ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিদ্যুতে দক্ষতা বাড়াতে এডিবির সহায়তায় স্কাডা সিস্টেম হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৮ মার্চ ২০১৬

বিদ্যুতে দক্ষতা বাড়াতে এডিবির সহায়তায় স্কাডা সিস্টেম হচ্ছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বিদ্যুত ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়াতে স্থাপন করা হচ্ছে ডাটা এ্যাকুইজিশন সিস্টেম (স্কাডা)। এতে সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ঢাকা মেট্রোপলিটন সিটি (উত্তর), টঙ্গী ও পূর্বাচল মডেল টাউন এলাকা এ সিস্টেমের আওতায় আসবে। ফলে প্রতিটি উপকেন্দ্র ও সুইচিং স্টেশনসমূহের মোট চাহিদার প্রেক্ষিতে সুষম লোড বণ্ঠনে কার্যকরী ও দক্ষ লোড ব্যবস্থাপনা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে মঙ্গলবার। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য আহমদ হোসেন খান কমিশনের মতামত ও সুপারিশ দিতে গিয়ে বলেন, বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রকল্পটির ওপর ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে বিদ্যুত বিভাগ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুর্নগঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করেছে। ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে একনেকের সদয় বিবেচনা ও অনুমোদনের উপস্থাপন করার সুপারিশ করা হয়েছে। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর হতে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) রাজধানীর মিরপুর এলাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। প্রথম পর্যায়ে লোড চাহিদা ছিল মাত্র ৯০ মেগাওয়াট এবং গ্রাহকসংখ্যা ছিল ৭১ হাজার ১৬১ জন। কালক্রমে এখন ডেসকোর আওতা বৃদ্ধি পেয়ে গুলশান, টঙ্গী ও পূর্বাচল মডেল টাউন পর্যন্ত ২৫০ বর্গমিটার এলাকায় বিস্তার লাভ করেছে। বর্তমানে ডেসকোর লোড চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭২৬ মেগাওয়াট এবং গ্রহাকসংখ্যা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ। এ পরিপ্রেক্ষিতে স্কাডা সিস্টেম স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বলা হয়েছে, স্কাডা একটি অত্যাধুনিক সিস্টেম, যার মাধ্যমে দূরনিয়ন্ত্রণ কক্ষ হতে বিদ্যুত সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করাসহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যুতের সকল প্যারামিটার যেমন- ভোল্টেজ, কারেন্ট, ফ্রিকুয়েন্সি, পাওয়ার ফ্যাক্টরসহ কিলোওয়াট ও কিলোভার পর্যবেক্ষণ করা যায়। উপকেন্দ্র হতে রিমোর্ট টার্মিনাল ইউনিট বা গেটওয়ের মাধ্যমে তথ্যাদি সংগ্রহ করে স্কাডা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সার্ভারে সংরক্ষিত হয়। এসব তথ্যের পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও মানসম্মত বিদ্যুত গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো যায়। এছাড়া যে কোন সময়ে উপকেন্দ্রভিত্তিক বা সামগ্রিক মোট লোডের তথ্য তুলনা করে নেটওয়ার্কয়ের মধ্যে সর্বোত্তম লোড প্রবাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। প্রতিটি উপকেন্দ্র ও সুইচিং স্টেশনসমূহের মধ্যে মোট চাহিদার প্রেক্ষিতে সুষম লোড বণ্টনের মাধ্যমে কার্যকরী ও দক্ষ লোড ব্যবস্থাপনা অর্জন সম্ভব হবে। ইতোমধ্যেই চট্টগ্রামে পাইলট ভিত্তিতে সুপারভাইজরি কন্ট্রোল ও ডাটা এ্যাকুইজিশন (স্কাডা) সিস্টেম প্রবর্তনের জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিদ্যুত ব্যবস্থাপনার দক্ষতা উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ডেসকোর আওতাধীন জোনে স্কাডা সিস্টেম প্রবর্তনের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণ সহায়তা মোট ১৫২ কোটি ২৬ লাখ ৫২ হাজার টাকা ব্যয়ে (এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২৭ কোটি ৯৮ লাখ ৯৫ হাজার, এডিবির ঋণ ৯৯ কোটি ১৬ লাখ ৮৮ হাজার এবং ডেসকোর নিজস্ব তহবিল থেকে ২৬ কোটি ১০ লাখ ৬৯ হাজার টাকা) প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়। পরবর্তীতে পিইসি সভায় ১৫২ কোটি ১৯ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ব্যয় ধরে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করে আবারও পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সূত্র জানায়, চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২০ সালের মধ্যে ২৩ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে ডেসকো এক হাজার ৭৫০ কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ, ৬০টি সাবস্টেশন নির্মাণ ও আধুনিকায়ন, চার লাখ ২৬ হাজার গ্রাহককে নতুন সংযোগ, ১২ লাখ প্রি-পেইড মিটার স্থাপন, সিস্টেম লস ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা ও একটি কাস্টমার সার্ভিস সেন্টার স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিদ্যুত ব্যবস্থাপনায় সুপারভাইজরি কন্ট্রোল ও ডাটা এ্যাকুইজিশন (স্কাডা) সিস্টেম স্থাপন ও প্রয়োগের মাধ্যমে কার্যকর বিতরণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। তাই এ প্রকল্পটি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। প্রকল্পের আওতায় প্রধান যেসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে সেগুলো হচ্ছেÑ স্কাডা প্রবর্তনের মাস্টার স্টেশন স্থাপন করা, রিমোট টার্মিনাল ইউনিট স্থাপন, স্কাডা সিস্টেম মিটারিং প্রোগ্রাম প্রবর্তন, কমিউনিকেশন সিস্টেম স্থাপন এবং মাস্টার স্টেশন বিল্ডিং এ্যান্ড সাপ্লাই এ্যান্ড ইন্সটেলেশন অব সেল্ফ সাপোর্টেড টাওয়ার স্থাপন করা হবে।
×