ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বাধীনতা-বিরোধীদের প্রতি ছিল তীব্র ঘৃণার প্রকাশ;###;জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ করার দাবি;###;শরীরসহ সর্বত্রই ছিল জাতীয় পতাকা ও পতাকার রঙ

প্রজন্মের জাগরণ ॥ এবারের স্বাধীনতা দিবসে নতুন মাত্রা

প্রকাশিত: ০৮:৩৫, ২৭ মার্চ ২০১৬

প্রজন্মের জাগরণ ॥ এবারের স্বাধীনতা দিবসে নতুন মাত্রা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ “আহা, কী আনন্দ আকাশে বাতাসে...”। সত্যিই স্বাধীন বাংলাদেশের ৪৫ বছর পূর্তির দিন শনিবার এক অন্যরকম স্বস্তি, আনন্দ ও শপথে জেগে উঠেছিল বাঙালী। সারাদেশেই নতুন প্রজন্মের অভূতপূর্ব গণজাগরণ এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবারের স্বাধীনতা দিবসে। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তস্নাত লাল-সবুজের পতাকা হাতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের কণ্ঠেই ধ্বনিত হয়েছে সাম্প্রদায়িকতা-যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারমুক্ত স্বাধীনতার চেতনায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয়। কালরাতের আঁধার পেরিয়ে আত্মপরিচয় অর্জন ও পরাধীনতার শিকল ভাঙ্গার দিনটি বাঙালী জাতি হৃদয়ের গভীরতা থেকে শ্রদ্ধার সঙ্গেই পালন করেছে নানা অনুষ্ঠানমালায়। স্বাধীনতা দিবসে জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের। রাস্তায় বের হওয়া শিশু-কিশোর ও তরুণদের হাতে, কারও গালে কিংবা কপালে আঁকা ছিল রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা, প্রিয় মাতৃভূমির মানচিত্র। তরুণ প্রজন্মের ছেলেদের গায়ে জাতীয় পতাকাসদৃশ শর্ট পাঞ্জাবি বা গেঞ্জি এবং মেয়েদের পরনে লাল-সবুজের মিশ্রণে জাতীয় পতাকার মতো শাড়ি। সবাই অংশ নিয়েছিলেন এবারের স্বাধীনতার আনন্দ-উৎসবে। রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠে তরুণ প্রজন্মরা শুনেছে তাঁদের বীরত্বগাঁথা ইতিহাস, জেনেছে একাত্তরে রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের গণহত্যা, মা-বোনদের সম্ভ্রমহরণ ও বুদ্ধিবীজীদের হত্যার কালো ইতিহাস। তাই শুধু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাধারণ মানুষই নয়, তরুণ প্রজন্মের চোখে-মুখে স্বাধীনতাবিরোধীদের তীব্র ঘৃণা-ধিক্কারের বহির্প্রকাশ ঘটেছে সর্বত্র। তবে এবারের স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতাবিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে বেশ জোরেশোরেই। একই সঙ্গে নানা অনুষ্ঠানেই স্বাধীনতার সাড়ে চার দশকের মাথায় এসে একাত্তরের শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের সমালোচনাই মুখর ছিলেন সবাই। আর যাতে ভবিষ্যতে কোন অপশক্তি মহান মুক্তিযুদ্ধ, বীর শহীদ ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে কটাক্ষ করার দুঃসাহস দেখাতে না পারে সেজন্য দ্রুত গণহত্যার বিচার আইনের মতো কঠোর আইন প্রণয়নের সোচ্চার দাবি ছিল প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই। রাজধানী থেকে শুরু করে শহর-বন্দর-গ্রামে দেশের জন্মদিনের প্রতিটি অনুষ্ঠানে নতুন প্রজন্মের ঢল, তাদের চোখে-মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখার দৃপ্ত শপথ আর স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণার প্রচ-তা প্রত্যক্ষ করেছে দেশের মানুষ। নতুন প্রজন্মের এমন গণজাগরণ আশাবাদী ও সাহসী করে তুলেছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষকে। রাজনীতিক থেকে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সবাই দৃঢ় আশাবাদী- ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নতুন প্রজন্মের এমন বিস্ফোরণ জানান দিচ্ছে, জঙ্গীবাদ-সাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রবিরোধী অন্ধকারের শক্তির দিন শেষ। যুদ্ধাপরাধী রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের নির্মূল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন এক জন্মভূমির যাত্রা শুরু হবেই। আনন্দ, বেদনা ও বিনম্র শ্রদ্ধায় মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণ এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদমুক্ত অসাম্প্রদায়িক স্বনির্ভর সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে শনিবার বাঙালী জাতি অন্যরকম স্বস্তি ও উৎসবের আমেজে পালন করলো মহান স্বাধীনতার ৪৫ বছর পূর্তি ও জাতীয় দিবস। শ্রদ্ধাবনত জাতি ফুলে ফুলে ভরে দেয় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ, ধানম-ির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং টুঙ্গিপাড়ার বঙ্গবন্ধুর মাজারের বেদীমূল। লাল-সবুজ পতাকা হাতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের কণ্ঠেই ধ্বনিত হয়েছে একই সেøাগান- “সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চাই, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।” তবে স্বাধীনতা দিবসে আনন্দমুখর এ উৎসবে বরাবরের মতো এবারও অন্তঃস্রোতে বয়ে গেছে স্বজন হারানোর বেদনা। আর বাঙালীর জাতীয় জীবনে আনন্দ-বেদনার এমন দ্বৈরথের ঘটনা খুব বেশি নেই। বাঙালী জাতি আনন্দ আর বেদনার মহাকাব্য স্বাধীনতার সংগ্রামে একদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম সাহসিকতা আর হাজারো নারীর আত্মত্যাগের বীরত্বগাথা। অন্যদিকে বর্বর পাকসেনা আর রাজাকার-আলবদরদের নীচুতা, শঠতা ও হিংস্রতার কলঙ্কময় ইতিহাস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণায় ৪৫ বছর আগের এ দিনে পাকিস্তানী বাহিনীর দমন অভিযানের বিরুদ্ধে রূখে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ ভূ-খ-ের মানুষ। তার পরের ৯ মাস পাকিস্তানী বাহিনী আর তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর চক্র চালিয়েছে ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ। তাই স্বাধীনতা দিবসের এই দিনে দেশবাসী শ্রদ্ধা আর বেদনায় স্মরণ করে যুদ্ধে নিহত স্বজনদের আর অসম লড়াইয়ে বিজয়ী রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। শনিবার পুরো রাজধানী থেকে শুরু করে সাভার স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত পরিণত হয়েছিল উৎসবের সেøাগানে বজ্রভূমিতে। যেখানে আবালবৃদ্ধবনিতা লাল-সবুজে সজ্জিত হয়ে পথে নেমেছিলেন জাতির প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনের দাবিতে। পথে পথে ব্যান্ড বাজিয়ে, গলা ছেড়ে দেশের গান গেয়ে, সেøাগানে সেøাগানে আশপাশ সচকিত করে তরুণরা প্রাণস্পন্দিত করে রেখেছিল স্বাধীনতার এ দিনটিকে। শনিবার প্রত্যুষে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে সূচনা হয় স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানমালার। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সশস্ত্র বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল এ সময় গার্ড অব অনার প্রদান করে। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। পরে রাষ্ট্রপতি স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন। জাতীয় সংসদের স্পীকার, ডেপুটি স্পীকার, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধানসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। প্রায় ১৫ মিনিট সময় প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে অবস্থান করেন। রাষ্ট্রপতি স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করার পর উপস্থিত সকলের সঙ্গে করমর্দন করেন। সকাল ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানম-ি ৩২ নম্বর সড়কে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোরদের সমাবেশে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং বক্তব্য রাখেন। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শনিবার ছিল সরকারী ছুটি। স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বেতার, টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হয়। সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন ভবনে, বাড়িঘর, যানবাহন ও দোকানে উড়েছে জাতীয় পতাকা। সরকারী গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়। সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মসজিদে বিশেষ মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত, দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করা হয়। মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাতেও অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ প্রার্থনা সভা। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন-প্রতিষ্ঠান আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতা দিবস পালন করে। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন শেষে মোনাজাত করে। টুঙ্গিপাড়াতেও নেমেছিল স্বাধীনতার পক্ষের মানুষের ঢল। অজস্র মানুষের শ্রদ্ধাঞ্জলির ফুলে ফুলে ভরে উঠে স্বাধীনতার মহান স্থপতির মাজারের বেদীমূল। সশস্ত্র বাহিনীও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্র, হাসপাতাল, জেলাখানা, সরকারী শিশুসনদসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। প্রতিচ্ছবি ও প্রামাণ্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক থেকে আজকের বাংলাদেশের পথপরিক্রমা তুলে ধরতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় শুরু হয় দুই দিনের থ্রিডি ভিডিও ম্যাপিং ‘সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের।” শনিবারও এ অনুষ্ঠানে ছিল বিপুল মানুষের সমাগম। ইউডা’র উদ্যোগে মানিক মিয়া এ্যাভিনিউয়ের সুদীর্ঘ রাস্তায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলপনা আঁকা হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্মরণে স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজন করে ৩৬ মাইল পদযাত্রার। ভোরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হওয়া এই পদযাত্রা সন্ধ্যায় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে শেষ হয়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণ জনারণ্য ॥ দেশের জন্মদিনে ধানম-ির ৩২ নম্বর ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণ শনিবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিল জনারণ্য। অজস্র কৃতজ্ঞ বাঙালী বিনম্র শ্রদ্ধা জানান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগরণী দেশাত্মবোধক গান, সেøাগান আর মিছিলে মিছিলে বঙ্গবন্ধুর বাসভবন প্রাঙ্গণ দিনভর ছিল মুখরিত। হাজার হাজার মানুষ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ঘুরে ঘুরে দেখেন। জাতীয় স্মৃতিসৌধের কর্মসূচী শেষ করে সকাল ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানম-ির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল অভিবাদন জানায়। পরে প্রধানমন্ত্রী দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলীয় সভানেত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, সাহারা খাতুন, সতীশ চন্দ্র রায়, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, শাজাহান খান, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ড. আবদুর রাজ্জাক, ড. হাছান মাহমুদ, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ডাঃ বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু, আফজাল হোসেন, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু ভবন এলাকা ত্যাগ করার পর সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় ধানম-ির ৩২ নম্বর সড়ক। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মেয়র সাঈদ খোকনের নেতৃত্বে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মোল্লা মোঃ আবু কাওছার ও সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপির নেতৃত্বে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা যুবলীগের সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলের নেতৃত্বে মহিলা যুবলীগ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এরপর বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলসহ অজস্র রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বঙ্গভবনে এক অন্যরকম মিলনমেলা ॥ বাঙালীর স্বাধীনতার ৪৫তম বার্ষিকীতে সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, কূটনীতিক, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার, শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের উপস্থিতিতে সত্যিই এক অন্যরকম মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল শনিবার বঙ্গভবনে। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবার উপস্থিতিতে সরগরম ছিল বঙ্গভবনের সবুজ প্রাঙ্গণ। লাল-সবুজ পাতা দিয়ে তৈরি একটি পতাকা অনুষ্ঠানে আনে ভিন্নমাত্রা। প্রথা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের এ আয়োজনে ভিন্নমাত্রা যোগ করে বরেণ্য শিল্পীদের দেশাত্মবোধক ও লোকগান এবং শিশুশিল্পী ও সশস্ত্রবাহিনীর বাদক দলের সংগীতের মূর্ছনা। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবভবনে আগত অতিধিদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে কুশলবিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। বিকেল পৌনে ৫টায় সহধর্মিণী রাশেদা খানমকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গভবনের মাঠে আসেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। তার খানিক আগে বঙ্গভবনে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি সস্ত্রীক মঞ্চে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীত। এরপর পরষ্পর কুশলবিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। পরে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারের সদস্যসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তারা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং তাদের সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেন। এরপর অনুষ্ঠান মাঠে ভিভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত এলাকায় স্বাধীনতা দিবসের কেক কাটেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এরপর তারা মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বিদেশী অতিথি, সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি, সংসদ সদস্য, গণমাধ্যমের সম্পাদক, তিন বাহিনীর প্রধানসহ সমারিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে শিল্পী ফকির আলমগীর, বাপ্পা মজুমদার, ইয়াসমিন আলী, জিনাত জাহান মুন্নী, মৌটুসি ইসলাম, পুলক ও ভজন খ্যাপা তাদের গানের সুরে মোহাবিষ্ট করেন সবাইকে। ভিভিআইপি এনক্লোজারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে বসেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বঙ্গভবনের এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেনÑ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, ড. গওহর রিজভী প্রমুখ। এছাড়াও প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট তারানা হালিম, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাসদের একাংশের কার্যকরী সভাপতি মঈন উদ্দীন খান বাদল, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, বিএনপির সাবেক নেতা শমসের মবিন চৌধুরী, ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট, মিসরের রাষ্ট্রদূত ও ডিপ্লোমেটিক কোরের ডিন মাহমুদ ইজ্জত, ভুটানের রাষ্ট্রদূত পেমা সরেনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা ॥ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফুল, ফল ও মিষ্টান্ন পাঠিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-১ জাহাঙ্গীর আলম, এপিএস-২ এ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর, প্রটোকল কর্মকর্তা খুরশিদ আলম রাজধানীর মোহাম্মদপুর মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্রে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এসব উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান মুক্তিযোদ্ধারা। প্রায় ৮০ জন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্রে অবস্থান করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ॥ দীর্ঘদিন পর জাতীয় প্রেসক্লাবের উদ্যোগে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ক্লাব প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় আয়োজক প্রেসক্লাব বর্তমান ম্যানেজিং কমিটিকে ধন্যবাদ জানান। প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেনÑ প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ। আলোচনা সভা শেষে একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী কাদেরী কিবরিয়াসহ অন্য শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
×