকারের (এ্ইচডিএমসি, পিএসসি) নির্দেশে এবং সদর দপ্তরের এসডবি¬ও (চট্টগ্রাম) এর তত্ত্বাবধানে ১৬ ইসিবি মেরিন ড্রাইভ সড়কের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত হচ্ছে কক্সবাজার। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বৈশিষ্ট্য গর্ব করার মতো হলেও পর্যটন সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে তা পর্যটকদের সেভাবে আকর্ষণ করতে পারেনি। বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, তার অন্যতম হলো সমুদ্র তীরবর্তী ৮০ কিলোমিটার জুড়ে মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ। জানা গেছে, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কক্সবাজার শহরের প্রবেশমুখ কলাতলি মোড় থেকে সমুদ্র্র সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। টেকনাফ থেকে কক্সবাজার হয়ে চট্টগ্রামের মিরসরাই পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ বা সমুদ্র সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে এটি পূর্ণতা পাবে। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এ সড়কটি হবে আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র। পর্যটকরা মেরিন ড্রাইভের মাধ্যমে একসঙ্গে সমুদ্র আর পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন অনায়াসে। কক্সবাজার থেকে ইনানী পাথুরে বিচ ভ্রমনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে এ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। সড়কের এক পাশে সমুদ্র সৈকত আর অন্যপাশে পাহাড় গা-ঘেঁষে ঝর্ণাধারা বইছে। বালুকাময় বিস্তৃত সৈকত, ইনানী পাথুরে বীচ ও জেলেদের সাগরে মাছ ধরা উপভোগ করা যায় মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময়। সড়ক দিয়ে যেতে যেতেই দেখা যাবে সুউচ্চ পাহাড়, সাগর আর ঝর্ণা দিয়ে প্রবাহিত অবিরাম সুপেয় পানি। যা পর্যটকদের চোখ জুড়ানো দৃশ্য। এসব দেখে মন ভুলিয়ে দেবে প্রকৃতির অপরূপ আলিঙ্গন। পথে পথে শুনা যায় সাগরের পানির গর্জন আর পাহাড়ের গর্তে উড়োউড়ি পাখির সুরেলা সুর। সব মিলিয়ে সৈকত রানীর প্রকৃতিটা দারুণ উপভোগ্য। চলার পথের পূর্বে পাহাড় আর পশ্চিমে সমুদ্র মধ্যখানে চিরহরিৎ বন। টেকনাফ গর্জন ফরেস্ট নামে খ্যাত চির সবুজ এই বন পর্যটকদের খুবই আকর্ষণ করে। কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে জাহাজপুরা নামক জায়গায় অবস্থিত এই বনে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে কক্সবাজার থেকে ইনানী ও মনখালি পার হতে খুবই মজা লাগে। যাবার পথে অনন্যসুন্দর নৈসর্গিক দৃশ্য মুছে দেয় নগর জীবনে চাপে থাকা সব দু:খ। রাস্তার শোভা বর্ধনের জন্য প্রায় আড়াই লাখ ঝাউ গাছ রোপন করা হয়েছে। এছাড়া কৃঞ্চচূড়াসহ প্রায় ৫০ হাজার ফুলের চারাও রোপনের কাজ চলছে। তৃতীয় পর্যায়ে উপকূলীয় এলাকার সৌন্দর্য ও পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখতে আরও প্রায় ৩ লাখ ঝাউগাছ এবং সোনালু, ফলানু, কৃঞ্চচূড়া, মিনঝিরি, বকুলসহ ৫০ হাজার ফুলের চারা লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণে ও এর সৌন্দর্য ধরে রাখতে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে সেনাবাহিনী।
×