ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আক্কেল দাঁত

দাঁতের সমস্যা

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ২২ মার্চ ২০১৬

 দাঁতের সমস্যা

আক্কেল দাঁত সাধারণত ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে উঠে থাকে। আক্কেল দাঁত ওঠার সময় স্থানের অভাবে অথবা অন্য কোন কারণে আংশিক উঠে বা আর উঠতে পারে না। তখন এ দাঁতকেই ইমপ্যাকটেড দাঁত বা প্রতিবন্ধকতাপ্রাপ্ত দাঁত বলা হয়। ফলে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হয়ে থাকে। ইমপ্যাকটেড দাঁত সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে। ভার্টিক্যাল ইমপ্যাকশন : ভার্টিক্যাল ইমপ্যাকশন বলতে বোঝায় খাড়াভাবে প্রতিবন্ধকতা। এক্ষেত্রে আক্কেল দাঁত ওঠার গতিপথ থাকে খাড়াখাড়িভাবে। সাধারণত এ অবস্থায় আক্কেল দাঁত অর্ধেক বা তারও বেশি উঠে আর উঠতে পারে না। ভার্টিক্যাল ইমপ্যাকটেড দাঁতের ক্ষেত্রে ব্যথা হলে ব্যথানাশক এবং সংক্রমণ থাকলে এ্যান্টিবায়োটিক দিলে রোগী ভাল হয়ে যায়। প্রয়োজনে অপারকুলেকটমি করে পেরিকরোনাল টিসু অপসারণ করে দিলে আক্কেল দাঁতটি সহজেই উঠতে পারে। তবে সমস্যা হলো, ভার্টিক্যাল ইমপ্যাকটেড দাঁত যেগুলো অর্ধেক উঠে সেগুলো ওষুধ দেয়ার ৬ মাস বা ১ বছর পর আবার ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রে রোগী ইচ্ছা করলে আক্কেল দাঁতটি ফেলে দিতে পারেন। কারণ আক্কেল দাঁত দিয়ে খাদ্যদ্রব্য চর্বনের কাজ করা যায় না। আবার দু’থেকে তিনবার ওষুধ খেয়ে ব্যথা কমিয়ে রাখতে পারেন। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এক সময় ভার্টিক্যাল ইমপ্যাকটেড দাঁত আর ব্যথা করে না। তবে কারও মুখে নিচের চোয়ালে জায়গা যদি কম থাকে তা হলে সামনের দাঁত চেপে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে আক্কেল দাঁতটি ফেলে দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। তবে আপনার চোয়ালে যদি জায়গা থাকে তাহলে কোন সমস্যা না থাকলে দাঁতটি রেখে দিতে পারেন। ট্রান্সভার্স এবং হরিজনটাল ইমপ্যাকশন : ট্রান্সভার্স এবং হরিজনটাল ইমপ্যাকশন বলতে বোঝায় সমান্তরাল এবং আড়াআড়িভাবে প্রতিবন্ধকতা। এক্ষেত্রে আক্কেল দাঁত ওঠার গতিপথ থাকে আড়াআড়িভাবে অথবা সমান্তরালভাবে। এ দুধরনের ইমপ্যাকটেড আক্কেল দাঁতের ক্ষেত্রে আক্কেল দাঁত ফেলে দেয়াটাই উত্তম। অন্যথায় পাশের দাঁতে দন্তক্ষয় শুরু হয়। আবার পেরিওডন্টাল পকেট সৃষ্টি হয়ে অন্যান্য সমস্যার জন্ম দিয়ে থাকে। পেরিকরোনাইটিস : যে কোন ধরনের ইমপ্যাকটেড দাঁতের ক্ষেত্রে আক্কেল দাঁতের পাশে পেরিকরোনাল টিস্যুর প্রদাহ হতে পারে, যা পেরিকরোনাইটিস নামে পরিচিত। সে ক্ষেত্রে আক্কেল দাঁতের অবস্থান ঠিক থাকলে অপারকুলেকটমি করে দিলে দাঁতটি সহজেই উঠতে পারে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, কোন ডেন্টাল পকেট তৈরি হলে তা ভালভাবে কিউরেট করে দিতে হবে। তাহলে আর কোন সমস্যা থাকবে না। দুধ দাঁতের গুরুত্ব এ কথা আমরা সবাই জানি, প্রতি চোয়ালে ১০টি করে মোট ২০টি দুধ দাঁত আছে। অন্যদিকে উপর ও নিচের চোয়াল মিলে ১৬টি করে মোট ৩২টি স্থায়ী দাঁত রয়েছে। ৩২টি স্থায়ী দাঁতের মধ্যে উপর এবং নিচের চোয়াল মিলে মোট ৪টি আক্কেল দাঁত থাকে। দুধ দাঁতের মধ্যে ক্যানাইন এবং দুটি মোলার দাঁত অর্থাৎ ঈ.উ এবং ঊ নম্বর দুধ দাঁত পাশাপাশি মুখের চোয়ালে যে পরিমাণ স্থান নিয়ে অবস্থান করে সে স্থানটি স্থায়ী প্রথম প্রিমোলার, দ্বিতীয় প্রিমোলার এবং প্রথম মোলার দাঁত অর্থাৎ ৪, ৫ এবং ৬ নম্বর দাঁতের পাশাপাশি দখলকৃত স্থানের চেয়ে বেশি। এই বাড়তি স্থান বা স্পেসকে ‘লি ওয়ে স্পেস’ বলা হয়। ‘লি ওয়ে স্পেসের’ বিরাট গুরুত্ব রয়েছে। মুখের অভ্যন্তরে স্থায়ী দাঁতের সুন্দর অবস্থানের জন্য লি ওয়ে স্পেস প্রয়োজন। যদি কোন কারণে দুধ দাঁতের ঊ নম্বর দুধ দাঁত অর্থাৎ মোলার দুধ দাঁত ফেলে দিতে হয়, সে ক্ষেত্রে স্থায়ী মোলার দাঁত অর্থাৎ ৬ নম্বর দাঁত মধ্যরেখা বরাবর সামনের দিকে বেঁকে আসে। এর অর্থ হলো স্থায়ী প্রথম মোলার দাঁত লি ওয়ে স্পেস ধীরে ধীরে দখল করে নেয়। ফলে দ্বিতীয় প্রিমোলার দাঁত ঠিকভাবে উঠতে পারে না। উপরের দাঁতের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বিরাজমান। তবে পার্থক্য এতটুকুই যে, ঊ নম্বর দুধ দাঁত ফেলে দিলে উপরের প্রথম স্থায়ী মোলার দাঁত নিচের প্রথম স্থায়ী মোলার দাঁতের চেয়ে একটু ধীর গতিতে লি ওয়ে স্পেস দখল করে নেয়। লি ওয়ে স্পেস নষ্ট হলে : কোন কারণে লি ওয়ে স্পেস নষ্ট হয়ে গেলে সামনের দাঁত আঁকাবাঁকা হতে পারে। আবার একটির ওপর আরেকটি দাঁত উঠতে পারে। লি ওয়ে স্পেস নষ্ট হয়ে গেলে দাঁতের স্বাভাবিক মোলার রিলেশনশিপ নষ্ট হয়ে যায়। মোলার রিলেকশনশিপ নষ্ট হয়ে গেলে অর্থোডনটিক চিকিৎসা অর্থাৎ আঁকাবাঁকা বা ফাঁকযুক্ত দাঁতের চিকিৎসা করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ স্থায়ী মোলার ৬ নম্বর দাঁত হলো অর্থোডনটিক চিকিৎসার মূল চাবিকাঠি। আবার স্থায়ী ৬ নম্বর দাঁত অর্থাৎ প্রথম মোলার দাঁত কোন কারণে ফেলে দিলেও মোলার রিলেশনশিপ নষ্ট হতে পারে। প্রতিকারের উপায় ক. কোন কারণে ঊ নম্বর দুধ দাঁত নির্দিষ্ট সময়ের আগে ফেলে দিলে ডেন্টাল সার্জনের কাছে গিয়ে আপনার শিশুকে স্পেস মেনটেনার ব্যবহার করতে দিন। তা ছাড়া, বর্তমানে আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। তাহলে লি ওয়ে স্পেস ঠিক থাকবে। খ. প্রথম স্থায়ী মোলার দাঁত কোন অবস্থাতেই ফেলতে যাবেন না। কারণ মোলার রিলেশনশিপ নষ্ট হয়ে গেলে আঁকাবাঁকা দাঁতের চিকিৎসা করা জঠিল এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। রুট ক্যানেল চিকিৎসা বা প্রয়োজন হলে এপিসেকটমি করে প্রথম মোলার দাঁত রাখতে হবে। গ. দুধ দাঁত পড়ার নির্দিষ্ট একটি সময় রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে কোন অবস্থাতেই দুধ দাঁত ফেলা যাবে না। কারণ দুধ দাঁতের বিশাল গুরুত্ব রয়েছে। দুধ দাঁতের সঠিক যতœ নিলে আপনার স্থায়ী দাঁত সুন্দর ও পরিপাটি হবে। তাই দুধ দাঁতকে ফেলনা মনে না করে দুধ দাঁতের কোন সমস্যার সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য অভিভাবকদের সন্তানের দাঁতের যতেœর ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। শিশুর লি ওয়ে স্পেস কোনভাবেই নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। আর তখনই সুন্দর, পরিপাটি দাঁতের অধিকারী হবে আপনার সন্তান। ডা. মোঃ ফারুক হোসেন মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ মোবাইল : ০১৮১৭৫২১৮৯৭ ই-মেইল : [email protected]
×