ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথমবার ২১ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীর হাতে আসছে বাড়তি টাকা;###;অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করবে

এবারের বৈশাখী উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৫ মার্চ ২০১৬

এবারের বৈশাখী উৎসব

এম শাহজাহান ॥ মনিরুল ইসলাম সচিবালয়ের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। পনেরো বছরের চাকরি জীবনে সরকারী এই কর্মকর্তা এবার প্রথম বারের মতো নববর্ষের ভাতা পাচ্ছেন। অষ্টম পে স্কেল ঘোষণার পর তাঁর স্ত্রী নূরন নাহার চামেলীর কাছে সবচেয়ে আনন্দের খবর ছিল বাংলা নববর্ষ ভাতা চালুর বিষয়টি। কারণ নববর্ষের কেনাকাটা করতে স্বামী মনিরুল ইসলামকে এবার আর আর্থিক চাপে পড়তে হবে না। তার মতো দেশের প্রায় ২১ লাখ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী নববর্ষের ভাতা পেতে যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নববর্ষের এই ভাতায় অর্থনীতিতে এবার নতুন গতি সঞ্চার হবে। চাঙ্গা হবে অর্থনীতি। ইতোমধ্যে বেসরকারী খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নববর্ষ ভাতা চালুর ব্যাপারে দাবি উঠেছে। কোন কোন লাভজনক প্রতিষ্ঠান এবার থেকেই নববর্ষ ভাতা প্রদান করবে বলে জানা গেছে। ভাতার কয়েক হাজার কোটি টাকার পুরোটাই খরচ হবে পহেলা বৈশাখের উৎসবে। জানা গেছে, সরকারী চাকুরেদের অষ্টম পে স্কেলে এবার সবচেয়ে আলোচিত খবর ছিল নববর্ষ ভাতা চালু। মূল বেতনের ২০ শতাংশ নববর্ষ ভাতা হিসেবে দেয়া হবে। একই সঙ্গে নতুন স্কেলে সরকারী চাকরিজীবীদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। ইতোমধ্যে বকেয়া বেতন হাতে এসেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এ ছাড়া এ বছর থেকে সব সম্প্রদায়ের মানুষ একই সঙ্গে ও একই সময় এই ভাতা পেতে যাচ্ছেন। ধর্মীয় উৎসব বোনাসের বাইরে এটিই দেশের প্রথম সার্বজনীন উৎসব ভাতা। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের সঙ্গে খুশি ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তারাও। নববর্ষ কেনাকাটাকেন্দ্রিক বাণিজ্য বাড়াতে উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। ফ্যাশন হাউসগুলো থেকে শুরু করে ফার্নিচার, ইলেক্ট্রনিক্স, স্বর্ণসহ সব শিল্পে সবখানে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আগামী সপ্তাহ নাগাদ ভাতা পাওয়ার পরই মূল কেনাকাটা শুরু হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এপ্রিলের প্রথম থেকেই মার্কেট বিপণি বিতান, শপিং মল, ফ্যাশন হাউসগুলো ক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে। সারাদিন ধরে চলবে কেনাকাটা। ফ্যাশন হাউসগুলো পহেলা বৈশাখকেন্দ্রিক পোশাক-আশাক ইতোমধ্যে শোরুমগুলোতে আনতে শুরু করেছে। ক্রেতারা আগাম উঁকিঝুঁকি মারছেন ফ্যাশন হাউস ও পোশাক-প্রসাধনীর জন্য বিখ্যাত বেইলি রোড, আজিজ মার্কেট শাহবাগ, এ্যালিফ্যান্ট রোড, পলওয়েল সুপার মার্কেট, ধানম-ি হকার্স, চাঁদনী চক ও গাউশিয়া মার্কেটের দোকানগুলোতে। এমনকি অভিজাত শপিং মল বসুন্ধরা সিটি, ইস্টার্ন প্লাজা এবং যমুনা ফিউচার পার্কের শোরুমগুলোতেও শোভা পাচ্ছে বাংলা নববর্ষকেন্দ্রিক পোশাক সামগ্রী। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এসএ কাদের কিরণ আশাবাদ ব্যক্ত করে জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারী চাকুরেদের নববর্ষ ভাতা এবারের পহেলা উৎসবকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। হাতে টাকা আসলে চাহিদা বাড়বে। আর তাই চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহে এবার ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ফ্যাশন হাউসগুলোতে শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, টি-শার্টসহ বিভিন্ন পোশাক সামগ্রী আসতে শুরু করেছে। এ বছর চাহিদা বাড়বে এ আশায় উদ্যোক্তারা পহেলা উৎসবকেন্দ্রিক পণ্যসামগ্রী উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন। এ ছাড়া চলতি বছর রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। সব মিলিয়ে আশা করছি, নববর্ষকেন্দ্রিক অর্থনীতি ভাল যাবে। এদিকে, বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্যের এক অনন্য উৎসব পহেলা বৈশাখ। এ উৎসবকে ঘিরে তরুণ-তরুণীরা যেন এক দিনের জন্য হলেও বাঙালী হতে চায়। তাই শুধু ঐতিহ্যের লালন নয়, দেশী পণ্যের বাজার সম্প্রসারণেও ভূমিকা রাখছে পহেলা বৈশাখ। তরুণদের ফতুয়া-পাঞ্জাবি আর তরুণীদের দেশী ফ্যাশনের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, মাটির অলঙ্কার, ফুল আর শুভেচ্ছা কার্ডই যেন দখল করে নেয় বৈশাখ উৎসবের বাজার। হোটেল-রেস্তরাঁগুলোয়ও থাকে পান্তা-ইলিশসহ বাঙালী খাবারের সমাহার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দিনটিকে ঘিরে প্রতি বছর তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ছে। পহেলা বৈশাখ ঘিরে বেশিরভাগ দোকান বাড়তি আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বেচাকেনাও সাধারণ সময়ের তুলনায় অনেক বেশি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ সময়ে দেশীয় ফ্যাশনের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে দেশীয় পোশাকের ব্র্যান্ড অঞ্জনস, নিপুণ, রঙ, বাংলার মেলা, আড়ং, নবরূপা, নন্দন কুঠির, কীর্ত্তন খোলা, নিত্যউপহার, প্রবর্তনা, চরকা, কে-ক্র্যাফট, গ্রামীণ সম্ভার, অন্যমেলা, চিলেকোঠা, সাদাকালো ও নীলাঞ্জনাসহ আরও কিছু দেশীয় প্রতিষ্ঠানের পোশাকের প্রতি ক্রেতাদের বাড়তি আকর্ষণ রয়েছে। জানা গেছে, বৈশাখ ঘিরে দেশের বুটিক ও ফ্যাশন হাউসগুলো নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক নিয়ে হাজির হচ্ছে। দেশের উচ্চবিত্ত শ্রেণী তাদের বৈশাখী পোশাকের জন্য এসব বুটিক ও ফ্যাশন হাউসে এসে ভিড় করছেন। রাজধানীসহ সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার বুটিক ও ফ্যাশন হাউস রয়েছে। ঢাকার কেরানীগঞ্জ, সদরঘাট, জিঞ্জিরা এবং নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন জায়গায় তৈরি করা হচ্ছে বৈশাখ পোশাক। এসব পোশাক এখন শোভা পাচ্ছে রাজধানীসহ সারাদেশের ফ্যাশন হাউসগুলোতে। এ প্রসঙ্গে আজিজ সুপার মার্কেটের মনি ফ্যাশন হাউসের স্বত্বাধিকারী মোঃ বোরহান উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন কারণে পহেলা উৎসবের ব্যবসা-বাণিজ্য ভাল যায়নি। তবে এ বছর সরকারী চাকরিজীবীরা নববর্ষ ভাতা পাচ্ছেন। তাদের এই টাকা মার্কেটে আসলে অবশ্যই বেচাবিক্রি ভাল হবে। তিনি বলেন, এ বছর ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতিও ভাল। সবকিছু ঠিক থাকলে আশা করছি, নববর্ষে ক্রেতারা কেনাকাটা করতে মার্কেট আসবেন। তিনি জানান, প্রতিবছর বৈশাখী জামা কাপড়ের চাহিদা বেড়ে চলেছে। ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন জায়গার উদ্যোক্তারা এসব পোশাক সরবরাহ করে থাকেন। এবারের পহেলা বৈশাখের উৎসবে শতাধিক ভিন্ন ডিজাইন ও ভিন্ন নামের বৈশাখী পোশাক বাজারে আনা হয়েছে।
×