ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শাহরিয়ার কবির

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি কেন প্রয়োজন

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ২৫ মার্চ ২০১৬

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি কেন প্রয়োজন

’৭১-এর ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের ঘুমন্ত, নিরস্ত্র মানুষের ওপর। রাজধানী ঢাকায় প্রথমে তারা হামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারীদের আবাসে এবং পুলিশ ও সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী ইপিআর-এর সদর দফতরে। এরপর তারা ধ্বংস করেছে ঢাকার বস্তি, বাজার এবং হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাসমূহ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীদের ঘরে ঢুকে কিংবা ঘর থেকে বের করে এনে হত্যা করেছে তারা। বাজার ও বস্তিগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আগুনের আতঙ্কে হাজার হাজার মানুষ যখন ঘর থেকে দলে দলে বেরিয়ে এসেছে তখন ওদের ওপর মেশিনগানের গুলি বর্ষিত হয়েছে একটানা, যতক্ষণ না প্রতিটি মানুষ নিহত হয়। বহু মানুষ নিহত হয়েছে ঘুমন্ত অবস্থায়। এসব মানুষ জানতেও পারেনি কেন তাদের হত্যা করা হচ্ছে কিংবা কারা হত্যা করছে। ‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর নামে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে কেবল ঢাকায় পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পর সোভিয়েত সংবাদ সংস্থা তাস বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় তদন্ত করে মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ লাখ বলে ঘোষণা করেছিল। স্যামুয়েল টটেন সম্পাদিত ‘সেঞ্চুরি অব জেনোসাইড’ গ্রন্থে বাংলাদেশের গণহত্যায় নিহতের সংখ্যা ৩০ লাখ বলা হয়েছে। ‘এনসাইক্লোপেডিয়া আমেরিকানা (২০০৩), ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক’ ও ‘কম্পটন্স এনসাইক্লোপেডিয়া’তেও ৩০ লাখের কথা বলা হয়েছে। শুধু ’৭১-এর ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে ঢাকায় নিহতের সংখ্যা সিডনির ‘মর্নিং হেরাল্ড’ লিখেছে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ (২৯-৩-৭১), আর ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ লিখেছে ১০ হাজার (২৯-৩-৭১)। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমেরিকার ‘সেন্ট লুইস পোস্ট’-এ (১-৮-৭১) যুক্তরাষ্ট্রের একজন শীর্ষস্থানীয় সরকারী কর্মকর্তার বরাত দিয়ে লেখা হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পোল্যান্ডে নাৎসিদের গণহত্যার পর এই হত্যাকাণ্ড হচ্ছে সবচেয়ে নৃশংস। সরকারী হিসাব অনুযায়ী প্রথম চার মাসে ২ লাখ থেকে ৭ লাখ বাঙালী নিহত হয়েছে এবং ৬৫ লাখ শরণার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর প্রতিনিধি সিডনি শ্যানবার্গকে ৩০ জুন ’৭১ তারিখে ঢাকা থেকে বহিষ্কার করা হয়। নয়াদিল্লী এসে তিনি ঢাকার কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে বলেছেন, প্রথম তিন মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ বাঙালীকে হত্যা করা হয়েছে। সেই সময় ঢাকায় অবস্থানরত ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্রিংও বলেছেন, ২৫ মার্চ গণহত্যার যে চিত্র তিনি ঢাকায় প্রত্যক্ষ করেছেন এবং পরবর্তী ৯ মাসে সমগ্র বাংলাদেশে যা অব্যাহত ছিল তার ভিত্তিতে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ লাখ হতে পারে। মাত্র ৯ মাসে ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশে ৩০ লাখ মানুষের হত্যার ঘটনা সভ্যতার মানচিত্রে সবচেয়ে নৃশংস গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে। শহীদজননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আমরা ২৫ মার্চ গণহত্যার কালরাত্রি পালনের কর্মসূচী শুরু করেছিলাম ১৯৯৩ সাল থেকে। দুই যুগ ধরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যেমন একটি সংগঠন থেকে ধীরে ধীরে জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে, একইভাবে মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবার ক্যানভাসও ক্রমশ প্রসারিত হয়েছে। খালেদা-নিজামীদের দুঃশাসনকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নির্মূল কমিটির কয়েক শ’ কর্মী ও শুভানুধ্যায়ী ছাড়া ২৫ মার্চ গণহত্যার ভিকটিমদের স্মরণ করবার গরজ তেমন দেখা যায়নি। দুঃসময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর রাজধানীতে বহু সংগঠন ২৫ মার্চ গণহত্যার ভিকটিমদের শ্রদ্ধা জানাবার জন্য মোমবাতি প্রজ্বলনসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী পালন করছে। ২০০৯ সালে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আমরা সরকারীভাবে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ঘোষণা এবং এই দিনটি আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের জন্য প্রচারাভিযান চালাচ্ছি। গত এক দশকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামেও আমরা বলেছি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণহত্যার ভিকটিমদের স্মরণ, গণহত্যার অবসান এবং গণহত্যাকারীদের বিচার দাবির জন্য জাতিসংঘের একটি ঘোষিত দিন থাকা প্রয়োজন, যেখানে ২৫ মার্চের পক্ষে আমাদের যুক্তি তুলে ধরেছি। আমাদের এবং গণহত্যার অন্যতম ভিকটিম আর্মেনিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ বছরের একটি দিনকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও গত বছর (২০১৫) ১১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিকভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। কারণ ১৯৪৮ সালের এই দিন গণহত্যাকে নিন্দা জানিয়ে গণহত্যা নিবারণের জন্য জাতিসংঘ গণহত্যা কনভেনশন ঘোষণা করেছিল। এর ফলে আমাদের ১২ বছরের দাবির একটি অংশের আর কার্যকারিতা থাকছে না। এর পরিবর্তে আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশে গণহত্যার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য প্রচার অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। কারণ পশ্চিমের শক্তিধর দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশ এখনও বাংলাদেশের গণহত্যাকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। আর্মেনিয়ার গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য প্রায় ১০০ বছর প্রচার অভিযান চালাতে হয়েছে। ২০০৫ সালে আমরা ঢাকায় আর্মেনিয়ার গণহত্যার ৯০তম বার্ষিকী পালন করেছিলাম। তখন থেকে বিদেশে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র ২৫ মার্চের কর্মসূচীতে আর্মেনিয়ানরাও যোগ দিচ্ছে। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রতিবছর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ২৫ মার্চ কালরাত্রি পালনের অনুষ্ঠানে সরকারের মন্ত্রীরা এবং নীতিনির্ধারকরা বহুবার বলেছেন, মহাজোট সরকার ‘২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করবে, যা এখনও করা হয়নি। প্রতিবছরের মতো এবারও আমরা ২৫ মার্চ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার ৪৫ বছর উপলক্ষে ৪৫টি মশাল প্রজ্বলন করব এবং মোমের আলোর মিছিল নিয়ে জগন্নাথ হলের বধ্যভূমিতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের প্রতি গভীরতম শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ’৭১-এর গণহত্যাকারী, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠনের দিন হিসেবে ২৫ মার্চকেই বেছে নিয়েছে। মহাজোট সরকারের জন্য ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ঘোষণা কঠিন কোন কাজ না হলেও বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন খুব সহজ হবে বলে মনে হয় না। বিদেশে বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তানী লবি অনেক শক্তিশালী। আমাদের এই উদ্যোগ তারা সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগ করে প্রতিহত করবে। গণহত্যাকারী ও পাকিস্তানপ্রেমীদের আগ্রাসী অপপ্রচারের কারণে পশ্চিমের বহু গবেষক এখনও মনে করেন ’৭১-এর ৯ মাসে বাংলাদেশে ৩০ লাখ নিহতের সংখ্যা অতিরঞ্জিত, এটি মুক্তিযুদ্ধ নয় গৃহযুদ্ধ, পাকিস্তানীরা যত না বাঙালী হত্যা করেছে তার চেয়ে বেশি হত্যা করা হয়েছে পাকিস্তানী অবাঙালীদের ইত্যাদি ইত্যাদি। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের জীবনের বিনিময়ে অভূতপূর্ব বিজয়ের পরও এই দেশটি অধিকাংশ সময় শাসিত হয়েছে ’৭১-এর গণহত্যাকারী এবং তাদের সহযোগী পাকিস্তানপন্থীদের দ্বারা। যার ফলে পাকিস্তানীরা যখন বাংলাদেশের গণহত্যা অস্বীকার করেছে তখন আমাদের সরকার নীরব থেকেছে, অথচ এক শ’ বছর আগে সংঘটিত আর্মেনিয়ার গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য সে দেশের সরকার ও জনগণ সম্মিলিতভাবে কাজ করে অবশেষে তা অর্জন করেছে। ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আর্মেনিয়ার প্রস্তাবের কারণে ৯ ডিসেম্বরকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণা করেছে। গত বছর (২০১৫) ৯ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে প্রদত্ত বাণীতে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, ‘এই নতুন আন্তর্জাতিক দিবস উদ্যাপনকালে জঘন্য মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে মানুষদের রক্ষা এবং সর্বজনীন মানবাধিকারবোধ উর্ধে তুলে ধরার জন্য আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।’ গণহত্যা প্রতিরোধের জন্য জাতিসংঘের বিশেষ উপদেষ্টা আদমা দিয়ে বলেছেন, ‘এই দিনটির দুটি বৈশিষ্ট্য আছে। একটি অতীত সংক্রান্ত, অপরটি ভবিষ্যত সংক্রান্ত। এই দিনটি একই সঙ্গে স্মৃতি এবং কর্মোদ্যোগের। কর্মোদ্যোগ হচ্ছে স্মৃতির ফলশ্রুতি।’ এই দিন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি মোগেনস লিকেটফট বলেছেন, ‘গণহত্যা এবং এ ধরনের অন্যান্য নৃশংস অপরাধ প্রতিরোধের জন্য জাতীয় এবং আঞ্চলিকভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’ গণহত্যা প্রতিরোধ করতে হলে গণহত্যাকারীদের বিচার ও চরম দ-ের বিকল্প কিছু নেই। বাংলাদেশে ’৭১-এর গণহত্যাকারীদের চলমান বিচার শুধু গণহত্যাকে নিরুৎসাহিত করবে না, ধর্মের নামে এই গণহত্যার দর্শনকেও বিশ্ববাসীর নিকট উন্মোচন করবে। ২০১০-এর ২৫ মার্চ স্থাপিত ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) গত ৬ বছরে ২৬ জন শীর্ষস্থানীয় গণহত্যাকারীর বিচার হয়েছে। আমরা গত ৩ বছর ধরে বলছি ব্যক্তির পাশাপাশি গণহত্যাকারীদের সংগঠন, বিশেষভাবে জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম এবং তাদের ঘাতক বাহিনী ‘শান্তি কমিটি’, ‘রাজাকার’, ‘আলবদর’, ‘আল-শামস’, ‘মুজাহিদ বাহিনী’ প্রভৃতির বিচারও হতে হবে। কারণ যেসব ব্যক্তির বিচার হচ্ছে তারা ব্যক্তিগত শত্রুতাবশত কাউকে হত্যা করেনি। ’৭১-এর গণহত্যা ঘটেছে সরকারী ও দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। জামায়াতের দর্শন ‘মওদুদীবাদ’ ’৭১-এর গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধকে ইসলামের নামে বৈধতা দিয়েছে। আমাদের ধারাবাহিক দাবির কারণে শেখ হাসিনার সরকার গণহত্যাকারীদের বিচারের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি বা অস্বীকারকারীদের শাস্তির জন্য আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস সংরক্ষণের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা এবং ৩০ লাখ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবার জন্য এ ধরনের আইন প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরী। গণহত্যাকারীরা এবং তাদের দোসররা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার ও মন্ত্রীসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদে স্বাধীনতাবিরোধীরা নিয়োগ পেয়েছেন। জাতির পিতাকে হত্যা করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল জিয়া তথাকথিত অভ্যুত্থান দমনের নামে শত শত মুক্তিযোদ্ধাকে গোপনে প্রহসনের বিচার করে ফাঁসি দিয়েছেন এবং সংবিধানের অভিভাবকরা অসাংবিধানিক সামরিক শাসনকে বৈধতা দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা এখনও আমাদের দেখতে হচ্ছে। আমলার ঘুষ খাওয়ার প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধা আত্মহত্যা করেন, প্রহসনের তদন্ত হয়; কিন্তু দায়ী ব্যক্তি বিচার ও শাস্তি থেকে অব্যাহতি উপভোগ করেন। আগামীতে আইসিটির রায়ের পর্যবেক্ষণে আমরা দেখতে চাই গণহত্যাকারী সংগঠনের কোন সদস্য যেন রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী পদে থাকতে না পারেন। যদি তা না হয় তাহলে গণহত্যার ভিকটিমদের পরিপূর্ণ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হবে। বাংলাদেশে গণহত্যাকারীদের বিচার প্রশ্নবিদ্ধ ও বানচালের জন্য জামায়াত-বিএনপি জোট দেশে এবং বিদেশে বহুমাত্রিক তৎপরতা চালাচ্ছে। গণহত্যাকারীদের দল হিসেবে জামায়াতের বিচার অবিলম্বে শুরু না করলে এসব দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ও তৎপরতা মোকাবেলা করা যাবে না। বর্তমান বিশ্বে আল কায়েদা ও আইএস যে গণহত্যা চালাচ্ছে তাদের আদর্শ হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী, হাসান বান্না ও কুতবের রচনাবলি। আদর্শিকভাবে ’৭১-এর গণহত্যার সঙ্গে আল কায়েদা, আইএসের গণহত্যা একই সূত্রে গাঁথা- এটি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে পারলে বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন কঠিন হবে না। ২৩ মার্চ ২০১৬
×