ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফিলিপিন্স কালো টাকার ‘নিরাপদ গন্তব্য’

প্রকাশিত: ০৪:০২, ২২ মার্চ ২০১৬

ফিলিপিন্স কালো টাকার ‘নিরাপদ গন্তব্য’

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার বা ৮০৮ কোটি টাকা চুরির ঘটনা বিশ্বের ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের নাড়া দিয়েছে। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন বিশ্বের অর্থ ব্যবস্থাপকরা। তবে ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ’ বেরিয়ে আসছে। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ফিলিপিন্সের অর্থ ব্যবস্থার বড় দুর্বলতা বেরিয়ে এসেছে। এতে ফিলিপিন্সকে কালো টাকার ‘নিরাপদ গন্তব্য’ বলে মনে করছেন দেশটির আইনপ্রণেতারা। ফিলিপিন্সের সংবাদপত্র ইনকোয়্যারারের অনলাইনে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ রহস্যময় হ্যাকাররা চুরির সঙ্গে সঙ্গে ফিলিপিন্সে পাঠিয়েছে। এতে ‘জন লি ক্যারি’ উপন্যাসের গোয়ান্দোকাহিনীর বাস্তব চিত্রায়ন হয়েছে। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপিন্স কালো টাকার ‘নিরাপদ গন্তব্য’ হিসেবে উদঘাটিত হয়েছে। ব্যাংক হিসাবধারীদের স্বার্থরক্ষায় বিশ্বের সবচেয়ে ‘কঠোর ব্যাংকিং গোপনীয়তা আইন’ রয়েছে ফিলিপিন্সে। তবে এসব আইন দেশটির জুয়াড়ি প্রতিষ্ঠান ক্যাসিনোগুলোর জন্য প্রযোজ্য নয়। এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে দেশটির সিনেটর সের্জিও ওসমেনা বলেন, ‘আইনের বড় ফাঁকফোকর থাকার কারণে কালো বা মন্দ টাকার গন্তব্য হিসেবে ফিলিপিন্স অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এখানে সহজেই অর্থ পাচার করা যায়।’ অর্থ পাচার ঠেকাতে দেশটির আইনে আরও কড়াকড়ি প্রয়োজন বলে মনে করেন সের্জিও ওসমেনা। প্রতিবেদনে বলা হয়, চোররা চুরি করে পার পেলে আর চিন্তা থাকে না। অর্থ ফিলিপিন্সের ব্যাংক ও ক্যাসিনোগুলো দিয়ে দ্রুত দেশটির বাজারে মিশে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য চারদিন চেষ্টা করেছিল দেশটির সরকার। কিন্তু ততক্ষণে ওই অর্থ দেশটির ব্যাংক ও ক্যাসিনো দিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের খোয়া যাওয়া অর্থ ছাড় নিয়ে মৃত্যু ভয়ের গল্প, ঘুষ, ছায়া ব্যবসা এবং ভিলেন অথবা ভুক্তভোগী এক ব্যাংক ব্যবস্থাপকের গল্প শোনা গেছে। ফিলিপিন্সের মাকাতি নগরের জুপিটার স্ট্রিটের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) শাখার ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতোর হাত দিয়েই দেশটিতে অর্থ ছাড় হয়। তিনি এরই মধ্যে দেশত্যাগের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। বিমানবন্দর থেকে তাকে ফেরত পাঠানো হয়। দেগুইতো বলেন, ‘আমি কোন অনিয়ম করিনি। যদি এটা দুঃস্বপ্ন হতো, আমি এখনই জেগে উঠতে চাই। আমি জীবনের হুমকি নিয়ে দিন কাটাচ্ছি।’ ইনকোয়্যারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী যেই হোক না কেন দেগুইতোর শাখা দিয়ে অর্থ ছাড় হয়েছে। তিনি সবকিছুর জন্য ব্যাংকটির প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জো তান দায়ী বলে অভিযোগ করছেন। তবে ব্যাংকটির প্রেসিডেন্ট তা অস্বীকার করেছেন। অর্থ ছাড়ের ঘটনায় দেগুইতো এরই মধ্যে ফিলিপিন্সের তদন্ত দলকে বিশ্বাস করাতে পেরেছেন যে তিনি আর যাই হোক ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী নন। ফিলিপিন্সের সিনেটর রাল্ফ রেক্তো বলেন, এটি একটি বড় ধরনের কর্মকা-। এটি ফিলিপিন্সের কেউ একা করেনি। জুপিটার শাখা থেকে অর্থ সরানোর সময় ব্যাংকটিতে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ ছিল বলে দেশটির অর্থ পাচারবিরোধী পর্ষদ (এএমএলসি) এরই মধ্যে প্রমাণ পেয়েছে। আর আরসিবিসির শাখা ব্যবস্থাপক ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের পাল্টা অভিযোগের কারণে এএমএলসির তদন্তকারী দল বিভ্রান্ত হয়েছে বলে ইনকোয়্যারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের খোয়া যাওয়া অর্থ ৫ ফেব্রুয়ারি ফিলিপিন্সের আরসিবিসির জুপিটার শাখা দিয়ে দেশটির বাজারে প্রবেশ করে। এই অর্থ ওই ব্যাংক শাখার চারটি হিসাবে জমা হয়। ওই সব হিসাব শুধু এই অর্থ লেনদেনের উদ্দেশ্যেই খোলা হয়। আরসিবিসির শাখায় যাওয়া অর্থের কিছু অংশ উইলিয়াম গো নামে এক চায়না ব্যবসায়ীর হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। তবে ওই ব্যবসায়ী দাবি করেন তার স্বাক্ষর জাল করে ওই হিসাব খোলা হয়েছে। আরসিবিসিতে যাওয়া অর্থের কিছু অংশ ফিলরেম নামে একটি বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়কারী ব্রোকারে যায়।
×