ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানেও আগ্রহী

গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে তৃতীয় কোন দেশকে যুক্ত করতে রাজি চীন

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২২ মার্চ ২০১৬

গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে তৃতীয় কোন দেশকে যুক্ত করতে রাজি চীন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে তৃতীয় কোন দেশকে যুক্ত করতে রাজি চীন। এছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী দেশটি। বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানেও চীনের আগ্রহ রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অস্তিত্ব রয়েছে কিনা সে বিষয়ে তদন্তের আগে মন্তব্য করতে চায় না চীন। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস এ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াং এ কথা বলেন। আগামীতে বাংলাদেশে চীনের সামরিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান চীনা রাষ্ট্রদূত। ডিক্যাব টক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টি ও সাধারণ সম্পাদক পান্থ রহমান। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, বঙ্গোপসাগরে এখন পর্যন্ত কোন গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মিত হয়নি। চীন গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে সর্বাত্মকভাবে কাজ করতে চায়, সোনাদিয়া বা পায়রা বাংলাদেশের যেখানেই গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে তৃতীয় যে কোন দেশকেও যুক্ত করতে রাজি চীন। চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বার্থেই গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ জরুরী। কেননা বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে গভীর সমুদ্র বন্দর নেই। সে কারণে সিঙ্গাপুর অথবা শ্রীলঙ্কার বন্দরে গিয়ে পণ্য স্থানান্তরিত করতে হয়। তাই বাংলাদেশ গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করতে পারলে, এ দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলেও তিনি জানান। বাংলাদেশে আইএসের উপস্থিতি রয়েছে কিনা সে বিষয়ে চীনের পর্যবেক্ষণ জানতে চাইলে মা মিং কিয়াং বলেন, তদন্ত শেষ হওয়ার আগে আইএসের উপস্থিতি নিয়ে কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আইএস রয়েছে কিনা সে বিষয়ে বাংলাদেশের পুলিশ ও র‌্যাবের তদন্তের ওপর নির্ভর করতে চায় চীন। আমি একজন কূটনীতিক হিসেবে আগেই কোন অনুমান করতে পারি না। আর অনুমানের ভিত্তিতে চীনের লোকজনকে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতে বলতে পারি না। চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, গত বছর ভারতে ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, পাকিস্তানে ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যুক্তরাজ্যে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে চীন ব্যাপকহারে বিনিয়োগ করেছে। এই বিনিয়োগের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় চীন। ‘একই বন্ধন একই রাস্তা’-এ নীতিতে এ অঞ্চলের উন্নয়নে শরিক হতে চায় চীন। ভূ-প্রাকৃতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ একটি কৌশলগত স্থানে অবস্থান করছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। গত দুই বছরে চীনা বিনিয়োগ কম থাকলেও চলতি বছর প্রচুর বিনিয়োগকারী এ দেশে আসবে। বিশেষ করে জ্বালানি খাত, সরকারী প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ ও তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী চীন। চীনা রাষ্ট্রদূত জানান, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। আগামী ৫ বছরে চীন বিদেশে থেকে ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করবে। বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে চীনে রফতানি করলে বাংলাদেশ লাভবান হবে এবং বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমে আসবে বলেও জানান রাষ্ট্রদূত। মা মিং কিয়াং বলেন, বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে যেমন ২০২১ সালকে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, চীনও তেমনি ওই বছরটিকে একইভাবে টার্গেট ধরেছে। কারণ ওই বছরে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১০০ বছর পূর্ণ হবে। বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় চীনের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি এখন কোন দেশের একক সমস্যা নয়। এটি এখন বৈশ্বিক সঙ্কট। একটি দেশ যত শক্তিশালীই হোক, সে একা এটির মোকাবেলা করতে পারবে না। তেমনি একটি দেশ যতই নিম্নে অথবা শীর্ষে থাকুক না কেন, এর আক্রমণ থেকে রেহাই পাবে না। সকলে মিলেই এটির মোকাবেলা করতে হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের গভীর বন্ধুত্ব রয়েছে। তাই বাংলাদেশ চাইলে চীন সামরিক খাতেও সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি জানান। অপর এক প্রশ্নে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে চীনের আগ্রহ রয়েছে। সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করে চীনের এমন কয়েকটি কোম্পানি রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার চাইলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সহায়তা দেয়া হবে। আমাদের দিক থেকে এ বিষয়ে আগ্রহের কোন ঘাটতি নেই। ডিক্যাব টকয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়ে থাকে। বিশেষ করে চীনের মুসলমানরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে গণমাধ্যমে এমন ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার হয়ে থাকে। তবে আমরা বলতে চাই, মুসলিম শীর্ষ জনসংখ্যার দিক থেকে চীনের অবস্থান এখন নবম। আমাদের দেশে অনেক মুসলিম রয়েছে, তবে চীনের আইন ও সংবিধানের মাধ্যমে তাদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঢাকায় কিছুদিন আগে একটি আন্তর্জাতিক আর্ট সামিট হয়েছিল। সেই সামিটে আমি গিয়েছিলাম। সেই সামিট নিয়ে অভিযোগ করা হয়েছিল, তিব্বতের কয়েকটি শিল্পকর্ম নিয়ে চীনের আপত্তি রয়েছে। সেটাও ছিল একটি ভিত্তিহীন সংবাদ। তিনি বলেন, ঐতিহাসিক দিক দিয়েও বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক নিবিড়। মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘জ্ঞান অর্জন করতে হলে চীনে যাও’। আর আমরা বলে থাকি জ্ঞান অর্জন করতে হলে বাংলায় যাও। কেননা এই বাংলা থেকেই হাজার বছর আগে অতীশ দীপঙ্কর চীনে গিয়ে জ্ঞান বিতরণ করে এসেছিলেন। তাছাড়া এ অঞ্চল থেকেই আমরা গণিত, দর্শন ও বিশেষ করে গৌতম বুদ্ধের বাণীর অমূল্য শিক্ষা অর্জন করে এসেছি। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে জানিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের মধ্যে এখন শক্তিশালী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে। দিনে দিনে এই সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের আরও সফর হবে বলেও তিনি জানান।
×