ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের ছুটি শেষে স্কুলে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার ঘোষণায় অসন্তোষ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৮ মার্চ ২০১৬

ঈদের ছুটি শেষে স্কুলে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার ঘোষণায় অসন্তোষ

বিভাষ বাড়ৈ ॥ আসন্ন ঈদের ছুটির দু’দিনের মাথায় সারাদেশের স্কুলগুলোতে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করায় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে। ঈদের ছুটিতে রাজধানীসহ দেশের প্রধান প্রধান শহরের লাখ লাখ মানুষ গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যান। ছুটি শেষে যেখানে প্রতিবছরই অভিভাবকদের রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরে কর্মস্থলে ফিরে আসার পথে ভয়াবহ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সেখানে ৭ বা ৮ জুলাই ঈদের পরপরই পরীক্ষা শুরুর ঘোষণায় অভিভাবকদের মাঝে নতুন সমস্যা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজধানীর প্রধান প্রধান স্কুলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে অসন্তোষ। এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে ঈদের পর কিছুদিন সময় দিয়ে নতুন তারিখ নির্ধারণের দাবি উঠেছে। অভিভাবকরা বলছেন, ঈদের ছুটি শেষ হতে না হতেই ১১ জুলাই থেকে সারাদেশের স্কুলগুলোতে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। কিন্তু এটা করা হলে সন্তানদের নিয়ে কোন অভিভাবক ছুটি কাটাতে বাড়ি যেতে পারবেন না। আবার বাড়ি গেলে সন্তানদের নিয়ে পরীক্ষার আগে রাজধানীতে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। আরও কিছুদিন সময় না দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হলে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হবে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকরাও। তারাও বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ করেছেন। দেশের অন্যতম স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহার আরা বলছিলেন, আমার মতে পরীক্ষাটা ১১ জুলাই পর্যন্ত নেয়ারই কোন প্রয়োজন ছিল না। আরও আগে পরীক্ষা শুরু করা যেত। আগে তো রমজানে ক্লাস হয়েছে। রমজানে পরীক্ষা হলে তো কোন ক্ষতি ছিল না। আগে শুরু হলে ঈদের পর দু’তিনটা পরীক্ষা নিলেই হতো। আগে শুরু করার পক্ষে মত দিয়ে তিনি আরও বলেন, এখন এমন হয়েছে যে পরীক্ষা ১১ জুলাইয়ের পর বেশিদিন পেছানো যাবেও না। কারণ পরে আবার জেএসসি পরীক্ষা সমস্যার মুখে পড়বে তবে এখন যেটা হয়েছে তাতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেক প্রবলেম হবে। অভিভাবকরা ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেলে সন্তানদের নিয়ে আসা কঠিন হবে। কষ্ট করে এলেও দেখা যাবে বাচ্চারা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারবে না। সব দিক বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ হয়ত বিবেচনা করতে পারে। তবে বেশিদিন পেছানোর উপায়ও নেই আসলে। একই প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মামুন অর রশিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছিলেন, এটা কোন কথা হলো। পরীক্ষা অন্তত ২০ জুলাই পর্যন্ত পেছাতে হবে। বাচ্চাদের নিয়ে ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেলে তো পরীক্ষার আগে রাজধানীতেই ফিরতে পারব না, পরীক্ষা তো পরে। কারা এসব যে করেন। সময়সূচী ঠিক করার আগে কর্তৃপক্ষ এগুলো বিবেচনা কেন করেনি। এখন অভিভাবকদের দাবি জানাতে হচ্ছে। ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষক বলছিলেন, আমাদের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা ইতোমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তবে তাদের আমরা বলেছি এটার সমাধান আমরা করতে পারছি না। এ ক্ষমতা আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের। তারা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রাহাত নামে এক অভিভাবক বলছিলেন, এই সময়সূচী অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। আমরা এটা মানব না। শীঘ্রই দাবি জানাতে আমরা মহাপরিচালকের কাছে যাব। ঈদের অন্তত ১০ দিন পর পরীক্ষা শুরু করতে হবে। কারণ ওই সময়ে রাজধানীতে ফেরা সহজ নয়। এভাবে পরীক্ষার জন্য চাপ দেয়ার কোন মানে হয় না। এটা আমরা মানি না। মিরপুরের সিদ্ধান্ত হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি পরীক্ষার তারিখ পেছানোর পক্ষে মত দিয়ে বলেন, ১১ জুলাই পরীক্ষা হলে সমস্যা তো হবেই। বিষয়টি বিবেচনা করা অবশ্যই প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের আরও কিছু সময় দিয়ে পরীক্ষা শুরু করতে হবে। আমরা সমিতির পক্ষ থেকেও দাবি জানাচ্ছি। কারণ ঈদের সময় বাড়ি গেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকায় ফেরা অনেক সমস্যা হয়ে যায়। মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর মা নাজনীন আখতার বলছিলেন, ঈদের পর অন্তত এক সপ্তাহ সময় দিতে হবে। অন্যথায় আমরা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামব। এটা কোন কথা হলো না। কোন্ কর্মকর্তারা এ কাজ করেছে। তারা কি জানে না এই সময় ঈদের ছুটি। ওই সময় কী সমস্যা হয় তারা জানে না। তারা কি এই দেশের লোক না? বিষয়টি নিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত বোর্ডের নয়। শিক্ষা অধিদফতর বিষয়টি ভাল বলতে পারবে। এরপর অধিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেল, বিষয়টি নিয়ে তারা অনেকটা ইতিবাচক মনোভাবই পোষণ করছে। অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনের কাছে শিক্ষার্থী অভিভাবকদের আপত্তির বিষয়টি জানানো হলে তিনি বলেন, ঈদের পর তো কিছুটা সময় পাচ্ছেই শিক্ষার্থীরা। তার পরেও অবশ্যই আমরা বিষয়টি দেখব। সমস্যা হলে বিবেচনা করা হবে। তবে তিনি বলেন, দু’তিন দিনের বেশি পেছানো যাবে না কোনভাবেই।
×