ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুমাতে সাহায্য করে পানির শব্দ!

প্রকাশিত: ০৭:২২, ২৫ মার্চ ২০১৬

ঘুমাতে সাহায্য করে পানির শব্দ!

সাগরের ঊর্মিমালার একের পর এক আছড়ে পড়া, ছোট নদীর কলকল ধ্বনিতে বয়ে চলা, টিনের ছাদে টুপটাপ বৃষ্টি পরা- এই শব্দ বা ধ্বনিগুলো অনেককে ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করে। তারা তখন যেন স্বপ্নের জগতে চলে যায়। পানির প্রবাহের এই বিভিন্ন ধরনের ধ্বনি বা শব্দগুলো চোখে যেন ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে আসে? কেন এদের এত শক্তিশালী নিদ্রা সৃষ্টিকর প্রভাব থাকে? এর আংশিক জবাবটা নিহিত আছে জাগরণের সময় ও গভীর রাতে আমরা যেসব শব্দ শুনি সেগুলোকে হয় ভয় বা হুমকিরূপে অথবা তার উল্টোরূপে মস্তিষ্ক কিভাবে ব্যাখ্যা করে তার ওপর। কিছু কিছু শব্দ বা ধ্বনি আছে যেমন আর্তচিৎকার ও এলার্ম ঘড়ির বেসুরো আওয়াজ- যেগুলোকে মোটেও উপেক্ষা করার উপায় নেই। আবার এমন শব্দও আছে যেমন গাছে গাছে বাতাসের দোলায় সৃষ্ট মর্মর ধ্বনি কিংবা নদীর তীরে ঢেউ এসে পড়ার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ মোটেও বেসুরো নয়। এগুলো শুনলেও শোনা যায়, না শুনলেও ক্ষতি নেই। ধীরগতির এই মৃদু শব্দগুলো ভয়ভীতি বা হুমকি জাগায় না। সে কারণেই মানুষের মনে প্রশান্তি এনে দিতে এগুলোর ইতিবাচক ভূমিকা আছে। এই ধ্বনি বা শব্দগুলো যেন বলতে চায় : ‘চিন্তা করো না, চিন্তা করো না, চিন্তা করো না।’ এমন মন্তব্য করেছেন আমেরিকার এক গবেষক ওরফিউ বাক্সটন। সাধারণভাবে বলা যায় যে, জোরালো ধরনের শব্দ শুনলে আমাদের পক্ষে ঘুমানো কঠিন হয়। তবে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার সম্ভবত শব্দের মাত্রার চেয়ে শব্দের প্রকৃতি বা চরিত্র এবং কিভাবে সেটা মস্তিষ্কে ভয়ভীতির দ্বারা সক্রিয় হয়ে ওঠা সতর্কতা ব্যবস্থাকে সজাগ করে ভুলে এবং ঘুম থেকে আমাদেরকে ঝাঁকি মেরে জাগিয়ে দেয়। শব্দের প্রকৃতিই নির্ধারণ করে দেবে আপনি জেগে উঠবেন কি উঠবেন না। বাক্সটন বলেন, এর কারণ হচ্ছে শব্দ সংক্রান্ত তথ্যাবলী আমাদের মস্তিষ্কে ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। যেমন তরঙ্গ বা ঢেউ এসে আছড়ে পড়ার শব্দ যদিও মাত্রার দিক দিয়ে যথেষ্ট কমবেশি হতে পারে তথাপি তরঙ্গ তুঙ্গে পৌঁছার পর যে নীরব বিরতি নেমে আসে সেখানে ঢেউগুলোর তীব্রতা কমে আসে। সেগুলো ধীরে ধীরে ওঠানামা করে। এখানেই হলো তীক্ষè চিৎকার কিংবা টেলিফোন বেজে ওঠার শব্দের সঙ্গে বিরাট পার্থক্য। কারণ এই শব্দগুলো সহসা নীরবতাকে বিদীর্ণ করে দেয় এবং উচ্চ আওয়াজটা প্রায় নিমেষের মধ্যে তুঙ্গে পৌঁছে যায়। হঠাৎ করে ভীতি সৃষ্টি করার মতো শব্দ এবং ধীরে ধীরে ভীতি সৃষ্টি না হওয়ার মতো শব্দের মধ্যে যে মৌলিক পার্থক্য আছে তা ২০১২ সালে একটি হাসপাতালের পরিবেশে বাক্সটনের পরিচালিত সমীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে। সেখানে সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা প্রায় ৪০ ডেসিবেলের সামান্য ভলিউমের ফিসফিসানি কথায় কিংবা হাসপাতাল সরঞ্জামের এলার্ম ধ্বনিতে ৯০ শতাংশ সময় অগভীর নিদ্রা থেকে এবং অর্ধেক সময় গভীর নিদ্রা থেকে জেগে উঠেছিল। অন্যদিকে আবার এটাও দেখা গেছে যে এলার্ম ধ্বনি, টেলিফোন বেজে ওঠার আওয়াজ এমনকি অপেক্ষাকৃত অনুচ্চ কথাবার্তায় সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা যত ঘন ঘন জেগে উঠেছিল হেলিকপ্টার ও যানবাহন চলাচলের আওয়াজ ৭০ ডেসিবেলে পৌঁছালেও তারা ওভাবে জেগে ওঠেনি। আমরা মানুষরা জৈবিক দিয়ে এমনভাবে হার্ডওয়্যারের সঙ্গে যুক্ত যে শূন্য থেকে বস্তুত শব্দেও জেগে উঠি কারণ সেটা অনেক দুঃসংবাদও হতে পারে। আমাদের চারপাশে একটানা পানি প্রবাহের শব্দ আমাদের ঘুমাতে সাহায্য করার আরেকটা কারণ ঐ প্রবাহের শব্দের নিচে চাপা পড়ে যায় এমন কিছু শব্দ যে শব্দ আমাদের কানে গেলে শঙ্কিত হতাম বোধ করতে এবং সেই কারণে নিদ্রাহারা হতে পারি। অর্থাৎ এক্ষেত্রে পানি প্রবাহের আওয়াজ একটা রাখচাকের ভূমিকা পালন করে। সূত্র : লাইফ সাছেহ্ন
×