ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি চান স্বামী ও দুই সন্তানহারা হালিমা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৭ মার্চ ২০১৬

শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি চান স্বামী ও দুই সন্তানহারা হালিমা

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ২৬ মার্চ ॥ ’৭১-এর শহীদের জননী হালিমা খাতুনকে (৮০) বার্ধক্য জেঁকে ধরেছে। কিন্তু স্মৃতি দুর্বল হয়নি এতটুকু। স্বাধীনতা দিবসের দিনটি কাটে কান্নাকাটি করে। আজও তার কোন আশ্রয় মেলেনি। থাকতে হচ্ছে মেয়ের জামাইয়ের লালমনিরহাটের বাসায়। ’৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শহীদের মা ও স্ত্রী বিবেচনায় একটি সরকারী চাকরি দিয়েছিলেন। এটুকুই যা। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী কিংবা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি। শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম নেই তার স্বামী ও দুই সন্তানের। জেলা সদরের হাঁড়িভাঙ্গা গ্রামের জামাতা আব্দুল হাকিমের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী এবং বর্তমান বুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবীছাত্র মুক্তিযোদ্ধা একেএম আমিনুল ইসলামের মা হালিমা খাতুন (৮০)। জীবনসায়াহ্নে এসে শহীদের মা ও স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি চান তিনি। দেখে যেতে চান তার স্বামী ও সন্তানদের দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকারের স্বীকৃতি। খুব ছোটবেলায় নওগাঁর ধামকুড়ি গ্রামের একেএম নুরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয় হালিমা বেগমের। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার বড় ছেলে একেএম আমিনুল ইসলাম বুয়েটের (বর্তমান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ছোট ছেলে একেএম এহছানুল ইসলাম মাধ্যমিকে পড়ত। সেও খুব মেধাবীছাত্র ছিল। দুই ছেলে ও চার মেয়ে নিয়ে কৃষক পরিবারটির সংসার আনন্দেই কাটছিল। ২৫ মার্চে ঢাকা শহর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানী সেনারা ঘুমন্ত ছাত্র-শিক্ষক ও নিরীহ জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। বড় ছেলে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র একেএম আমিনুল ইসলাম কোনরকমে জীবন বাঁচিয়ে বাড়ি চলে আসেন। খুব গোপনে বাবা, চাচা, মা ও ছোটভাইকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের মানুষ ও যুবকদের সংগঠিত করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করেন। নিজেরাও অস্ত্র হাতে তুলে নেন। নওগাঁর ধামকুড়ি প্রত্যন্ত একটি গ্রাম। ২২ এপ্রিল বিকেল তিনটা। গ্রামের বিস্তীর্ণ ধানের জমিতে কেবল পাক ধরেছে। সবুজ হলদে আভায় অন্যরকম দৃশ্য। নির্জন দুপুর। ক্লান্ত কৃষি শ্রমিকরা মাঠের কাজ ছেড়ে পড়ন্ত বিকেলে গাছের ছায়ায় একটু জিরিয়ে নিতে এসেছেন। এমন সময় গ্রামটিতে পাকিস্তানী সেনা ও রাজাকার আলবদররা বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে ছুড়তে প্রবেশ করে। গ্রামের মানুষ ভয়ে দিগ্বিদিক ছুটে পালায়। পাকি সেনারা পুরো গ্রামটি জ্বালিয়ে দেয়। নারী ও যুবতীদের ধরে নিয়ে যায়।
×