ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও আছেন দিতি

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ২৪ মার্চ ২০১৬

এখনও আছেন দিতি

ক’দিন ধরে এফডিসি থমথমে। প্রত্যেকটি মুখ প্রচন্ড রকম বেদনা নিয়ে ঘোরাফেরা করছে। ক’দিন ধরে এফডিসির প্রতিটি ফ্লোরের প্রতিটি দেয়ালে ভারি হচ্ছে দীর্ঘশ্বাস। প্রতিটি পুরনো গাছ নেতিয়ে পড়েছে প্রবল শোকে। দিতি নেই! এই একটি খবর পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে যেন কিছুক্ষণের জন্য থেমে গিয়েছিল পুরো বাংলাদেশ! এফডিসির গেটে আবার হাজির হয়েছিল পুরনো চেহারা। কাজ ফেলে শ্রমিক, ক্লাস ফেলে ছাত্র, নারী, বৃদ্ধ এসেছিল ছুটে। তারা রোদের মধ্যে থমথমে মুখ নিয়ে ঘামতে ঘামতে দাঁড়িয়ে থেকেছে। প্রতিটি দৃশ্যই অবিশ্বাস্য ঠেকেছে তাদের। দিতি নেই? এ হাস্যোজ্জল চেহারা আর দেখা যাবে না? মেনে নিতে যে বড় কষ্ট হয়! কম সময় তো আর নয়! সেই ১৯৮৪ থেকে এফডিসির মাটি পেয়ে আসছে দিতির পায়ের ছাপ। মিষ্টি হাসি নিয়ে, প্রেম নিয়ে, বিরহ নিয়ে পর্দায় হাজির হয়েছেন। দর্শককে কাঁদিয়েছেন কষ্টে, ভাসিয়েছেন প্রেমে। যখনই যেখানেই দিতিকে দেখেছে লোকে, দেখেছে হাস্যোজ্জল। মনে এত জোর নিয়ে, ভালবাসা নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন যিনি, সেই তিনি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকবেন চোখেমুখে কষ্টের রেখা টেনে নিয়ে; দৃশ্যটি কেমন যেন খাপছাড়া ঠেকে। দ্রুতই ঠেকে সবকিছু। মনে হয়, ঝড়টা হঠাৎ এলো, হঠাৎই উড়িয়ে নিয়ে গেল সব। ভেঙ্গেচুরে দিয়ে গেল সাজানো অবস্থা। মাসকয়েক আগেও দিতিকে দেখে বোঝা যায়নি, ভেতরে এত ভয়ংকর অসুখটা পুষে চলছেন। আতংকের সূত্রপাত জুলাইয়ে। ধরা পড়ল ব্রেন টিউমার! চিকিৎসার জন্য ২৬ জুলাই চেন্নাইয়ে যান দিতি। মাসকয়েকের চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরেন ২০ সেপ্টেম্বর। ততদিনে নায়িকা বেশ সুস্থ। কথা বলছেন। হাসছেন। হাঁটছেন। এরপর সবকিছু দ্রুত ঘটে গেছে। আবারও অসুস্থতা। ব্রেন ক্যান্সার। আবারও চেন্নাই। হাসপাতাল। কেমোথেরাপি। যন্ত্রণা। প্রায় অচল শরীর নিয়ে দেশে ফেরা। অবশেষে ২০ মার্চের চুড়ান্ত দুঃসংবাদ। চলে যেতে যেতেই হয় সবাইকে, যাবে সবাই, যায়ও। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি! দিতির প্রস্থানে আবারও, প্রত্যেকের মনে, সেই অনিবার্য এবং পুরনো প্রশ্নটিই, ‘জীবন এত ছোট ক্যানে?’ অসুস্থ হয়ে দেশ ছাড়ার ক’দিন আগেও দিতি শূটিং করেছেন, এফডিসিতেই। ‘রাজাবাবু’ ছবির। তখন কে জানতো ‘দিতি অভিনীত শেষ ছবি’র সিল এটার গায়েই পড়বে! ছবি দিতি করেছেন অসংখ্য, শ’দুয়েক। তারও বেশি হবে। ‘আমিই ওস্তাদ’ দিয়ে শুরু, আজমল হুদা মিঠুর। তার অভিনীত প্রথম ছবি হিসেবে হলে এসেছিল এটি। তবে ‘আমিই ওস্তাদ’ নয়, ‘ডাক দিয়ে যাই’ হচ্ছে প্রথম ছবি। উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত এ ছবিটি মুক্তি পায়নি। এমনটা হয়ই। প্রথম সবকিছু সবার ক্ষেত্রে আলোর মুখ দেখে না। ব্যর্থতা কামড় বসাতে চায় প্রথমেই। তাতে কি আর পথচলা আটকে থাকে? মসৃণ হয় বরং আরও। পরবর্তীতে আশি আর নব্বই দশক শুধু দিতির গল্পই বলে। ঘাড় উঁচিয়ে সাক্ষ্য দেয়, এই মায়াভরা মুখটি কীভাবে কত ব্যাপকভাবে দখল করে নিয়েছিল মানুষের মন। আজ দিতি নেই। কিন্তু সে ইতিহাস আছে, ঘটনা আছে, তার মন পাগল করা অভিনয়ের প্রতিটি ছবি আছে। থাকবে। থাকবেন তিনিও। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সোনায় মোড়া পৃষ্ঠাগুলোর অনেক ভাগই ভরা থাকবে তার নামে। ভাল থাকবেন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘লেডি ইন্সপেক্টর’!
×