ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশনা উৎসবে সুধীবৃন্দ

বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর এখন বাঙালীর তীর্থকেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৩ মার্চ ২০১৬

বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর এখন বাঙালীর তীর্থকেন্দ্র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধু যখন ছিলেন তখন তার ধানম-ির ৩২ নম্বরের বাড়িটি বাঙালীর আশা-আকাক্সক্ষা ও দ্রোহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। এখন সেই বাড়িটি বাঙালীর তীর্থকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। অমরত্ব অর্জন করেছে। এই বাড়িটি সম্পর্কে জানলে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস জানা হয়ে যায়। মঙ্গলবার বিকেলে প্রবাসী লেখক এম. নজরুল ইসলাম রচিত ‘৩২ নম্বরের বাড়ি ও সুধা সদন : যে ইতিহাস সবার জানা দরকার’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আলোচকরা এসব অভিমত ব্যক্ত করেন। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে প্রকাশনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আলোচনায় অংশ নেন দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান, বিশিষ্ট শিল্পী হাশেম খান, ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, গ্রন্থকার এম. নজরুল ইসলাম ও প্রকাশক আহমেদ মাহফুজুল হক। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ৩২ নম্বরের বাড়িকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু মানুষ সেটি বিশ্বাস করেনি। মানুষ বঙ্গবন্ধুকেই মনে রেখেছে। বঙ্গবন্ধুর বাড়িটিকে ৩২ নম্বর যাতে না বলি তার জন্য বাড়ির নম্বর বদলে ফেলা হয়েছে। কিন্তু ৩২ নম্বর বললে মানুষ বঙ্গবন্ধুর বাড়িকেই বুঝে। ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না, সেটা বোঝা দরকার। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ১৯৬৬ সালের দিকে যখন ৬ দফা জোড়ালো হতে থাকে তখন থেকেই ধানম-ির ৩২ নম্বরের ওই বাড়িটির ভাবমূর্তি আরও বাড়তে থাকে। তখন মানুষ ওই বাড়ি সামনে এসেই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করতেন। তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের পর ওই বাড়ির গুরুত্ব আরও অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। ওই সকাল বিকেল রাত সব সময়ই জনসমাগম থাকত। বঙ্গবন্ধু ওই বাড়ি থেকে বহুবার কারাগারে গিয়েছেন বলেও জানান সংস্কৃতি মন্ত্রী। সুধা সদনের বিষয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রী বলেন, ইতিহাসকে মুছে ফেলার, উল্টো দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন করে লড়াই শুরু হয় আরেকটি বাড়ি থেকে সেটি হলো সুধাসদন। দু’টি বাড়িই বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ। সুধা সদনও বর্তমান রাজনীতিতে অনেক বেশি ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, সুধা সদন থেকে প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করেই শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করে চলেছেন। জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান তার বক্তব্যে বলেন, যখন সমগ্র জাতি একটা উত্তাল তরঙ্গের মধ্য দিয়ে যেতে থাকে, তখন ওই তরঙ্গ পার করে আনতে পারাই সফলতা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুই একমাত্র সফল বাঙালী, যিনি জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর এই অবদান জাতি হিসেবে আমাদের মনে রাখতে হবে। তিনি বলেন, ধানম-ির ৩২ নম্বরের অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর বাড়িটি আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য। এ ধরনের বাড়ি ও স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণে সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিও জোড় দেন তোয়াব খান। আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ধানম-ির ৩২ নম্বরের ওই বাড়ি বাঙালী জাতির প্রধান ভবন বা হেডকোয়ার্টার্স। বঙ্গবন্ধু যখন সরকারপ্রধান ছিলেন তখন তিনি ওই বাড়িতেই থাকতেন। বঙ্গবন্ধু যখন ওই বাড়িতে থাকতেন যখন সকল সড়কের গন্তব্য ছিল ধানম-ির ৩২ নম্বরের ওই বাড়ি। ওই বাড়ির ইতিহাস আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। তিনি বলেন, এম নজরুল ইসলামের লেখা ‘৩২ নম্বরের বাড়ি ও সুধাসদন : যে ইতিহাস সবার জানা দরকার’ গ্রন্থে অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। নতুন প্রজন্মকে বইটি পড়ারও পরামর্শ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। প্রখ্যাত সাংবাদিক আবেদ খান তার বক্তব্যে বলেন, ধানম-ির ৩২ নম্বরের বাড়িটা প্রকৃতপক্ষে বাঙালীর তীর্থ ক্ষেত্র। বঙ্গবন্ধু বললে যেমন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকেই বুঝায়, তেমনি ৩২ নম্বর বললেও বাঙালীর তীর্থ ক্ষেত্রকেই বুঝায়। ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন তার বক্তব্যে বলেন, ৩২ নম্বর মানেই বঙ্গবন্ধুর বাড়ি। বঙ্গবন্ধু সাধারণ মানুষ থেকে এসেছেন এবং সাধারণভাবেই থেকেছেন। তিনি বলেন, এই বাড়িটি ষাটের দশক থেকে এখন পর্যন্ত একটা প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিদ্রোহের প্রতীক। ৩২ নম্বরের ওই বাড়িটি এখন বাংলাদেশের প্রতীক হয়ে উঠেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত পাঁচটি প্রবন্ধের সংকলন ‘৩২ নম্বরের বাড়ি ও সুধা সদন : যে ইতিহাস সবার জানা দরকার’। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে সুবর্ণ। মূল্য ২০০ টাকা।
×