ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হতাশার হারেও প্রশংসিত বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৫ মার্চ ২০১৬

হতাশার হারেও প্রশংসিত বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ, কলকাতা থেকে ॥ মাত্র ৩ বল। সব স্বপ্ন ল-ভ- হয়ে গেল। মুশফিকুর রহীম আউটের পর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও আউট হলেন। শেষ বলে যখন জিততে ২ রান দরকার এমন সময় আউট হয়ে যান মুস্তাফিজুর রহমান। তাতেই শেষ হয়ে যায় সব আশা! এ তিন বল বাদ দিলে পুরো ম্যাচজুড়েই ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলেছে বাংলাদেশ। বোলিংয়ে যেমন ভারতের মতো শক্তিশালী ব্যাটিং স্তম্ভকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তেমনি ব্যাটিংয়ে জয়ের একেবারে কাছে চলে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ম্যাচে রোমাঞ্চ তৈরি হয়েছিল। তবে শেষ তিন বলেই হতাশা ঘিরে ধরল! তিন বলে তিন উইকেট পড়ায় হারই হলো নিয়তি। এরপরও প্রশংসার জোয়ারেই ভাসছে বাংলাদেশ দল ও দলের ক্রিকেটাররা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই যেমন বাংলাদেশের খেলায় মুগ্ধ। টুইটে লেখেন, ‘দারুণ রোমাঞ্চকর এক ম্যাচ। ভারত দলকে অভিনন্দন। এমন জেতায় খুবই খুশি। দারুণ খেলেছে বাংলাদেশ।’ এখন প্রশংসায় ভাসলে হবে না। এ ক্ষত দূর করতে হবে। সেই ক্ষত দূর করা সম্ভব, যদি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শনিবার যে টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ রয়েছে, সেটিতে ভাল করা যায়। এ ম্যাচটি খেলতে বৃহস্পতিবার বিকেলেই কলকাতায় পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। আজ একদিনের অনুশীলন শেষে শনিবারই শেষ ম্যাচটি খেলতে নামতে হবে। এর আগে হতাশা থাকলেও দারুণ খেলেছে যে বাংলাদেশ, সেটিকেই পুঁজি করতে হবে এখন। আসলেই দারুণ খেলেছে মাশরাফিরা। ভারতকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। ‘হায়-হায়’ রব উঠে গিয়েছিল। ভারতের ভাগ্য ভাল যে জয়টি শেষপর্যন্ত তাদের হাতেই ধরা দিয়েছে। তীরে এসে তরী ডুবেছে বাংলাদেশের। সেটি যেন মুশফিকের জন্যই হলো। ৩ বলে জিততে ২ রানের প্রয়োজন ছিল। মুশফিক যেই আউট হলেন, এরপরই যেন সব শেষ হয়ে গেল। মুশফিক তাই ফেসবুক ভ্যারিফাইড পেজে ক্ষমাও চেয়েছেন। লিখেছেন, ‘আমি জানি গতকালের (বুধবার) হারটি আপনাদের জন্য অনেক বেদনাদায়ক ছিল। কিন্তু দলের সকলেই প্রতি ম্যাচে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে খেলে। তাই আমারও দলের সবার জন্যই পরাজয়টা কষ্টকর ছিল। এ রকম সময় আমার এভাবে আউট হওয়া ঠিক হয়নি। হয় তো আমার জন্যই দল হেরে গেছে। সেক্ষেত্রে দেশবাসীর কাছে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আশা করি এটা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আপনাদের মুখে আবারও হাঁসি এনে দিতে পারব।’ মুশফিক যদি হারে অভিযুক্ত তালিকায় থাকেন, তাহলে মাহমুদুল্লাহও সেই তালিকায় থাকছেন। দলের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন মাহমুদুল্লাহ। মুশফিক আউট হওয়ার পর যেখানে ১ রান নিলেও ম্যাচটি টাই হতো, সেখানে ছক্কা হাঁকাতে যান মাহমুদুল্লাহ। সবাইকে হতাশায় ডোবান। এমন পরিস্থিতিতে মাহমুদুল্লাহকে কিভাবে খেলা উচিত ছিল, তা যেন বুঝিয়ে দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিই। বলেছেন, ‘ক্রিকেট খেলাটাই এমন। মাহমুদুল্লাহর ওই শটটায় যদি ছক্কা হতো তাহলে সবাই তার সাহসিকতার প্রশংসা করত। কিন্তু সেটা না হওয়ায় এখন তার সমালোচনা হবে। এটাই ক্রিকেট।’ এই ভুল থেকে মাহমুদুল্লাহকে শিক্ষা নেয়ার পরামর্শ দিয়ে ধোনি বলেন, ‘এমন মুহূর্তে অনেক সময় বড় শট খেলে ম্যাচ শেষ করে দিতে ইচ্ছা করে। ভাল ব্যাটিং করতে থাকলে এমন ইচ্ছা আসাটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে হাতে উইকেট থাকলে। এ সময় মনে হয় আউট হয়ে গেলে অন্য কেউ তো এসে শেষ করতে পারবে। কিন্তু সেটা সব সময় একই রকম হয় না। মাহমুদুল্লাহর জন্য এটাই শিক্ষা। এখান থেকে সে শিক্ষা নিতে পারে।’ মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ আউটের পর যখন ১ বলে জিততে ২ রান প্রয়োজন, এমন সময়ে মুস্তাফিজ আউট হয়ে যান। শুভাগত হোম ব্যাটটাও ভাল করেন। অথচ বল ব্যাটেই লাগাতে পারলেন না। মুস্তাফিজ দৌড় না দিলে তো ক্রিজে দাঁড়িয়েই থাকতেন শুভাগত! তবে এখানে ধোনি দেখিয়েছেন আসল মেজাজ। ‘ক্যাপ্টেন কুল’ যে তাকে বলা হয়, এমনিতেই নয়। হাতের গ্লাভস খুলে রাখেন। দৌড়ে এসে মুস্তাফিজকে আউটও করে দেন। তখনই শেষ হয়ে যায় জেতার স্বপ্ন। আর এ স্বপ্ন শেষ হলেও বাংলাদেশ যে ভাল খেলে ম্যাচটিতে, ভারতকে চেপে ধরে তাতে প্রশংসাতেও ভাসছে বাংলাদেশ। ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে তা ছুঁয়ে গেছে কিংবদন্তি ক্রিকেটারদেরও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ব্রায়ান লারা টি২০ বিশ্বকাপের প্রতি ম্যাচ মনযোগ দিয়ে দেখছেন। ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ নিয়ে তার আগ্রহ ছিল ব্যাপক। ভারতের কাছে বাংলাদেশ মাত্র ১ রানে হারের পর লারা টুইট করেন, ‘ওয়াও!!! কী বলব, বুঝতে পারছি না। অবিশ্বাস্য বাংলাদেশ, সৌভাগ্য ভারতের’। ভারতের সাবেক ক্রিকেটার বিষেণ বেদি টুইটারে লেখেন, ‘ভারত আজ জেতেনি বরং বাংলাদেশ হেরেছে। তারা এমন সুযোগ আর হয় তো পাবে না। ওহ, সত্যি দম বন্ধ হওয়ার মতো খেলা।’ ভারতের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান শিখর ধাওয়ান ক্যারিয়ারের সেরা অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন বলে লেখেন, ‘ওহ, দারুণ মজা। এই ধরনের ম্যাচে ক্যারিয়ারের সেরা অভিজ্ঞতা আমার।’ অন্যদিকে টুইটে বিতর্ক ছড়িয়েছেন সুরেশ রায়না। এদিন শেষ ওভারে টানা দুই বলে চার মেরে খুবই আনন্দ প্রকাশ করেন মুশফিকুর রহীম। অনেকটা ম্যাচ জয়ের মতো আনন্দ। তখন তিনি আনন্দে শূন্যে লাফিয়েও ওঠেন। আর এই বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে ব্যাঙ্গ করেছেন সুরেশ রায়না। তিনি টুইটে লেখেন, ‘শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত হাল ছেড়ো না। আর জয় নিশ্চিত হওয়ার আগে উদযাপন করও না।’ রায়না বিতর্ক ছড়ালেও যৌক্তিক কথাই বলেছেন। চূড়ান্ত বিজয়ের আগে কখনই উৎসব করা উচিত নয়। তবে হতাশার হারেও প্রশংসা পাচ্ছে বাংলাদেশ।
×