ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুশফিকের বোধোদয়, দুঃখ প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ২৫ মার্চ ২০১৬

মুশফিকের বোধোদয়, দুঃখ প্রকাশ

স্পোর্টস রিপোর্টার, কলকাতা থেকে ॥ কথায় আছে, ‘শেষ ভাল যার, সব ভাল তার।’ বাংলাদেশ দল কী শেষটা ভাল করতে পারবে? না কি খালি হাতে বাংলাদেশ ফিরবে মাশরাফিরা? ভাল’র অপেক্ষাতেই আছেন সবাই। সেই ভালর দেখা কী মিলবে? টি২০ বিশ্বকাপে বরাবরই টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর বিপক্ষে অসহায় হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। সেই ২০০৭ সালে প্রথম টি২০ বিশ্বকাপে যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ, এরপর থেকে আর কোন টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে বিশ্বকাপে জিতেইনি। এবারও একই দশা হতে চলেছে। যদি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে শনিবার জিততে না পারে বাংলাদেশ, তাহলে একই অবস্থা হবে। সেই টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে হারের গোলকধাঁধাতেই আটকে থাকবে। ২০০৭ সালের পর যে ২০০৯, ২০১০, ২০১২ ও ২০১৪ সালে যেমন, এবারও টি২০ বিশ্বকাপে তাই ঘটবে। খালি হাতেই টি২০ বিশ্বকাপের মিশন শেষ করতে হবে বাংলাদেশকে। তবে এবার অন্য যে কোন বিশ্বকাপের চেয়ে ভাল খেলেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫৫ রানে হারের পর মনে হয়েছিল বাকি তিন দলের বিপক্ষে দাঁড়াতেই পারবে না মাশরাফিরা। অথচ এখন পর্যন্ত ঘটেছে একেবারেই উল্টো। অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরতে পেরেছে বাংলাদেশ। ৩ উইকেটে হার হলেও বাংলাদেশ যে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছে, তা প্রশংসনীয়ই। তাতে অস্ট্রেলিয়া হয়ত ১৮.৩ ওভারে খেলা শেষ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ লড়াই করেই হেরেছে। আর ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের রেশ তো এখনও কারোরই কাটছে না। একদিন আগেই ম্যাচটি হয়েছে। সেই ম্যাচে জেতার এত কাছে গিয়েও ১ রানে হার হয়েছে। কি কষ্ট। কি যন্ত্রণা যে পাচ্ছেন ক্রিকেটাররা। সেই যন্ত্রণা ক্রিকেটপ্রেমীদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে। জয় পাওয়ার এমন সুযোগ কী আর ভারতের বিপক্ষে আসবে? হয়ত ভারতের বিপক্ষে জিতবেও কখনও বাংলাদেশ। কিন্তু এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, অসাধারণ ম্যাচ কী হবে? সবার মুখে একই কথা, জেতা ম্যাচ হেরে গেল বাংলাদেশ। শেষ তিন বলের আক্ষেপে পুড়ছে ক্রিকেটার ও পুরো দেশ। মুশফিক আউট হওয়াতেই সর্বনাশের শুরু। এরপর মাহমুদুল্লাহ ও মুস্তাফিজ আউট হতেই জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। যেহেতু মুশফিকুর রহিমের আউটের মধ্য দিয়ে হারের পথের শুরু। তাই ফেসবুক ভ্যারিফাইড পেজে যা লিখেছেন তাতে যে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন মুশফিক এবং সঙ্গে থাকতে বলেছেন, তা বোঝাই যাচ্ছে। ফেসবুকে তার ভ্যারিফাইড পেজে লিখেছেন, ‘আমি জানি গতকালের (বুধবার) হারটি আপনাদের জন্য অনেক বেদনাদায়ক ছিল। কিন্তু দলের সকলেই প্রতি ম্যাচে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে খেলে। তাই আমার ও দলের সবার জন্যই পরাজয়টা কষ্টকর ছিল।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘এ রকম সময়ে আমার এভাবে আউট হওয়া ঠিক হয়নি। হয় তো আমার জন্যই দল হেরে গেছে। সেক্ষেত্রে দেশবাসীর কাছে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আশা করি এটা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আপনাদের মুখে আবারও হাঁসি এনে দিতে পারব।’ তাসকিন আহমেদ থাকলে হয়ত ভারতের স্কোরবোর্ডে আরও কয়েকটি রান কম হতো। কিন্তু তিনি এখন নিষিদ্ধ। আশা করেছেন, ‘ভবিষ্যতে আরও ভাল করবে দল।’ সমর্থকদের শান্ত থাকতেও বলেছেন। ফেসবুক ভ্যারিফাইড পেজে জানিয়েছেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু ভাগ্য ভাল ছিল না। ছোট্ট ভুলগুলোতে হেরেছি। ইনশাআল্লাহ আমরা ভবিষ্যতে আরও ভাল করব। এমন হারে কোন ক্রিকেটারকে দোষ দেবেন না। আমরা ভুল থেকে শিখছি। আমাদের সঙ্গে থাকুন।’ তিন বলে তিন উইকেটের পতনেই হার হয়ে গেছে বাংলাদেশের। কিন্তু ক্রিকেটারদের এই খারাপ সময়ে ক্রিকেটাররাই তাদের শক্তি জুগিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্রিকেটাররা সমর্থকদের দলের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। সম্প্রতি বোলিং এ্যাকশন নিষিদ্ধ হওয়ায় দলের সঙ্গে নেই স্পিনার আরাফাত সানি। বুধবার দেশে ফিরেছেন। দলের এইভাবে হেরে যাওয়া কিছুতেই মানতে পারছেন না তিনি। সানি তার ফেসবুকের ভ্যারিফাইড পেজে লিখেছেন, ‘এক রানের হার সত্যিই কষ্টের।’ বাংলাদেশের দলের ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান লিখেছেন, ‘এক রানের দুঃখ, আমাদের সঙ্গে সব সময় এমন হয় কেন? যা ঘটে গেছে তা অনাকাক্সিক্ষত। যেটা আমরা কেউই প্রত্যাশা করিনি। আমরা সব সময় জয়ের জন্যই খেলি। তবে যাই হোক পরবর্তী ম্যাচে আমরা ভালভাবে ফিরব ইনশাল্লাহ। সবাই দোয়া করবেন।’ বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন, ‘আমি কাউকে দায়ী করছি না। আমাদের দিকে সব কিছু আসতে পারত। আমার মনে হয় শুধু আমার না, ড্রেসিংরুমে যারা আছে তাদের সবার জন্যই ম্যাচটি হতাশার। শেষ ৩ বলে আপনার লাগবে ২ রান। তখনও দুই সেট ব্যাটসম্যান ও একজন ব্যাটসম্যান লাইনআপে ছিল। ওই অবস্থায় ৩ উইকেট হারানো সবার জন্যই খুব কঠিন ম্যাচ। এখন আমাদের অবশ্যই ফিরে আসতে হবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট তো এখানেই থেমে যেতে পারে না। আমাদের এ অবস্থা থেকে এগিয়ে যেতে হবে। এ হার শুধু আমার না, আমরা যারা খেলোয়াড় আছি, সবার জন্যই এটা শকিং। এ ধরনের ম্যাচ কেউ হারে না। এখন বুঝানো খুব কঠিন। তবে এটা হতাশাজনক।’ এখন সেই হতাশা দূর করে শনিবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফিরে আসতে পারলেই হয়। না হলে যে খালি হাতেই টি২০ বিশ্বকাপ থেকে আবারও বিদায় নিতে হবে বাংলাদেশকে। বাছাইপর্বে জয় মিলেছে। সেই জয়গুলোকে বিশ্বকাপের জয় হিসেবে ধরা যাবে না। ‘সুপার টেনে’র জয়গুলোই আসল। এ পর্বে যে টি২০’র সেরা ৮ দল ও বাছাইপর্ব উতরানো দুটি দল খেলেছে। এ পর্বে না জেতার দিকেই তাই সবার নজর থাকছে। জয়হীন বিশ্বকাপই কী শেষ করবে বাংলাদেশ?
×