ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জামায়াত তুরস্কের আদলে ‘গুলেন মুভমেন্ট’ নেটওয়ার্ক তৈরি করছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৩ মার্চ ২০১৬

জামায়াত তুরস্কের আদলে ‘গুলেন মুভমেন্ট’ নেটওয়ার্ক তৈরি করছে

শংকর কুমার দে ॥ যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও কেন্দ্রীয় নেতা মীর কাশেম আলীর ফাঁসির রায় কার্যকরের আগে দেশ-বিদেশে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে জামায়াত-শিবির। তুরস্কের ‘গুলেন মুভমেন্টের’ আদলে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করছে তারা। লন্ডন বসে জামায়াতের একাংশ তুরস্কের ‘একে’ পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের ১৩ কেন্দ্রীয় নেতা বর্তমানে বিদেশে অবস্থানরত থেকে তৎপরতা চালাচ্ছে। এই ধরনের তথ্য পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দারা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলছেন, জামায়াত-শিবিরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এমন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা বর্তমানে বিদেশে অবস্থানরত ১৩ জন। এর মধ্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকও আছেন। অন্যরা হলেন জামায়াত নেতা রাজ্জাকের সহকারী ব্যারিস্টার ফুয়াদ, ব্যারিস্টার জুবায়ের, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মজিবুর রহমান মঞ্জু, জাহিদুর রহমান, এ্যাডভোকেট শিশির মনির, রেজাউল করিম, ডাঃ লকিয়াত উল্লাহ, আলম শরীফ, আহসান হাবিব ইমরোজ, ড. আবু ইউসুফ, ড. মিনার, ডাঃ আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক সচিব শাহ আবদুল হান্নান ও ড. মিয়া মোঃ আইয়ুব। বিশিষ্টজনকে হত্যার ষড়যন্ত্র, অগ্নিসংযোগ এবং নাশকতার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। জামায়াতের একটি অংশ তুরস্কের ‘গুলেন মুভমেন্টের’ আদলে নেটওয়ার্ক করার চেষ্টা করছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অভিযান চালিয়ে সম্প্রতি অর্ধশতাধিক জামায়াত-শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্দান করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের মোবাইল ও ল্যাপটপ বিশ্লেষণ করে জামায়াত-শিবিরের নাশকতার নকশা ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে কিছু দিন আগে শিবির নেতা জাহিদুর ও আসাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার অনুমতি চেয়ে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ল্যাপটপ ও মোবাইল থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে দুটি ধারা বা গ্রুপ তৈরি করা হবে। প্রথমটি গোপনে সংঘটিত হবে এবং গোপনেই কার্যক্রম চালাবে। দ্বিতীয়টি প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালাবে এবং নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করবে। প্রধানমন্ত্রীসহ ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার মধ্য দিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা করে তারা। এ লক্ষ্যে তারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিশ্বস্ত কর্মী সংগ্রহ করে কোচিংয়ের নামে ঢাকায় নিয়ে আসে। এর পর পাঁচ-সাত সদস্য নিয়ে ছোট ছোট দলে ভাগ করে ‘স্মল সেল টেররিজম’ গ্রুপ তৈরি করে। ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় এক থেকে তিন মাসের জন্য বাসা ভাড়া নিয়ে কথিত আকিদা, নিরাপত্তা কৌশল, অস্ত্র পরিচালনা ও বিস্ফোরক ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সংগ্রহের পর তা ব্যবহার করার পরিকল্পনা করা হয়। বর্তমানে রাজধানী ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় পাঁচ-সাতজনের দল অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তৎপর রয়েছে। অত্যন্ত গোপনে জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনা করে ‘আইএস, একিউআইএস’, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ অন্যান্য জঙ্গী সংগঠনের নামে ‘দায়’ স্বীকার করে ঘটনা ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করছে। সরকারকে ‘ব্যর্থ’ প্রমাণ করতে এ ধরনের নাশকতা অব্যাহত রাখার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নাশকতা করে সরকারকে আরও চাপে রাখতে চায় জামায়াত-শিবির।
×