ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কাজ পর্যবেক্ষণের পর ঠিকাদারের বিল পরিশোধ

ঢাকা দক্ষিণের ৩শ’ সড়ক সংস্কার ও মেরামত বর্ষার আগেই

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৩ মার্চ ২০১৬

ঢাকা দক্ষিণের ৩শ’ সড়ক সংস্কার ও মেরামত বর্ষার আগেই

মশিউর রহমান খান ॥ রাজধানীবাসীর নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবে বর্ষা শুরুর আগেই একযোগে তিন শ’ সড়ক সংস্কার ও মেরামত করবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। সংস্থাটির নির্বাচিত প্রথম মেয়র মোহ্ম্মাদ সাঈদ খোকনের নির্দেশে প্রধান সড়কসহ অলিগলিতে অবস্থিত ছোট বড় সকল সড়কই এ বিশেষ সংস্কার কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে। আধুনিক পদ্ধতিতে এসব সড়ক তৈরি হবে। এসব সড়কের স্থায়িত্বকাল হবে কমপক্ষে পাঁচ থেকে সাত বছর। এ পকল্প বাস্তবায়নের পর ডিএসসিসির কোন রাস্তাই আর ভাঙ্গাচোরা থাকবে না বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মেয়র। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) এসব রাস্তার সংস্কার কাজ সম্পূর্ণ পর্যবেক্ষণ করবেন। এ দুই সংস্থার রিপোর্টের পর কাজের মান ভাল হলে তবেই ঠিকাদারকে বিল প্রদান করবে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। উন্নত বিশ্বের ন্যায় রাস্তার স্থায়িত্ব বাড়াতে ও বর্ষার পানিতেও রাস্তার কোন ক্ষতি না হয় তা ঠিক রাখতে বেশিরভাগ রাস্তাই হবে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে তৈরি। রাস্তা টেকসই করতে যেসব রাস্তায় বর্ষায় পানি উঠে যায় সেসব রাস্তার পাশের ড্রেনেজ ব্যবস্থারও উন্নয়ন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জানুয়ারি মাসের শেষের দিক থেকেই ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ এসব রাস্তা বর্ষার পরও কিভাবে সম্পূর্ণ চলাচল উপযোগী রাখা যায় তা নিয়ে কাজ করছে। সম্প্রতি বিভিন্ন সভা সেমিনারে এ নিয়ে সংস্থার মেয়র সাঈদ খোকন অভিমত ব্যক্ত করেছেন। দীর্ঘ ৭ বছর রাজধানীর ২ সিটিতে কোন প্রকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় প্রায় বর্তমানে সকল রাস্তাই ভেঙ্গেচুরে একাকার হয়ে পড়ে আছে। গত বছর এপ্রিলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর এসব রাস্তার সংস্কার কাজ শুরুর চিন্তা করলেও সংস্থার আর্থিক সঙ্কট থাকায় রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু করতে পারেনি। আসন্ন বর্ষায় নাগরিকদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সংস্থার পক্ষ থেকে বর্ষার আগেই এসব রাস্তা সংস্কার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবে একযোগে তিনশত রাস্তার মেরামত ও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে সড়ক রয়েছে ৭৮১ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রধান সড়ক তথা প্রাইমারি সড়ক রয়েছে ৩৫ কিলোমিটার ও সেকেন্ডারি সড়ক ২৯ কিলোমিটার, সংযোগ সড়ক ৯৩ কিলোমিটার এবং স্থানীয় সড়ক ৬২৩ কিলোমিটার। এর বাইরে আছে বেশ কিছু অলিগলির রাস্তা তো রয়েছেই। সম্প্রতি মেয়র এক অনুষ্ঠানে বলেন, একযোগে এসব রাস্তা মেরামত ও সংস্কার করা হচ্ছে বিধায় কোন প্রকার দুর্নীতি বা অনিয়ম হতে পারে। তবে রাস্তা মেরামত বা সংস্কারে যে কোন অনিয়ম নাগরিকগণ দেখলে সাথে সাথেই সরাসরি মেয়রকে জানানোর অনুরোধ জানান তিনি। এ বিষয়ে কোন অনিয়ম পেলে তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ারও ঘোষণা দেন। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, প্রায় ৩শত রাস্তা সংস্কারে বা মেরামতে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ আর্থিক অনুদান পাওয়া গেছে। তবে এ অনুদান দিয়ে পুরো ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা সংস্কার, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা, খেলার মাঠ উন্নয়ন, পার্কের উন্নয়ন তথা সামগ্রিক উন্নয়ন সম্পন্ন করা হবে। তবে এর মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় হিসেবে এসব রাস্তার মেরামত ও সংস্কার সম্পন্ন করা হবে। এর মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কোন রাস্তাই আর ভাঙ্গাচোরা রাস্তাই চোখে পড়বে না বলে ডিএসসিসির প্রকৌশল শাখা সূত্র নিশ্চিত করেছে। দীর্ঘ দিন একটানা কোন প্রকার রাস্তার সংস্কার না করায় ডিএসসিসির কয়েকটি রাস্তা ছাড়া প্রায় সকল রাস্তাই ভাঙ্গাচোরা অবস্থায় পরে রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ডিএসসিসি এলাকায় যান চলাচল অনেকটা অনুপযোগী হয়ে পড়বে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এসব সমস্যা সমাধানে একটি প্রকল্প তৈরি করে। প্রকল্পটি অতি দ্রুত বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী সম্মত হওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে ডিএসসিসি এলাকায় এসব রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। মূলত সরকার রাজধানী ঢাকাকে ২ সিটিতে বিভক্ত করার পর নাগরিক সেবার পরিধি আগের চেয়ে বাড়াতে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জনকণ্ঠকে বলেন, নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবে আমরা সর্বদাই সচেষ্ট। নির্বাচনী ওয়াদা হিসেবে এবং আগামী বর্ষায় নাগরিক দুর্ভোগ কমিয়ে আনতে ও বর্ষাকালেও নগরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে আমরা ডিএসসিসি এলাকার ৩শত রাস্তাকে সংস্কার বা মেরামতের উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। এরই অংশ হিসেবে অতি দ্রুত আগামী মে মাসের আগেই সকল রাস্তা কিভাবে সংস্কার বা মেরামত করা যায় তার জন্য ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগকে বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে তারা গুরুত্বের সাথে কাজ করছে। এসব রাস্তা মেরামত করা গেলে আশা করি ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকার অলিগলিসহ সকল রাস্তাই সংস্কার সম্পন্ন হবে। ফলে আর কোন ভাঙ্গা রাস্তা থাকবে না। যার ফলে আসন্ন বর্ষায় নাগরিকদের দুর্ভোগ অনেকাংশে কমবে। এছাড়া কংক্রিটের ঢালাইয়ের মাধ্যমে এসব রাস্তা তৈরি করা হবে বিধায় সহজে এগুলো ভাঙবে না। তবে কিছু রাস্তা হবে কার্পেটিংয়ের। মেয়র বলেন, এসব রাস্তার স্থায়িত্বের মেয়াদকাল বর্তমানের পিচ ঢালাইয়ের রাস্তার চেয়ে অনেক বেশি হবে। এসব রাস্তার স্থায়িত্বকাল কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ বছর হবে। এছাড়া প্রতিবছরই এসব রাস্তা সংস্কার বা মেরামত করা প্রয়োজন হবে না বিধায় নাগরিকদের চলাচলের ক্ষেত্রে কষ্ট কমে আসবে। পাশপাশি ডিএসসিসির আর্থিকভাবে ব্যয় কমাতে সক্ষম হবে। এসব রাস্তার কাজের মান ভাল খারাপ কি না তা দেখতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) যৌথভাবে তদারকি করবে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই কেবল সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করা হবে। নির্মাণকাজে কোন অনিয়ম পেলে তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ফলে রাস্তাগুলো স্বাভাবিকভাবেই টেকসই হওয়ার কথা। এর বাইরে বর্ষাকালে এসব রাস্তায় পানি যাতে না জমে সে বিষয়েও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। পাশপাশি রাস্তার পাশের ড্রেনেজ ব্যবস্থারও উন্নয়ন করা হবে। অতি দ্রুতই এসব রাস্তার কাজ একযোগে শুরু করা হবে।
×