ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হাতিরঝিলকে ভ্রমণপিপাসু বান্ধব করে গড়ে তোলার দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৩ মার্চ ২০১৬

হাতিরঝিলকে ভ্রমণপিপাসু বান্ধব করে গড়ে তোলার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘রাজধানীর ফুসফুস’ খ্যাত হাতিরঝিলকে সরকার সম্পূর্ণ পয়বর্জ্যমুক্ত করে ভ্রমণপিপাসু বান্ধব করে গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন নাগরিক অধিকার বাস্তবায়নকারী সংগঠন দেশপ্রেমিক নাগরিক মঞ্চ। এজন্য হাতিরঝিলের নোংরা ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানিকে ব্যবহার উপযোগী করা ও প্রকৃত বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার জোর দাবি জানানো হয়। এছাড়া সরকারের সত্যিকারের হাতিরঝিল হিসেবে গড়ে তুলতে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয় সাধনের অনুরোধ করা হয়। ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে রাজধানীর পরীবাগের সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী এনামুল হক এসব দাবি জানান। সম্মেলনে সংগঠনটির মহাসচিব কৃষিবিদ রফিক চৌধুরী, নীতি নির্ধারণী সদস্য শহিদুল হক ডাকুয়া, শফিউদ্দীন সরকার, সদস্য এস জি কিবরিয়া ও বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শুরুর দিকে হাতিরঝিল রাজধানীবাসী বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেলেও হাতিরঝিলে কোন বাইরের পানি প্রবেশের কথা না থাকলেও বর্তমানে পান্থপথ, মহাখালী বক্সকালভার্ট ছাড়াও টঙ্গী ডাইভারশন রোড, তেজগাঁও বেইলি রোড, মগবাজার, রামপুরাসহ মোট ১১ পথের লাখ লাখ লিটার পয়োবর্জ্য ও আবর্জনা হাতিরঝিলের পানিতে মিশছে। এর ফলে পানি অনায়াসে দূষিত হচ্ছে। বর্তমানে বৃষ্টির পানি, ওয়াসার পানি আর পয়োবর্জ্য নিষ্কাশন ড্রেনের পানি একসঙ্গে মিশছে। হাতিরঝিলে যাতায়াতকারী ও আশপাশে বসবাসকারী লোকদের স্বাস্থ্যের জন্য যা মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাতিরঝিলের মধ্য দিয়ে ঢাকা ওয়াসার ট্রাক স্যুয়ার লাইন (বড় পয়োবর্জ্য লাইন) বিভিন্ন স্থানে ফেটে যাওয়ায় ময়লা লেকের পানিতে মিশে যাচ্ছে। এছাড়া হাতিরঝিলের চারপাশের এলাকার পয়োবর্জ্য গৃহস্থালি বর্জ্য ও কারওয়ানবাজারের বারোয়ারি ময়লা আবর্জনা হাতিরঝিলে ফেলা হচ্ছে। সম্মেলনে তুলে ধরা হয়, হাতিরঝিলের সংযোগস্থলে পান্থপথ বক্স কালভার্টটি মূলত একটি স্টম স্যুয়ারেজ। এর ভেতর দিয়ে কোন প্রকার পয়োবর্জ্য প্রবেশ না করার কথা থাকলেও এটি পুরোপুরি কার্যকর না থাকায় এর ভেতর দিয়ে ধানম-ি, কলাবাগান, কাঁঠালবাগান পরিবাগের সকল অবৈধ পয়োনালার সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। ফলে হাতিরঝিলের পানিতে কোন প্রাণীরই আর বেঁচে থাকার সুযোগ নেই। বর্তমানে হাতিরঝিলের পানি এতই দুর্গন্ধ যে এর আশপাশে দিয়ে যাওয়া লোকজন নাকে রুমাল চেপেও পার হতে অনেক কষ্ট হয়। ব্রিজের নিচে ও আশপাশে উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের সব সময় আড্ডা দিতে দেখা যায়। ভাসমান দোকান নিষিদ্ধ থাকলেও যত্রতত্র সিগারেট, বাদাম, চানাচুর, আইসক্রীমসহ নানা দোকানের পসরা সব সময়ই দেখা যায়। যা দেখার যেন কেউ নেই। সম্মেলনে তুলে ধরা হয়, সুন্দর হাতিরঝিল হিসেবে গড়তে সরকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে। ঢাকা ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাঝে হাতিরঝিলকে ভ্রমণপিপাসু করে গড়ে তুলতে কোন প্রকার সমসন্বয়ই করা হচ্ছে না। ফলে বিশৃঙ্খলভাবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ সম্পাদন করে যাচ্ছে। বিনোদনকেন্দ্র তথা ভ্রমণপিপাসু বান্ধব করে গড়ে তুলতে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে স্ব স্ব দায়িত্ব যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এছাড়া হাতিরঝিলে পাবলিক টয়লেটের কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে দর্শনার্থীরা ভ্রমণে এসে বিপদে পড়ে যান। যার ব্যবস্থা করা অতি জরুরী হয়ে পড়েছে। কর্তৃপক্ষের ঘোষিত ওয়াটার ট্যাক্সিতে ভ্রমণের সুযোগ তৈরি করা, ভাসমান রেস্তরাঁ তৈরিসহ সকল বিনোদনের সুযোগ তৈরি করতে হবে। বর্তমানে এসব সুবিধা ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এ থেকে কর্তৃপক্ষকে বেরিয়ে আসতে হবে। এছাড়া হাতিরঝিলের অভ্যন্তরে দিনে ও রাতের বিভিন্ন সময়ে গঠিত ছিনতাই রাহাজানি, খুন বন্ধ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। হাতিরঝিলের কালো পানিকে সাদা করতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
×