ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাত দিন পরে বাসায় ফিরলেন জোহা

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২৪ মার্চ ২০১৬

সাত দিন পরে বাসায় ফিরলেন জোহা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে হদিস মিলেছে আলোচিত তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহার। সাত দিন পর তাকে কে বা কারা বাসায় দিয়ে যায়। পরিবারের তরফ থেকে ওই ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোক বলে দাবি করেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তরফ থেকে বলা হচ্ছেÑ পরিবারের এমন দাবি ভিত্তিহীন। জোহা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পর গণমাধ্যমে নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় এসেছিলেন। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। জোহার চাচা মাহবুবুল আলম বুধবার সকালে সাংবাদিকদের জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে তার ভাতিজা তানভীর হাসান জোহাকে কলাবাগানের বাসায় দিয়ে যায়। যারা জোহাকে বাসায় দিয়ে যায়, তাদের দাবি তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোক। ওই সব লোকের দাবি, জোহা এয়ারপোর্ট রোডে উ™£ান্তের মতো ঘোরাফেরা করছিল। পরে তারাই তার পরিচয় জেনে বাসায় দিয়ে যায়। প্রসঙ্গত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের জমা রাখা টাকার মধ্যে ৮শ’ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ব্যাপক হৈচৈ শুরু হয়। বিষয়টির ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব। র‌্যাবের উর্ধতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে যান। তারা ব্যাংকের সার্ভার স্টেশনসহ সংশ্লিষ্ট নানা জায়গা থেকে ঘটনা জানার জন্য প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে র‌্যাবের তরফ থেকে বিষয়টির ছায়া তদন্ত করা হচ্ছে বলে গণমাধ্যমকে জানানো হয়। এ সময় তানভীর হাসান জোহাও গণমাধ্যমকে ব্যাংকের রিজার্ভ কিভাবে, কোন কোন পদ্ধতিতে হ্যাকাররা লুটে নিতে পারেÑ সে সংক্রান্ত বিশদ বর্ণনা দেন। ওই সময় তিনি নিজেকে সরকারের আইসিটি বিভাগের সাইবার সিকিউরিটি ফোকাল পয়েন্টের কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন। পরবর্তীতে আইসিটি বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে জোহার সঙ্গে বিভাগের কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানানো হয়। তখন জোহা বলেছিলেন, তিনি আগে ওই বিভাগের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এছাড়াও জোহা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লোপাটের ঘটনায় একটি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ছায়া তদন্তকারী হিসেবে কাজ করছেন বলেও গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছিলেন। ইতোপূর্বে তিনি বিদেশী কর্তৃক বহুল আলোচিত ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় এক বিদেশীসহ কয়েকজন ডিবির হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে সহযোগিতাকারী পরিচয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় গত ১৫ মার্চ মঙ্গলবার বিকেলে মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। মামলার এজাহারে কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব ও বাজেট বিভাগের যুগ্মপরিচালক জোবায়ের বিন হুদা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর রাতেই মামলাটির তদন্তভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর করা হয়। সিআইডি মামলাটির তদন্ত করছে। মামলা দায়েরের পরদিন ১৬ মার্চ নিখোঁজ হন জোহা। ওই রাত থেকেই তার হদিস মিলছিল না। তাকে কে বা কারা গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় বলে পরিবারের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল। জোহাকে ফেরত পেতে তার চাচা বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক উপ-মহাপরিচালক মাহবুবুল আলম ও জোহার স্ত্রী কামরুন নাহার থানায় যান অভিযোগ দায়ের করতে। থানার যাওয়ার পর তারা অজ্ঞাত জায়গা থেকে ফোন পান। এরপর আর তারা অভিযোগ করেননি। কেন অভিযোগ দায়ের করেননি সে বিষয়টিও পরিবারের তরফ থেকে গণমাধ্যমকে সুষ্পষ্ট করে কিছুই জানানো হয়নি। তবে পরিবারের তরফ থেকে জোহাকে উদ্ধারে পুলিশের সহযোগিতা না করার অভিযোগ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বাহিনীকে তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তা দিয়ে আসা জোহাকে ওই সব বাহিনীর কোনটি তুলে নিতে পারে। এমন সন্দেহের কথা তারা বারবারই বলে আসছিলেন। যদিও বরাবরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তরফ থেকে জোহাকে আটক, গ্রেফতার বা তুলে নেয়ার অভিযোগটি ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে। জোহার স্ত্রী কামরুন নাহার বলছেন, তার স্বামী মূলত মিরপুরের ইনসাইট বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ভাইস চেয়ারম্যান। বাংলাদেশের প্রতিটি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গেই তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তা দিতে কাজ করেছেন তার স্বামী। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে প্রশিক্ষক হিসেবে তার স্বামী দায়িত্ব পালন করেছেন।
×