ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারতের বিপক্ষে দুর্ভাগ্যজনক হারের পর টাইগার অধিনায়ক

কাউকে দায়ী করছেন না মাশরাফি

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৫ মার্চ ২০১৬

কাউকে দায়ী করছেন না মাশরাফি

মিথুন আশরাফ, কলকাতা থেকে ॥ তিন বলে ২ রান লাগে। এমন মুহূর্তে মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের মতো ব্যাটসম্যানরা থাকলে কী আর কোন দল হারে? হারে, বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে বুধবার তাই বোঝা গেল। সাজানো বাগান ভারত কী নষ্ট করবে, নিজেরাই সেই কাজটি সহজে করে দিয়েছেন। তাতে করে একটি জয়ের অপমৃত্যুই যেন ঘটে গেল। তিরে এসে তরী ডুবল। সবাই দোষ দিচ্ছেন, মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহকেই। এমন সময়ে কেন একইভাবে আউট হলেন দুইজন। কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা তার এ দুই ব্যাটসম্যানকে আগলে রাখার চেষ্টা করছেন। বলেছেন, ‘আমি কাউকে দায়ী করছি না। আমাদের দিকে সবকিছু আসতে পারত।’ জয়ের এত কাছে গিয়েও তা মিলল না। এ নিয়ে চরম হতাশা জুড়ে ধরেছে। তাতে ভয়ও কাজ করছে। ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানা দুটি টি২০ ম্যাচ শেষ বেলায় গিয়ে হারের পর টানা ৭ মাস তো বাংলাদেশ কোন ম্যাচই জিতেনি। এমনকি সেই সময় এ হার এতটাই ঘিরে ধরেছিল বাংলাদেশ দলকে আফগানিস্তানের মতো দলের কাছেও হেরেছে বাংলাদেশ। এমনকি টি২০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে হংকংয়ের কাছেও হার হয়েছিল বাংলাদেশের। সেই রকম কিছুই আবার ঘটে যাবে না তো? এ ভয় কাজ করছে। মাশরাফির মনে যেন সেই ভয়ই কাজ করছে। তাই ফিরে আসার কথাই জানাচ্ছেন, ‘আমাদের অবশ্যই ফিরে আসতে হবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট তো এখানেই থেমে যেতে পারে না। আমাদের এ অবস্থা থেকে এগিয়ে যেতে হবে।’ হতাশা যে ক্রিকেটারদের মধ্যেও ঘিরে ধরে তা জানালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘আমার মনে হয় শুধু আমার না, ড্রেসিং রুমে যারা আছে তাদের সবার জন্যেই ম্যাচটি হতাশার। শেষ ৩ বলে লাগবে ২ রান। তখনও দুই সেট ব্যাটসম্যান ও একজন ব্যাটসম্যান লাইনআপে ছিল। ওই অবস্থায় ৩ উইকেট হারানো সবার জন্যেই খুব কঠিন ম্যাচ।’ সবাই বুঝেছেন। মুশফিক কিংবা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ১ রান নিতেই পারতেন। তাহলে টাই হয়ে যেত। তখন যা হত দেখা যেত। কিন্তু মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ একটি রানই নিতে পারলেন না। ছক্কা হাঁকাতে গিয়েই দলকে বিপত্তিতে ফেলে দিয়েছেন দুইজনই। মাশরাফি এ নিয়ে বলেন, ‘ক্যালকুলেটিভ হলে একেবারের রিক্সলেস হতো। ফিল্ডার একজনও উপরে ছিল না। সবাই বাইরে ছিল। ওই বলটাই এক হয়ে গেলে হয়ত আমরা ভাল পজিশনে থাকতাম। তখন থেকে ১ হয়ে গেলে আমাদের ২ বলে ১ রান লাগত। ওই অবস্থান ওই সব চিন্তা করলেই ভাল হতো। আমরা তা করতে পারিনি।’ ম্যাচ হয়েছে ২০ ওভারের। অথচ মাশরাফি শেষ ৩ বলকে বাদ দিয়ে হিসেব করছেন। তাতে বাংলাদেশ ভাল খেলেছে বলেই মনে করছেন। তবে হার যে হারই। দিনশেষে ভাল খেলার চেয়ে ‘হার-জিত’ই মুখ্য হয়ে ওঠে। এ একটি বিষয় দলকে উন্নীতও করে দেয়। বাংলাদেশ যেমন হেরে বিদায় নিয়ে নিল। ভারত সেমিফাইনালে খেলার উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি করে নিল। এরপরও মাশরাফি বলছেন, ‘আমার মনে হয় শেষ ৩ বল বাদ দিলে পুরো ম্যাচ আমরা অসাধারণ খেলেছি। জেতার জন্য যতটুকু দরকার ছিল আমরা ঠিক ততটুকু করেছি। হয়তো বা ওদের দুই ওভার আমাদের ম্যাচ থেকে দূরে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা আবার ফিরে এসেছি। প্রত্যেকটি বল আমরা ঠিকমতো খেলতে পেরেছি। আমি মনে করি ওভারঅল ওই তিন বল বাদ দিলে ম্যাচ জিততে হলে যতটুকু করা দরকার ততটুকু আমরা ঠিক মতোই করেছি।’ ৬ বলে যে ১১ রান দরকার ছিল, সেই সময় মুশফিক দুটি বাউন্ডারি হাঁকান। তাতেই ম্যাচটি জেতার আশা জাগে। তা না হলে জেতার সম্ভাবনাই তৈরি হতো না। এমনই যেন বলতে চাইলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘এটা দুটা জিনিস হতে পারে। জিনিসটা তখনও কঠিন ছিল। ৬ বলে ১১ রান। ওই সময়ে দুটি চারে সবকিছু পক্ষে চলে আসছিল। ও সময়ে ও আরও সতর্ক থাকতে পারত। আবার ও ম্যাচটি ক্লোজ হয়ে গিয়েছে বলে ওর ভাল লেগেছে। এখানে দুইভাবে নেয়া যায়। এটা নেতিবাচক নেয়ার কোন কিছু নেই। দুটা চার মারার পর যে কোন ব্যাটসম্যানই বুস্টআপ হয়। ওই সময় সেনসেবল ব্যাটসম্যান যাওয়ার দরকার ছিল। মুশফিক আমাদের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ওই সময়ে শুভাগতের জায়গায় ও যাবে। বলের থেকে তখন রান বেশি লাগত। ওভারঅল আমরা তো সব কিছুই কভার করে ফেলেছি। কিন্তু ওই ৩ বলেই ম্যাচ হেরেছি।’ সবার মতো বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররাও যে যানপরানই হতাশ, তা বলতে ভুলেননি মাশরাফি, ‘এটা শুধু আমার না, আমরা যারা খেলোয়াড় আছি, সবার জন্যই এটা শকিং। এ ধরনের ম্যাচ কেউ হারে না। এখন বুঝানো খুব কঠিন। তবে এটা হতাশাজনক।’ সেই হতাশার মাঝেও, ‘আমি কাউকে দায়ী করছি না’ বলছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
×