ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফরেনসিক বিশ্লেষণে জানা যাবে কোন্্ কম্পিউটার থেকে রিজার্ভ জালিয়াতির নির্দেশনা দেয়া হয় ;###;দুঃখ প্রকাশ করেছে ফিলিপিন্সের আরসিবিসি

২৫ কম্পিউটার টার্গেট করে এগোচ্ছেন গোয়েন্দারা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৪ মার্চ ২০১৬

২৫ কম্পিউটার টার্গেট করে এগোচ্ছেন গোয়েন্দারা

রহিম শেখ ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় সাড়ে চার হাজার কম্পিউটারের মধ্যে অতি সন্দেহজনক ২৫টি কম্পিউটার টার্গেট করে এগোচ্ছেন গোয়েন্দারা। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিভাগসহ ব্যাক অফিস অব ডিলিং রুমের (সুইফট রুম) প্রায় সব কম্পিউটারের ডিজিটাল ইমেজ সংগ্রহ করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ফরেনসিক বিশ্লেষণের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে কোন্ কম্পিউটার থেকে রিজার্ভ জালিয়াতির নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮শ’ কোটি টাকা চুরির ঘটনায় ব্যাংকটির সন্দেহভাজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর দেশত্যাগের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দেশের সব বিমানবন্দর, সমুদ্র ও স্থলবন্দরে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা পাঠিয়েছে চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তে থাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির সবুজ সঙ্কেত ছাড়া কেউ দেশের বাইরে যেতে পারবেন না বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক সূত্র। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মার্কিন ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের বিরুদ্ধে মামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ঘটনায় দেশের ব্যাংকগুলোর ট্রেজারি বিভাগ ও তহবিল ব্যবস্থাপনায় যেসব কর্মকর্তা কাজ করেন তাদের পাসপোর্টের কপি সংরক্ষণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার অর্থ চুরির ঘটনায় কর্মীরা জড়িত থাকায় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রকাশ্যে দুঃখপ্রকাশ করেছে ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি)। সূত্রমতে, গত ৬ দিনে এ্যাকাউন্টস, বাজেট, ফরেন এক্সচেঞ্জ এবং ব্যাক অফিস অব ডিলিং রুমের (সুইফট রুম) কম্পিউটারের ডিজিটাল ইমেজ সংগ্রহ করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে অতি সন্দেহজনক ২৫টি কম্পিউটার টার্গেট করে এগোচ্ছেন গোয়েন্দারা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ৪টি বিভাগের ২৫টি কম্পিউটারের মধ্যে যে কোন একটি কম্পিউটারের মাধ্যমে নির্দেশনা দেয়া হতে পারে। ফরেনসিক বিশ্লেষণের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে কোন্ কম্পিউটার থেকে রিজার্ভ জালিয়াতির নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই অরক্ষিত ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিসংবেদনশীল ‘ব্যাক অফিস অব ডিলিং রুম’ (সুইফট সার্ভার কক্ষ)। নড়বড়ে ছিল অতিগুরুত্বপূর্ণ ওই কক্ষের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দেশের অন্যান্য বেসরকারী ব্যাংকে নিরাপত্তা নিশ্চিতের স্বার্থে ব্যাক অফিসের সার্ভারকে ব্যাংকের মূল লেন থেকে আলাদা রাখা হলেও ব্যতিক্রম ছিল খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অতিগুরুত্বপূর্ণ এ ইউনিটে কর্মকর্তাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের পরিধি নিয়েও বিস্মিত তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র বলছে, হ্যাকারদের আক্রমণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুরো সার্ভার ব্যবস্থা তছনছ হয়ে গেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে তারা কম্পিউটারের হার্ডডিস্কেরও অপূরণীয় ক্ষতি করেছে, যা একেবারে বদলে ফেলতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তথ্যের যোগান পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাকআপ সার্ভারেও তারা প্রবেশ করেছিল। সেখানেও ক্ষতিকর ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়েছে। রিজার্ভ চুরির জন্য সার্ভার হ্যাক করতে তারা যে ক্ষতিকর সফটওয়্যার বা ভাইরাস (ম্যালওয়্যার) ছড়িয়ে দিয়েছে তাকে পুরোপুরি ধ্বংস বা নিষ্ক্রিয় করতে আরও সময়ের প্রয়োজন। পুরো সার্ভারব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হলে এ্যান্টিভাইরাস জাতীয় শক্তিশালী নতুন সফটওয়্যারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। মামলার পরিকল্পনায় আইনজীবী নিয়োগ বাংলাদেশ ব্যাংকের ॥ নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে মামলা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হয়। তবে ওই প্রতিবেদনে কোন মামলা হয়নি বলেও উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলার পরিকল্পনা কিংবা আইনজীবী নিয়োগ দেয়র বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হতে পারে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন আইনী ব্যবস্থার মাধ্যমে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে। প্রতিবেদনে মার্কিন এক কংগ্রেস সদস্যের বরাত দিয়ে বলা হয়, চোরেরা কিভাবে ফেডারেল রিজার্ভের এ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ হাতিয়ে নিল, তা নিয়ে একটি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে একটি চিঠি দিয়ে এ দাবি জানিয়েছেন ডেমোক্রেটিক দলীয় কংগ্রেস সদস্যা ক্যারোলিন ম্যালোনি। চিঠিতে ম্যালোনি লিখেছেন, দুর্বৃত্তরা কিভাবে ব্যাংকের নিরাপত্তা সুরক্ষা পাশ কাটাতে পারল একটা বিস্তারিত তদন্তের মাধ্যমে সেটা আমাদের জানা দরকার। এর মাধ্যমে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হ্যাকার ও সাইবার অপরাধীদের ঠেকানোর জন্য এমন একটি মানদ- ঠিক করতে পারবে, যাতে নিউইয়র্ক ফেডের এ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার মতো ঘটনা ভবিষ্যতে আর না ঘটে। তিনি বলেন, তিনি ফেডারেল রিজার্ভে একটি একান্ত বৈঠক চান যেখানে ব্যাংক কর্মীদের জিজ্ঞাসা করা হবে বিদেশী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর এ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ স্থানান্তরের নির্দেশ দিতে সুইফট মেসেজিং নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করা ঠিক হচ্ছে কি-না। ব্যাংকের ট্রেজারি কর্মকর্তার পাসপোর্টের কপি সংরক্ষণের নির্দেশ ॥ রিজার্ভ থেকে টাকা চুরির পর দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সব ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত সংশ্লিষ্ট সবাই। সেটারই একটা অংশ হিসেবে এখন থেকে ব্যাংকগুলোর ট্রেজারি বিভাগ ও তহবিল ব্যবস্থাপনায় যেসব কর্মকতা কাজ করবেন তাদের পাসপোর্টের কপি সংরক্ষণের জন্য ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির। বুধবার ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানদের সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস’র (বিএবি) প্রতিনিধি দল নতুন গবর্নরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করতে গেলে তিনি এ নির্দেশ দেন। সাক্ষাত শেষে বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শুভেচ্ছা বিনিময় করতে এসেছিলাম। আমাদের ভাল আলোচনা হয়েছে। নিরাপত্তা প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গবর্নর মহোদয় ব্যাংকগুলোকে সতর্ক হতে বলেছেন, যারা ট্রেজারি বিভাগ ও ফান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগে কাজ করে তাদের পাসপোর্টের কপি ও বিস্তারিত পরিচয় সংরক্ষণের জন্য বলেছেন। একই সঙ্গে এসব বিভাগে জনবল পদায়নের (পোস্টিং) ক্ষেত্রে জেনে-বুঝে বিশেষভাবে খোঁজখবর নেয়ার কথা বলেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ঘটনাকে বড় ধরনের বিপর্যয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইটস এ্যা ব্যাড ইনসিডেন্ট, ব্ল্যাক ইনসিডেন্টও বটে। এ একটি বড় ধরনের ঘটনা। টাকার অংক যাই হোক, আট শ’ বা এক কোটি, রিজার্ভের টাকা উদ্ধার হবেÑ এটাই আমাদের আশা। এটিএম জালিয়াতি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যা হওয়ার হয়ে গেছে আর হবে না। অনেকের পানিশমেন্ট হয়ে গেছে, অনেকের হবে। এতে আমরা ১শ’ ভাগ না হলেও সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছি। এ সময় স্টান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোস্তফা আনোয়ারসহ দু’জন বিএবির নেতা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় জব্দ করা বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটারের হার্ডডিস্কের ফরেনসিক পরীক্ষা করার অনুমতি দিয়েছে আদালত। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম মাহবুবুর রহমান এ আদেশ দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটারের হার্ডডিস্কের পরীক্ষা হবে ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় জব্দ করা বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটারের হার্ডডিস্কের ফরেনসিক পরীক্ষা করার অনুমতি দিয়েছে আদালত। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর হাকিম মাহবুবুর রহমান এ আদেশ দেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপ-কমিশনার এ এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য জব্দ করা কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক পরীক্ষা করার অনুমতি চেয়ে সিআইডি আদালতে আবেদন করে। আদালত সিআইডির এ আবেদন মঞ্জুর করে পরীক্ষা করার অনুমতি দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে ‘নিষেধাজ্ঞা’ ॥ রিজার্ভ চুরি ও তা চেপে রাখায় সমালোচনার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষপদে পরিবর্তনের পর দেশের ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থায় সাংবাদিকদের ঢুকতে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কয়েক দিন আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কয়েকটি বিভাগে সংবাদকর্মীদের যাতায়াত বন্ধ করা হয়। এরপর বুধবার সব বিভাগের জন্য এই কড়াকড়ি দেয়া হলো। সাংবাদিকদের প্রবেশ আটকে এখন সেখানে মিডিয়া সেন্টার গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়ার কথা শোনা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, অচিরেই বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি মিডিয়া সেন্টার খোলা হবে। তবে তিনি জানান, যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তা পরে তুলে নেয়া হয়েছে। চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধার সত্যিই কঠিন -এ্যাটর্নি জেনারেল ॥ রিজার্ভের অর্থ চুরি ঘটনায় বাংলাদেশের কারা জড়িত তা শনাক্ত করা গেলেই টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, আন্তঃদেশীয় আইনী সহায়তার মাধ্যমে ওই অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে পারে এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়। তবে তার আগে অর্থ ফ্রিজ করতে হবে। এক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলছেন, দু’টি উপায়ে রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত পাওয়া সম্ভব। এজন্য প্রথমে দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে এ ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশী কারা জড়িত। এরপর আন্তঃদেশীয় আইনী সহায়তায় টাকা ফেরাতে কাজ শুরু করতে পারে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়। টাকাগুলো কোথায় রয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া গেলে ফ্রিজ করে দেয়ার আবেদনও জানান তিনি। এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে বললেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে, রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় এ্যাটর্নি জেনারেলের কণ্ঠে সেই বিষাদের সুরÑ বললেন, চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধার সত্যিই কঠিন। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ আরসিবিসি ব্যাংকের ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার অর্থ চুরির ঘটনায় কর্মীরা জড়িত থাকায় প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করেছে ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি)। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বুধবার ফিলিপিন্সের কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) দুঃখ প্রকাশ করেছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছেÑ ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যক্রমে যেসব দুর্বলতা রয়েছে তা কাটিয়ে আরও বেশি অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে আরসিবিসি। এ ব্যাপারে সিনেট কমিটি এবং মুদ্রাপাচার প্রতিরোধ কাউন্সিলের যে তদন্ত চলছে, তাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে রিজাল ব্যাংক। এর আগে অর্থ চুরির ঘটনায় জড়িত থাকায় মঙ্গলবার, ব্যাংকটির জুপিটার শাখার ম্যানেজার মাইয়া সান্তোষ দিগুইতো ও ব্যাংকটির আরেক কর্মকর্তা এ্যাঞ্জেলা তোরেসকে ব্যাংকের নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়। একই সঙ্গে আগামী সপ্তাহেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। এছাড়া রিজার্ভ চুরির ঘটনায় অভ্যন্তরীণ তদন্ত শেষে ব্যাংকের অন্যান্য ব্রাঞ্চ ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও সাময়িক বরখাস্ত থেকে বহিষ্কার পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে বলে ওই বিবৃতিতে জানানো হয়। অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ ছুটিতে আরসিবিসি ব্যাংকের সিইও ॥ বাংলাদেশে রিজার্ভের অর্থ পাচারের ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এবার দীর্ঘদিনের ছুটিতে গেলেন ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন আরসিবিসি ব্যাংকের প্রধান লরেনজো তান। ব্যাংকটির পরিচালকদের বোর্ডসভায় এ ছুটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সিনেটের ব্লু রিবন কমিটির প্রথম দুই দফা শুনানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ পাচারের ঘটনায় আরসিবিসির প্রধান লরেনজো তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন ব্যাংকটির জুপিটার শাখার সদ্য বরখাস্ত ব্যবস্থাপক মায়া দেগুইতো। সিনেটের রুদ্ধদ্বার শুনানিতে তিনি জানান, রিজার্ভ চুরির ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত চীনা ব্যবসায়ী কিম অংয়ের সাথে লরেনজো তানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়াও জুপিটার শাখায় চারটি ভুয়া এ্যাকাউন্ট খোলাসহ অর্থ পাচারে লরেনজো তান কিম অংকে সহায়তা করেন বলেও শুনানিতে জানান মায়া দেগুইতো। আগামী ২৯ মার্চ এ ঘটনায় সিনেটের ব্লু রিবন কমিটিতে তৃতীয় দফা শুনানির অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। চীনা দুই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা ॥ চীনা দুই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশী ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির দায়ে ফৌজদারি অভিযোগ এনে মামলা করেছে ফিলিপিন্সের এন্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি)। ওই দুই ব্যবসায়ী হলেন চীনা একটি ক্যাসিনো অপারেটর সু ওয়েইকাং এবং কাগাইয়ান ভিত্তিক রেস্তোরাঁর মালিক কাম সিন ওং (যিনি কিম ওং নামেই বেশি পরিচিত)। আরসিবিসি প্রধান কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার কারণে মঙ্গলবারই বরখাস্ত করা হয়েছে আরসিবিসির জুপিটার শাখা ম্যানেজার দেগুইতো ও তার ডেপুটি এ্যানজেলা তোরেসকে। ব্যাংকের লিগ্যাল এ্যান্ড রেগুলেটরি এ্যাফেয়ার্স বিষয়ক প্রধান মারিয়া সেসিলা ফার্নান্দেজ-এস্তাভিলো এক বিবৃতিতে বলেছেন, ব্যাংকের অন্যান্য শাখা ও ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আগামী কিছুদিনের মধ্যে চাকরিচ্যুতি থেকে সাময়িক বরখাস্তের মতো ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। তা করা হবে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্ত শেষ হলেই। আরসিবিসি বলছে, দেগুইতো ও তোরেস ব্যাংকের নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। তারা বাংলাদেশী অংশ চুরিতে সহায়তা করেছেন। এস্তাভিলো বলেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে দেগুইতো ও তোরেসের বিরুদ্ধে আদালতে যথাযথ অভিযোগ করা হবে। ওদিকে নয় পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র তৈরি করেছে এএমএলসি। তাতে বলা হয়েছে, অর্থপাচারের সব বিষয় এ মামলায় রয়েছে। এর মধ্যে সু ওয়েইকাং ও কিম ওং অর্থ নিয়েছেন। এএমএলসির তদন্তে দেখা গেছে যে, আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার শাখার মাধ্যমে সন্দেহজনক নামের চারটি এ্যাকাউন্টে পাচার করা অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে। এসব এ্যাকাউন্ট খোলা হয় ২০১৫ সালের ১৫ মে।
×