ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সবার বুকে কষ্ট শুধুই কষ্ট! দুঃস্বপ্ন ভুলতে চায় দল, সমর্থকরাও

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৮ মার্চ ২০১৬

সবার বুকে কষ্ট শুধুই কষ্ট! দুঃস্বপ্ন ভুলতে চায় দল, সমর্থকরাও

মিথুন আশরাফ, কলকাতা থেকে ॥ ‘কষ্ট নেবে কষ্ট/ হরেক রকম কষ্ট আছে/কষ্ট নেবে কষ্ট! লাল কষ্ট/ নীল কষ্ট....।’ টি২০ বিশ্বকাপ শেষে কষ্ট নিয়েই দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। কষ্টে ভাসিয়েছেন সমর্থকদেরও! যে সমর্থকরা একের পর এক ম্যাচে হারের পরও দলকে সমর্থন দিয়েছেন। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ১ রানে হারের পরও ভাল খেলার গুণগান গেয়েছেন। সেই সমর্থকরাও কষ্ট পেয়েছেন। হতাশায় ডুবেছেন। নিউ-জিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিই যে সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। কষ্টে পুড়িয়েছে সবাইকে। সেই কষ্ট এখনও বুকের ভেতর গেঁথে আছে। হয়তো সময় হলে সব মিশে যাবে। বাংলাদেশ দল আবার জিততে শুরু করবে। কিন্তু টি২০ বিশ্বকাপে টানা চার ম্যাচ হারের সঙ্গে যে শেষ ম্যাচে এসে ৭০ রানে অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ, নিজেদের টি২০ ইতিহাসে সর্বনি¤œ রানে অলআউট হয়ে গেছে, সেই কষ্ট থেকেই যাবে। সেই সঙ্গে ভারতের বিপক্ষে ১ রানে হারের ক্ষতও দীর্ঘদিন থাকবে। ভারতের বিপক্ষে হয়তো বাংলাদেশ আবারও জিতবে। কিন্তু জয়ের এত কাছে গিয়েও হারের কষ্ট দূর হবে না। বিশ্বকাপে যে ভারতকে ভারতের মাটিতে হারানোর সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। শুধু যে ক্রিকেটার ও সমর্থকদের মধ্যেই কষ্ট এমন নয়। বিসিবির কর্মকর্তাদের মধ্যেও আছে কষ্ট। বিসিবির উর্ধতন ক্ষমতাবান এক পরিচালকতো দলের কথা তুলতেই রেগে গেলেন। কলকাতার ইডেন গার্ডেনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা শেষে রাতে মির্জা গালিব স্ট্রিটে দেখা সেই কর্মকর্তার সঙ্গে। এ স্থানটিতেই বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষের ঢল নামে। এখানে সব বাঙ্গালী খাবার দাবারও পাওয়া যায়। এ স্থানে রাতে পরিচালক বলে দিলেন, ‘এভাবে কেউ হারে!’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘আসলে কি যে হয়েছে ক্রিকেটারদের। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটির কথাই ধরুন। দুজন দলের সিনিয়র ক্রিকেটার। দলের সেরা ব্যাটসম্যান বলা হয় মুশফিকুর রহীমকে। আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদতো এখন সেরা ফর্মে। মুশফিক এত ভাল খেলার পর এমনভাবে আউট হয়ে গেলেন। এরপর মাহমুদুল্লাহই কি করলেন। তিনিও একইভাবে আউট হলেন। অথচ কোনভাবে ১টি রান নিলেই ম্যাচটি আমাদের হাতে চলে আসত। শেষ বলে ১ রান লাগলেও আমরাতো আর হারতাম না। তাদের সিনিয়র বলা হয়। অভিজ্ঞ ক্রিকেটার বলা হয়। এতদিন ধরে খেলে যদি ১টি রান বের করতে না পারেন, তাহলে কিসের সিনিয়র। কিসের অভিজ্ঞতা। কোনভাবেই এটি মানা যায় না।’ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি নিয়ে বলেন, ‘দল বিধ্বস্ত ছিল। ঠিক আছে। তাসকিন ও সানিকে হারিয়ে আগেইতো বিধ্বস্ত। এরপরওতো দল ভাল খেলেছে। শেষ ম্যাচে এসে তাহলে এমন হলো কেন? মুস্তাফিজ এত সুন্দর বোলিং করল। ৫ উইকেট নিল। নিউজিল্যান্ডকেও কম রানে আটকানো গেল। অথচ ব্যাটসম্যানরা কি করলেন! মনে হলো কিসের যেন তাড়া আছে। এতসব নামি-দামি ক্রিকেটাররা কি করলেন! লজ্জা দিলেন সবাইকে। একটি দল এত ভাল খেলছে। টানা তিন হারের পরও সবাই দলকে সমর্থন করছে। সেই ভাল খেলা এক ম্যাচেই উধাও হয়ে গেল। ৭০ রানে অলআউট হয়ে গেল দল। কল্পনা করা যায়! এতদিন পর্যন্ত বিশ্বকাপে যা অর্জন ছিল দলের, সব যেন মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেল। সমর্থকরা টানা হারের পরও দলের পাশে ছিলেন। কারণ দল ভাল খেলছিল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর কি সেই সমর্থন থাকে! ব্যাটসম্যানরা করলটা কি?’ বাংলাদেশ দল রবিবার দেশে ফিরে গেছে। বিমানবন্দরেই বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা কথা বলেছেন। জানিয়েছেন, ‘ভারতের বিপক্ষে দল যেভাবে হেরেছে তাতে সত্যিই হতাশ। তবে এবারের টি২০ বিশ্বকাপ থেকে ইতিবাচক অনেক কিছুই পেয়েছি, যেটা ভবিষ্যতে টি২০তে আমাদের যথেষ্ট কাজে দেবে।’ মাশরাফি ইতিবাচক খুঁজছেন। কিন্তু নেতিবাচক বিষয়ওতো আছে। দলের প্রতি সমর্থকদের সমর্থন হারের পরও ছিল। কিন্তু শেষ ম্যাচে যে সমর্থকদের কষ্ট দেয়া হয়েছে, সবাইকে হতাশায় ডুবিয়েছেন দলের ব্যাটসম্যানরা; সেই নেতিবাচক দিকগুলোওতো আছে। বাংলাদেশ থেকে এবার ভারতে টি২০ বিশ্বকাপে দলকে সমর্থন দিতে প্রচুর সমর্থক হাজির হয়। সবাই এখন বাংলাদেশমুখী হচ্ছেন। বাংলাদেশ দল নেই। সেখানে তারা আর থাকবেনই বা কেন? যেতে যেতে হতাশাই সঙ্গী করে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে এও বলেছেন, ‘বাংলাদেশ দল যতই কষ্ট দিক, যতই হতাশায় ডোবাক; আমরা আগেও দলের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকব। তবে ভারতের বিপক্ষে ১ রানে হারের দুঃখস্মৃতি কোনভাবে ভুলব না। আর শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এ কি করল বাংলাদেশ! সেই কষ্টও থাকবে। আশাকরি আবার দল জয়ের ধারায় ফিরুক। এসব কষ্ট ভুলিয়ে দিক।’
×