অনলাইন ডেস্ক ॥ রবিবার মোহালিতে কার্যত কোয়ার্টার ফাইনাল। সে তো ক্রিকেটপ্রেমীরা বলছেন, মিডিয়া বলছে। অস্ট্রেলিয়া শিবির কিন্তু বলছে, এটাই ফাইনাল। বিশ্বকাপের সেরা দলটার মুখোমুখি হতে হচ্ছে যে।
স্টিভ স্মিথ থেকে শেন ওয়াটসন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল থেকে জেমস ফকনার— সবারই মুখে এক কথা, ভারতই সবচেয়ে বড় হার্ডল। এই হার্ডলটা পেরিয়ে যাওয়া মানে দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে যাওয়া।
তাই বিশ্বকাপ সেমফাইনাল, ফাইনাল ও সব প্রায় ভুলে গিয়েই শনিবার সারাটা দিন শুধু ভারতকে নিয়েই পড়ে থাকল হোটেলবন্দি অজি শিবির।
শুক্রবার পাকিস্তানকে হারানোর পরই জেমস ফকনার বলেন, ‘‘পাকিস্তান ম্যাচ থেকে সুইচ অফ করে এই মুহূর্ত থেকে পরের ম্যাচের জন্য সুইচ অন করছি আমরা।’’ অজিদের শিবির থেকে জানা গেল শনিবার মাঠে বা নেটে প্র্যাকটিস না করলেও হোটেলে ভারতকে নিয়ে তাঁদের হোমওয়ার্ক চলল জোর কদমে। যার বেশিরভাগটাই নাকি জুড়ে ছিলেন বিরাট কোহালি।
শুধু মাঠে কেন? মাঠের বাইরের প্রস্তুতিও আধুনিক ক্রিকেটে একটা বড় অঙ্গ। শনিবার সারা দিন নাকি সেই প্রস্তুতিতেই মজে রইলেন ড্যারেন লেম্যান ও তাঁর দল।
বিদায়ী অজি অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসনের খোলামেলা মন্তব্য, ‘‘ভারতকে হারাতে গেলে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিতে হবে, ফাইনালের জন্য কিছু তুলে রাখা চলবে না।’’ ক্যাপ্টেন স্টিভ স্মিথও দু’দিন আগেই বলেছেন, ‘‘সে দিন শেষ ওভারে বাংলাদেশকে যে ভাবে হারাল ওরা, তার পর ভারতের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কোনও প্রশ্নই নেই।’’
চাপের মুখে অজিদের স্নায়ুর লড়াইয়ে ভেঙে পড়তে দেখার দৃষ্টান্ত খুব একটা পাওয়া যায় না। রবিবারও এই স্নায়ুযুদ্ধে ‘কুল অ্যান্ড কাম’ থাকতে চায় অস্ট্রেলিয়া। ওয়াটসন বলছেন, ‘‘লক্ষ্য করে দেখবেন, নক আউটে আমাদের সেরাটা বেরিয়ে আসে। এই ম্যাচটাও তো নক-আউটই। রবিবার আমাদের ভাল খেলতেই হবে। সে জন্য মাথা ঠান্ডা রাখাও খুব দরকার।’’
কিন্তু ভারতকে কাবু করতে গেলে তো তাদের প্রধান অস্ত্রটাকেও ভোঁতা করতে হবে। বিরাট কোহালি ছাড়া সে কে-ই বা হতে পারে? একসময় সচিন তেন্ডুলকর সম্পর্কে এই কথা শোনা যেত। সচিনকে যথাসম্ভব দ্রুত ফেরানোই ছিল বিপক্ষ বোলারদের আসল কাজ। এখন সেই জায়গা নিয়েছেন কোহালি।
কিন্তু ওয়াটসনের স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, কোহালিকে জব্দ করার ওষুধ এখনও তৈরি করে উঠতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। বলে দিলেন, ‘‘অনেক রকম ভাবে ওকে জব্দ করার চেষ্টা করেছি। কোনওটা কাজে দেয়নি। চুপচাপ ওকে চাপে রাখার চেষ্টা করেও কিছু হয়নি।’’ সচিনের পর এই প্রথম কোনও ক্রিকেটার সম্পর্কে এমন অসহায় স্বীকারোক্তি ভেসে এল অস্ট্রেলিয়া শিবির থেকে।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি রেকর্ডও তেমন। আটটা ম্যাচে ৩১৯ রান, ৫৩.১৬-এর গড়, ১৪১-এর উপর স্ট্রাইক রেট। এ বছর জানুয়ারিতেই তো পরপর তিনটি ম্যাচে ১৯৯ রান করেছিলেন।
ওয়াটসন বলেন, ‘‘কম অত্যাচার করিনি ওর উপর। কিন্তু ও নিজের খেলাটা এত ভাল বোঝে যে, ওকে আটকাতে গেলে পুরো দল মিলে সেরা পারফরম্যান্সটা দিতে হয়। কোহালি ব্যাট করতে নেমেই বোলারদের চাপে ফেলে দেয়।’’
জানুয়ারিতে মেলবোর্ন ওয়ান ডে-তে অজিদের স্লেজিং এতটাই অসহ্য হয়ে উঠেছিল কোহালির কাছে যে, জেমস ফকনারকে তিনি বলেই বসেন, ‘‘অনেক তো পিটিয়েছি তোমাকে, তার পরেও আর স্লেজিং করে লাভ কী?’’ তার পরও ১১৭ রানের ইনিংস খেলেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ছ’বলে চার উইকেট নেওয়ার পর সেই ফকনার বলেন, ‘‘বেঙ্গালুরুর হোটেলে তো ওর সঙ্গে দেখা হল। বলল, ভাল আছে। ওই ঘটনাটা অতীত। সবাই জানে কেমন ব্যাটসম্যান ও। কোহালিকে দ্রুত ফেরানোর চেষ্টা সবাই করে থাকে। আমাদেরও করতে হবে।’’
রবিবারের মহাযুদ্ধে ভারতের আগে বিরাট কোহালিকে হারানো স্মিথদের প্রথম কাজ। ভারতের বিরুদ্ধে শেন ওয়াটসনের শেষ ম্যাচ এ ছাড়া স্মরণীয় হয়ে ওঠার কোনও উপায়ই নেই।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা