ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বগুড়ায় টর্চার সেল জামিল ফ্যাক্টরি

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২৬ মার্চ ২০১৬

বগুড়ায় টর্চার সেল জামিল ফ্যাক্টরি

বগুড়ার এখন সেই জায়গাটি ভেঙ্গে বহুতল ভবন নির্মিত হয়েছে। প্রবেশপথের এক স্থানে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের গণকবর পাকা করে রাখা হয়েছে। কিভাবে তারা শহীদ হলো, কিভাবে গণকবর হলো তা শুনে আজও শিউরে উঠতে হয়। হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশী দোসর রাজাকাররা কতভাবে যে নিরীহ মানুষকে নির্যাতন করে মেরেছে, কতভাবে যে নারীদের লাঞ্ছিত করে হত্যা করেছে তা শুনলে পাকিস্তান নামের দেশটির ওপর ঘৃণা হয়। কত জঘন্য অত্যাচারী ছিল তারা। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের প্রতিটি স্থানেই হানাদার পাকিস্তানী সেনারা বানিয়েছিল ‘টর্চার সেল’। রাজাকার নামের কুখ্যাত দানবরা নারী পুরুষ ধরে এনে তুলে দিত পাকিস্তানী সেনাদের হাতে। পরিচয় দিত এরা বাঙালী। পুরুষদের নির্যাতন ও নারীদের ধর্ষণ করে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। পাকিস্তানের মুসলমান নামধারী সেনাবাহিনী ও দোসর রাজাকাররা নর হত্যার পর মদ আর নারীদের নিয়ে উদ্দাম নৃত্যে মেতে উঠেছে। ধর্ষণ-নির্যাতনের পর কোন নারী এমনিতেই মারা যেত। কাউকে ধর্ষণের চেয়ে ভয়াবহ নির্যাতন করে হত্যার পর দেহ ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। বগুড়া জেলা শহরে এমনই এক টর্চার সেল ছিল অবাঙালীদের প্রতিষ্ঠান জামিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। লোকমুখে ছিল জামিল ফ্যাক্টরি। ফটকে লেখা ছিল ভার্জিনিয়া টোবাকো কোম্পানি। বগুড়া শহর থেকে স্টেশন রোড ধরে পূর্ব দক্ষিণে যাওয়ার সময় রাস্তার ধারে পড়ে এই ইন্ডাস্ট্রি। পাকিস্তান শাসনামলে এই ফ্যাক্টরিতে কয়েক ব্র্যান্ডের সিগারেট, জর্দা এবং আরেক ধারে গায়েমাখা ও কাপড়ধোয়া সাবান তৈরি হতো। স্বাধীনতার পর ফ্যাক্টরিটি রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয়। তারপর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে। নব্বই দশকের শুরুতে বিএনপি শাসনামলে তা অবাঙালীকে ফেরত দেয়া হয়। ফ্যাক্টরি আর চালু হয় না। একবিংশ শতকের প্রথমে সেখানে ফ্যাক্টরি বিলুপ্ত করে গড়ে উঠেছে রিয়েল এস্টেটের বহুতল ভবন। নব্বই দশকের শেষের দিকে ফ্যাক্টরির ভেতরের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের খবর প্রকাশ হতে থাকে। হানাদার পাকিস্তানীরা এই ফ্যাক্টরির ভেতরে স্থাপন করে ‘মুক্তিযোদ্ধা ও বাঙালী নির্যাতন ও হত্যার সেল।’ রাজাকাররা শহর ও আশপাশের গ্রাম থেকে প্রতিদিন বাঙালী ধরে এনে তুলে দিত হানাদারদের কাছে। বিকৃত উল্লাসে হানাদাররা নির্যাতন করে ফ্যাক্টরির বয়লারে ফেলে দিত। কখনও ফ্যাক্টরির যন্ত্রের মধ্যে দেহ ঢুকিয়ে হত্যার পর লাশ পুঁতে ফেলত। গ্রাম থেকে নারীদের ধরে এনে তুলে দেয়া হতো পাকিস্তানী সেনাদের মনোরঞ্জনে। ফ্যাক্টরির ভেতরে রেস্ট হাউজে বিকৃত ধর্ষণের পর হত্যা করা হতো মেয়েদের। কখনও এমনিতেই মারা যেত। ফ্যাক্টরির আশপাশে পুঁতে ফেলা হয়েছে সেসব হতভাগ্যদের দেহ। জামিলের রিয়েল এস্টেট নির্মাণের সময় মাটির নিচে বহু হাড়গোড় পাওয়া যায়। পরে তা এক স্থানে কবর খুঁড়ে রাখা হয়। বহু বছর পর অনেকের সন্ধান মেলে। Ñসমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×