স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশেষজ্ঞদের মতে, পানি বিশুদ্ধকরণের অন্যতম সহজ পদ্ধতি হলো ফুটিয়ে পান করা। তবে পানি ফোটানোর ক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম পদ্ধতি সবার জানা থাকে না। তাই নিয়ম না মেনে পানি ফোটানো হলেও তার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে সঠিক তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট সময় ধরে পানি ফোটাতে হয়। কিন্তু এ নিয়মটি সবার পক্ষে অনুসরণ করা সম্ভব নয়। এছাড়া নদীর দূষিত পানি সরাসরি ফুটিয়ে পান করাও বিপজ্জনক। কারণ নদীতে পানিতে যে পরিমাণ বিষাক্ত ভারি ধাতু থাকে তা ফুটিয়ে জীবাণু মুক্ত করা সম্ভব হয় না। তবে পানি বিশুদ্ধকরণের ক্ষেত্রে উন্নত শোধনযন্ত্রের সাহায্যে সঠিক নিয়ম মেনে বিশুদ্ধ করা হলে তা ব্যবহারের অনেকটাই নিরাপদ বলে মতো দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন স্বচ্ছ পানিতেও অনেক সময় মিশে থাকতে পারে ক্ষতিকর জীবাণু। অনেকে ফুটিয়ে পানি পান করেন। কিন্তু সঠিক উপায়ে ফুটানো না হলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। পানি ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করার পদ্ধতিটা প্রায় সকলেরই জানা। বেশিরভাগ বাসাবাড়িতে বা পারিবারিক পরিবেশে পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় সরাসরি ডোবা বা জলাশয়ের পানির ক্ষেত্রে অন্তত ২০ মিনিট ধরে ফুটানোর কথা বলা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ডোবা বা জলাশয়ের পানি যদি অধিক দূষিত হয়ে পড়ে বা ভারি ধাতুর অস্তিত্ব পানিতে পাওয়া যায় তাহলে ফুটিয়েও জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব হবে না মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ আমিরুল মোর্শেদ খসরু বলেন, পানি ফুটিয়ে পান করা সবচেয়ে ভাল। তবে পানি ঠিকমতো ফোটানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
আমেরিকার সরকারী পরিবেশ সংরক্ষণ এজেন্সির (ইউএসইপিএ) মতে, ফিল্টারকৃত থিতানো পানি ১ মিনিট ধরে পূর্ণমাত্রায় ফুটালেই কাজ হবে। অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার পানির জন্য ১ মিনিট টগবগ করে ফুটানোই যথেষ্ট। তবে অনেকে বলছেন, এটা পানি ফুটানোর এ পদ্ধতিও সবচেয়ে অদক্ষ পদ্ধতি। পৃথিবীর কোন পানির শোধনাগারে জীবাণুমুক্ত করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয় না। আবার অনেকে পানি দীর্ঘসময় ধরে ফুটান। এটা খুবই ক্ষতিকর। দীর্ঘ সময় ধরে পানি ফুটালে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। আর পানিতে মিশ্রিত ধাতব উপাদানের মাত্রা বেড়ে যায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য অপকারী। এ জন্য পানি বিশুদ্ধ করণের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। এক্ষেত্রে উন্নত শোধনযন্ত্রের সাহায্যে পানি বিশুদ্ধ করেও পান করা যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা কলছেন, পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানি জীবাণুমুক্ত করার জন্য অতিবেগুনি রশ্মি বিকিরণ (আল্ট্রা ভায়োলেট রেডিয়েশন) খুবই কার্যকরী একটা পদ্ধতি। যে কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, সিস্ট এবং স্পোর ধ্বংস করতে এই অতিবেগুনি রশ্মি অত্যন্ত শক্তিশালী একটা অস্ত্র। তবে এর মাধ্যমে শোধন করতে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এছাড়া অতিবেগুনি রশ্মি পানির বেশি গভীরে প্রবেশ করতে পারে না, তাই পানিকে অগভীর ধারায় প্রবাহিত করতে হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন পানিকে তাৎক্ষণিকভাবে জীবাণুমুক্ত করলেও পরবর্তীতে সেই পানি সরবরাহ লাইনে/পাইপে অন্য কোন জীবাণু উৎস থেকে দূষিত হলে সেটা ঠেকানো যায় না। তবে পানি বিশুদ্ধকরণের আরও একাধিক পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দূষিত পানিকে সূর্যালোকে রেখে দিলে ডায়রিয়া সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া অকার্যকর হয়ে যায়। অন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদ্ধতিতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় পানি শোধন করা যাবে না। যেসব প্রত্যন্ত স্থানে পরিশোধিত পানির অন্য কোন উপায় নেই সেখানে এটা জীবন রক্ষা করতে পারে। দুর্গম এলাকায় ভ্রমণকারী এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত অঞ্চলে দূষিত পানি জনিত রোগ ঠেকাতে এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা শহরে সরবরাহকৃত পানির একটা বড় অংশ ডিপ টিউবওয়েলের পানি। যাতে জীবাণু থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে সরবরাহ লাইনে লিক দিয়ে দূষণ হওয়া অসম্ভব নয়। অনেক এলাকাতেই পানির লাইন পয়ঃনিষ্কাশন নালার মধ্যদিয়ে গেছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া বাসাবাড়ির পানির ট্যাঙ্কের পানিতে জীবাণু প্রবেশের অন্যতম পথ। তাই এই ট্যাঙ্কগুলো এবং ব্যবহারের শুরুতে পুরো পানি সরবরাহ পাইপগুলোকে জীবাণুমুক্ত করে নেয়া জরুরী। অনেকেই ফিল্টারের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ করে নিচ্ছেন। কিন্তু ফিল্টারগুলো মানসম্মত ও বিশুদ্ধকরণে কার্যকর কিনা সেটাও যাচাই করা জরুরী। অনেক সময় বাজারে ফিল্টারের নামে নকল ফিল্টারও পাওয়া যায়। এ কারণে পানি বিশুদ্ধ করে পান করতে এবং সুস্থ জীবনযাপনের জন্য পানি ব্যবহারে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: