ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ তহবিল সংগ্রহে ‘হাঁটি এক মাইল’ কর্মসূচী

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২২ মার্চ ২০১৬

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর  নির্মাণ তহবিল সংগ্রহে ‘হাঁটি এক মাইল’ কর্মসূচী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে একদল অভিযাত্রী দেশমাতার মুক্তির অভিপ্রায়ে ‘বিশ^ বিবেক জাগরণ পদযাত্রা’য় হেঁটে অসামান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে বর্তমান প্রজন্মের ‘অভিযাত্রী’ নামের সংগঠন গত তিন বছর ধরে শহীদ মিনার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত পদযাত্রা করে আসছে। তাদের এই পায়ে হাঁটা কর্মসূচীতে এবার যুক্ত হচ্ছে নবমাত্রা। এবারের পদযাত্রা হবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে নির্মাণ তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। ‘শোক থেকে শক্তি : অদম্য পদযাত্রা’ সেøাগানে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হবে এই পদযাত্রা। শেষ হবে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে। ৩৬ মাইল দীর্ঘ এই পদযাত্রায় সবাই সবটুকু পথ হাঁটতে না পারলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নাগরিকরা আগারগাঁওয়ে নির্মিতব্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্থায়ী ভবন নির্মাণ তহবিলে ন্যূনতম ১ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে হাঁটতে পারবেন এক মাইল পথ। পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারী এক মাইল হাঁটা পদযাত্রীদের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থেকে স্মারক সনদ প্রদান করা হবে। যে কেউ ৩০০ টাকার শুভেচ্ছা মূল্যে স্মারক পোলো-শার্ট সংগ্রহ করতে পারবেন। পদযাত্রায় অংশ নিতে আগ্রহীরা সেগুনবাগিচার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কার্যালয় অথবা ফেসবুকের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন। ফেসবুকের ঠিকানা হচ্ছে : মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে হবে ০১৯৮২১০০১৪৫। সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর উন্মুক্ত মঞ্চে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, এভারেস্টজয়ী প্রথম নারী পর্বতারোহী নিশাত মজুমদার, অভিযাত্রী সংগঠনের ইনাম আল হক, জাকারিয়া বেগ ও শরীফ রেজা মাহমুদ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অভিযাত্রী পরিচালিত ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণে হাঁটি এক মাইল’ শীর্ষক এই পদযাত্রা ২৬ মার্চ ভোর ৬টায় শুরু হবে শহীদ মিনার থেকে। এই পদযাত্রার মাধ্যমে পদযাত্রী দল অনুভবের সঙ্গে শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় স্মরণ করবে একাত্তরকে। আয়োজন সম্পর্কে মফিদুল হক বলেন, ‘এ পদযাত্রার উদ্দেশ্য শুধু অর্থ সংগ্রহ নয়। এই অভিযাত্রার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সময়কে স্মরণ করা। হাঁটার মাধ্যমে ইতিহাস স্পর্শ করে যাওয়া হবে। এতে অংশগ্রহণকারীরা অনুভব করবে একাত্তরকে। আশা করছি অন্তরের তাগিদ থেকে মানুষ এই পদযাত্রায় অংশ নেবেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণে সবার অংশীদারিত্বের লক্ষ্যেই এ পদযাত্রার আয়োজন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পদযাত্রীরা শহীদ মিনার থেকে হাঁটা শুরু করে জগন্নাথ হল বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর ফুলার রোড ধরে একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সামনে দিয়ে মুক্তি সংগ্রামে বাঙালীর আশা-আকাক্সক্ষার বাতিঘর বঙ্গবন্ধুর ধানম-ি ৩২ নম্বর বাড়ির দিকে এগিয়ে যাবে। এরপর মিরপুর সড়ক ধরে পদযাত্রাটি এগিয়ে যাবে শ্যামলীর এসওএস শিশু পল্লীর উদ্দেশে। মুক্তিযুদ্ধের পর বাহাত্তরে যুদ্ধ শিশুদের ঠিকানা হয়ে উঠেছিল এই এসওএস শিশু পল্লী। এর লম্বা পথ হেঁটে মিরপুর বাঙলা কলেজ বধ্যভূমির পাশ দিয়ে পদযাত্রী দল পৌঁছে যাবে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে। সেখানে মোহাম্মদপুর শহীদ শরীরচর্চা কলেজের পাকিস্তানী নির্যাতন ক্যাম্প এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমি থেকে আসা অভিযাত্রীদের বরণ করে একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবে অভিযাত্রা দলটি। এরপর চিড়িয়াখানা সড়ক ধরে বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভেতর দিয়ে তুরাগ নদীর এসে গগনের সূর্য মাথার ওপর রেখে নৌকায় পাড়ি দেয়া হবে নদী। নদী পার হতে হতে পদযাত্রী দলের মানসপটে ভেসে উঠবে একাত্তরের কথা। একাত্তরে শরণার্থীরা এভাবেই নৌকায় চেপে পাড়ি দিয়েছেন নিরুদ্দেশ গৃহহীন পথ। গেরিলা যোদ্ধারা এমনি করেই রাতের অন্ধকারে রাইফেল হাতে নদী পাড়ি দিয়েছেন শত্রু সেনা নিধনে। এরপর অভিযাত্রা দলের এক অ-নাগরিক পথ শুরু হবে। সেখান থেকে হিজল গাছের তলায় কিছুক্ষণ বুক ভরে শ্বাস নিয়ে আবার শুরু হাঁটা। পায়ে পায়ে পদযাত্রী দল এগিয়ে যাবে সাদুল্ল্যাপুরের শতবর্ষী বটমূলে দেশমাতার ¯েœহ মায়াময় আঁচলতলে। পরবর্তী পথে অভিযাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করবে সাদুল্ল্যাপুরের গোলাপ বাগান। আকরাইনে মধ্যাহ্নভোজ সেরে পদযাত্রীদল বিকেলে ছায়ার টানে খাগাইন, আইয়ুকপাড়া, বেলমা, কুটুরিয়া, বিশমাইল হয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দিয়ে হেঁটে স্মৃতিসৌধে পৌঁছবে সন্ধ্যার সূচনাতে। সমাপ্ত হবে ৩৬ মাইল হাঁটা কর্মসূচী।
×