ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বাধীনতা দিবসের আয়োজন

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ২৫ মার্চ ২০১৬

স্বাধীনতা দিবসের আয়োজন

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ ২৫ মার্চ ১৯৭১। হঠাৎ করে থেমে গেল ঢাকা। নেমে এলো কবরের নিস্তবদ্ধতা। দানবের অশুভ শক্তির পদভারে কাঁপছিল পুরোদেশ। মানুষের রক্তের স্রোতে ভেসে যাচ্ছিল সোঁদা মাটি। গন্ধ মিলিয়ে গেল হাসনাহেনার। চারদিকে শুধুই রক্তের গন্ধ। বাঁচার জন্য নারী-পুরুষের আকুতি। কোন কিছুতেই পাকিস্তানী দানব, পশুশক্তির সৈন্যদের মন গলে না। ঘরে ঘরে চলে নির্বিচারে হত্যাকা-। ২৫ মার্চ কালরাত্রীর মাধ্যমে স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশীদের প্রতি নির্যাতনের শুরু হয়। মর্মান্তিক এই দিবস স্মরণ এবং স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বরাবরের মতো দেশব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। সেই আয়োজন নিয়ে এ প্রতিবেদন। বিটিভিতে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ॥ স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম স্মারক জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ। বিশ্বের অন্যতম প্রেরণাদায়ী এই ভাষণটি ইতিহাসের সেরা ভাষণ হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বের অন্যতম সেরা নেতা হিসেবে জাতির জনক তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এ ভাষণ দিয়ে জাতিকে স্বাধীনতার সংগ্রামের আহ্বান জানিয়েছিলেন। জাতির জনকের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন। আগামীকাল বিকেল ৩-০৫ মিনিটে ভাষণটি সম্প্রচার করা হবে বলে জানা গেছে। বাংলা একাডেমিতে ‘অপারেশন জ্যাকপট’ ॥ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নাগরিক নাট্যাঙ্গন ইনস্টিটিউট অব ড্রামার প্রযোজনায় ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নাটকের দ্বিতীয় মঞ্চায়ন হবে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায়। ড. তানভীর আহমেদ সিডনী রচিত এ নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন ড. শাহাদাৎ হোসেন নীপু। নাটক সম্পর্কে নির্দেশক জানান, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এ নাটকে দেখা যাবে একদল নৌ মুক্তিযোদ্ধা ভারতে প্রশিক্ষণ নেয়। তারা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে অপারেশনের জন্য আসে। তারা পাড়ি দেয় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও রাজাকার-আলবদর অধ্যুষিত এলাকা। মুক্তিযোদ্ধাদের যাত্রাপথে শঙ্কা থাকলেও সহায়তা পায় স্থানীয় বাঙালীদের। তাদের মনে জাগরুক বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। তারা জানে জয় ছিনিয়ে আনতে হবে। একজন যোদ্ধার প্রাণে তাঁর বাবার মৃত্যুশোক সে ভুলতে পারেন না। বাবার মৃতদেহ উঠোনে। আরেকজন যোদ্ধার স্ত্রী হানাদার বাহিনীর লালসা ও হিংস্রতার স্বীকার হয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে। মুক্তিযোদ্ধারা যেন স্বজনের হত্যা আর দেশকে মুক্ত করার জন্য লড়াইয়ের মাঠে নেমেছে। অবশেষে তারা বন্দরের জাহাজ পুড়িয়ে দেয়, দেশ স্বাধীনতার পথে পা বাড়ায় এক ধাপ। মূলত বাঙালীর মুক্তিসংগ্রামকে শিল্পের ভূমিতে চিত্রিত করার প্রয়াস এ নাটক। নাটকের অভিনয়শিল্পীরা হলেন- ফয়সাল, রাজীব, পরান, ধীরেন, উপল, অন্তরা, ইমরান, ইনামুল হক, ত্রিশিসহ অনেকে। আর টিভির আঁধার কাটুক হাজার আলোয় ॥ আজ শুক্রবার ২৫ মার্চ সেই কালরাত। বাঙালীর জীবনে এক দগ দগে ক্ষত। যে ক্ষত ইচ্ছে করলেও কোন দিন মুছে ফেলা যাবে না । সেই ভয়াল কালোরাত্রি স্মরণ করতে আজ শুক্রবার আরটিভি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে আয়োজন করা হয়েছে ‘আঁধার কাটুক হাজার আলোয়’ প্রদীপ প্রজ্বলন অনুষ্ঠান। যেখানে কয়েক হাজার মানুষের অংশগ্রহণে আজ রাত ১২টায় মোমবাতি জ্বেলে শহীদদের স্মরণ করবেন কালোরাত্রিকে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিবর্গরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শহীদ-বুদ্ধিজীবীর পরিবার, ছাত্রছাত্রী ও নানা পেশার মানুষেরা। ‘আঁধার কাটুক হাজার’ আলোয় অনুষ্ঠান শুরু হবে সরাসরি আরটিভিতে রাত ৯-৫০ মিনিটে থেকে। লায়লা হাসানের কোরিওগ্রাফিতে থাকছে দলীয় নৃত্য নটরাজ। স্বাধীন বাংলা বেতারে শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, কল্যানী ঘোষ, অণিমা রায় ও তার দল, কাদেরী কিবরিয়া গান গাইবেন। স্মৃতিচারণ ও কবিতা আবৃত্তি করবেন সৈয়দ হাসান ইমামসহ স্বাধীন বাংলা বেতারের কণ্ঠ সৈনিকরা। অনুষ্ঠানে আরও স্বাধীনতার গান পরিবেশন করবেন, খুরশিদ আলম, দিঠি আনোয়ার, চম্পা বণিক, সুমন রাহাত, মামুন জাহিদ, পুতুল, ইবনে রাজন, লুইপা, ঝিলিক, ঐশি, স্বর্ণময়ী, ইউসুফ প্রমুখ। এছাড়া আবৃত্তি করবেন শিমুল মুস্তাফা, ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়, মৃদুলা, ঝর্ণা সরকার, রোকেয়া প্রাচী ও বৃন্দ আবৃত্তি দল। কোরিওগ্রাফার কবিরুল ইসলাম রতন ও ইভান শাহরিয়ার সোহাগের পরিচালনায় থাকছে দুটি দলীয় নৃত্য। ‘যুদ্ধ ৭১’ ॥ মার্চ মাস স্বাধীকার আন্দোলন তথা বাঙালীর মুক্তির মাস। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রেক্ষাপট এ মাসেই তৈরি হয়। তাই মার্চ মাসজুড়ে প্রতিদিন প্রচারের জন্য একুশে টেলিভিশন এই মুক্তির প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মাণ করেছে তথ্যভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘যুদ্ধ ৭১’। রঞ্জন মলিকের প্রযোজনায় তথ্যভিত্তিক অনুষ্ঠানটি প্রচার হচ্ছে মার্চ মাসজুড়ে প্রতিদিন রাত ৮-৩০ মিনিটে। মুক্তিযুদ্ধকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য নির্মিত এই অনুষ্ঠানটিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নির্মাণ এবং চূড়ান্ত বাস্তবায়ন কিভাবে তৈরি হয় তা তুলে ধরা হবে। বিশেষ করে মহান স্বাধীনতায় ডাকসুর ভূমিকা, ৭ মার্চের ভাষণ, নারী মুক্তিযোদ্ধা, ঢাকায় গেরিলা অপারেশন, মুজিবনগর সরকার, বীরাঙ্গনা নারী, কিশোর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র, গণকবর ও বধ্যভূমি প্রভৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যচিত্র এবং বিশিষ্টজনদের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানটির বিভিন্ন পর্বে দর্শক উপভোগ করবেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধর ওপর ভিত্তি করে নির্মিত বিভিন্ন চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপটও তুলে ধরা হচ্ছে অনুষ্ঠানটিতে।
×