ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্রাসেলস-যোগ এড়াচ্ছে প্যারিসের পান্ডা

প্রকাশিত: ১৯:৩০, ২৫ মার্চ ২০১৬

 ব্রাসেলস-যোগ এড়াচ্ছে প্যারিসের পান্ডা

অনলাইন ডেস্ক ॥ বেলজিয়াম পুলিশের হাতে ধরা পরার পর গোয়েন্দাদের সঙ্গে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিল সে। চেয়েছিল, প্যারিস হামলায় তার যোগ নিয়ে বিচার চলুক বেলজিয়ামে। কোনও ভাবেই আর ফ্রান্সে ফিরতে চায়নি প্যারিস হামলার অন্যতম পান্ডা সালাহ আবদেসলাম। ব্রাসেলস বিস্ফোরণের পর এক ধাক্কায় বদলে গেল সেই ‘পরিকল্পনা’। বৃহস্পতিবার আদালতে আবদেসলামের আইনজীবী স্বেন ম্যারি জানিয়ে দিলেন, বেলজিয়ামের গোয়েন্দাদের আর তথ্য দিতে রাজি নয় তাঁর মক্কেল। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফ্রান্সে ফিরে যেতে চায় সালাহ। সেখানে ফরাসি গোয়েন্দাদের কাছেই মুখ খুলবে সে। আবদেসলামের এই মত বদলই সিলমোহর লাগাচ্ছে গোয়েন্দাদের সন্দেহে। তাঁরা প্রায় নিশ্চিত, প্যারিসের পরে ব্রাসেলস হামলার চক্রান্তেও জড়িত ছিল এই জঙ্গি। গোয়েন্দা কর্তাদের একটা বড় অংশের ধারণা, মঙ্গলবার জাভেন্তেম বিমানবন্দর ও মালবিক মেট্রো স্টেশনে হামলা চালায় যে আইএস জঙ্গিরা, আবদেসলাম সেই দলটিতে থাকতেই পারত। কিন্তু হামলার চার দিন আগেই মোলেনবিকের এক গোপন ডেরা থেকে বেলজিয়াম পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় সে। আবদেসলামের আইনজীবী আদালতে জানিয়েছেন, ব্রাসেলস হামলার বিন্দুবিসর্গও জানত না তাঁর মক্কেল। বেলজিয়ামের মাটিতে সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার দু’দিনের মধ্যে তিন জন জঙ্গিকে এ পর্যন্ত শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ। খোঁজ চলছে চতুর্থ জঙ্গির। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, জাভেন্তেম বিমানবন্দরে হামলা চালিয়েছিল খালিদ এল বাকরৌয়ি (২৭) ও নাজিম লাছারৌয়ি। আর মালবিক মেট্রো স্টেশনে হামলা চালিয়েছিল ইব্রাহিম এল বাকরৌয়ি (২৯)। এর মধ্যে খালিদ ও ইব্রাহিম সম্পর্কে দুই ভাই। আর নাজিম সম্পর্কে যে তথ্য মিলেছে, তাতে কপালের ভাঁজ গভীর হয়েছে গোয়েন্দাদের। আইএসের অন্যতম বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ নাজিম লাছারৌয়ি। প্যারিস হামলার সঙ্গেও তার যোগ ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। সেখানে সে কোনও রকমে প্রাণে বেঁচে পালিয়ে বেলজিয়ামে ঢুকে পড়েছিল বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন তদন্তকারীরা। এর মধ্যেই এ দিন বেলজিয়াম হামলা নিয়ে আইএস নতুন একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। ইউরোপের মাটিতে সন্ত্রাসকে পৌঁছে দিতে পেরে উচ্ছ্বসিত জঙ্গি সংগঠনটির দাবি, ইউরোপের আরও অনেক দেশেই বড় মাপের হামলা হবে। সতর্কতা সত্ত্বেও জঙ্গি হানায় ৩১ জনের প্রাণহানি রুখতে না পেরে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে বেলজিয়াম প্রশাসন। তার উপর আজই তুরস্ক জানিয়েছে, গত বছর জুনে সিরিয়া সীমান্তে গাজা ভূখণ্ড থেকে তারা গ্রেফতার করে ইব্রাহিম এল বাকরৌয়িকে। এক বার নয়, দু’-দু’বার সতর্ক করা হয় তাকে নিয়ে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আজ বলেছেন, ‘‘গ্রেফতারের পর ইব্রাহিমের ব্যাপারে সাবধান করা হয়েছিল। তখনই বলা হয়েছিল যে, ও এক জন বিদেশি ভাড়াটে যোদ্ধা। কিন্তু বেলজিয়াম প্রশাসন এই সতর্কতায় কান দেয়নি।’’ তুরস্কে গ্রেফতার হওয়ার পরে ইব্রাহিমকে তুলে দেওয়া হয়েছিল নেদারল্যান্ডসের হাতে। সেখান থেকে সে কী ভাবে ব্রাসেলসে পৌঁছল, তা স্পষ্ট নয় এখনও। তবে নেদারল্যান্ডস সরকার জানিয়েছে, তুরস্ক ইব্রাহিমকে সে দেশে পাঠিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তার জঙ্গি-যোগ নিয়ে কোনও তথ্য দেয়নি আঙ্কারা। নেদারল্যান্ডসে ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। বেলজিয়ান গোয়েন্দাদের একাংশ জানিয়েছে, সশস্ত্র ডাকাতির দায়ে বেলজিয়ামে ১০ বছরের সাজা হয়েছিল ইব্রাহিমের। চার বছর জেল খাটার পর ২০১৪ সালে মুক্তি পায় সে। আর জেল থেকে বেরনোর পরে আর তার নাগাল পায়নি বেলজিয়াম পুলিশ। চাপের মুখে এখন সেই দায় মানছে বেলজিয়াম প্রশাসন। বলছে, ইব্রাহিমকে ধরা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তা ডাকাতির দায়ে। সন্ত্রাসমূলক কোনও কাজের অভিযোগ ছিল না তার বিরুদ্ধে। হাতের মুঠোয় পেয়েও ওই জঙ্গিকে ছেড়ে দেওয়ার দায় কাঁধে নিয়ে তাই পদত্যাগ করতে চেয়েছেন দেশের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী জান জাম্বোন। ওয়াশিংটন জানিয়েছে, শুক্রবার বেলজিয়াম সফরে যাচ্ছেন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি। বেলজিয়ামের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন ৪০টি দেশের নাগরিক। প্রায় তিনশো আহতের মধ্যে ৬১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ক্ষতবিক্ষত মানুষ দেখে শিউরে উঠছেন চিকিৎসকরাও। ৩১ জনের মৃত্যুতে এ দিন অর্ধনমিত রাখা হয়েছে বেলজিয়ামের পতাকা। শনিবার অবধি বন্ধ জাভেন্তেম বিমানবন্দর। থমথমে রাস্তায় মোমবাতি হাতে ভিড় স্থানীয় মানুষদের। ‘‘গোটা পৃথিবী এখন আমাদের সঙ্গে। আমরা একটাই পরিবার’’, বলে ওঠেন তাঁদেরই এক জন।মঙ্গলবার বিমানবন্দরেই মৃত্যু হয় পেরুর বাসিন্দা তাপিয়া রুইজের। বিস্ফোরণের ঠিক আগে তাঁর স্বামী দুই যমজ মেয়েকে নিয়ে বাইরে বেরিয়েছিলেন। তাপিয়া মারা গেলেও বেঁচে যান তাঁর স্বামী ও দুই কন্যা। মৃত্যু মিছিলের মাঝে উঁকি মারছে এই রকম বেঁচে ফেরার ছবিও। মালবিক মেট্রো স্টেশনের বাইরে এ দিন বিরাট ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে কয়েক জন। তাতে ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান ভাষায় লেখা ‘কেন?’ শুধু বেলজিয়াম নয়, এখন এই ‘কেন’-র উত্তরটা খুঁজছে গোটা বিশ্ব। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×