ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অতি মূল্যায়িত দরে বাজার থেকে টাকা তুলছে একমি

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২২ মার্চ ২০১৬

অতি মূল্যায়িত দরে বাজার থেকে টাকা তুলছে একমি

অপূর্ব কুমার ॥ অতি মূল্যায়িত দরে পুঁজিবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করতে যাচ্ছে একমি ল্যাবরেটরিজ। কাট অব প্রাইস হিসাবে ৮৫.২০ টাকা ধরে কোম্পানিটি ৫ কোটি শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে তুলবে ৪২৬ কোটি টাকা, যা কোম্পানিটির চাহিদার থেকে বেশি। এমতাবস্থায় ঝুঁকিতে পড়বে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ। আাইপিওতে আসার আগে কোম্পানিটি আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশ এ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড পরিপালনও করেনি। তাই প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে অংশগ্রহণকারী সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এছাড়া কোম্পানির বিডিংয়ের দর নিয়ে বাজার সংশ্লিষ্ট মহলের কিছুটা সংশয় রয়েছে। তাই পুরো বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়াতে তারা কিছুটা গলদ দেখছেন। কারণ এর আগে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন নামের কোম্পানিটিরও সর্বোচ্চ দর ৭২ টাকায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহমুদ ওসমান ইমাম বলেছেন, একমি ল্যাবরেটরিজ বেশি দরে টাকা সংগ্রহ করতে যাচ্ছে। কোম্পানিটি এত দর পাওয়ার যোগ্য না। এছাড়া একমির সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন ঠিক হয়নি। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এই দর নির্ধারণ করেছেন। তবে এই প্রতিযোগিতা যে কতটুকু প্রতিযোগিতা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এদিকে কোম্পানিটির আইপিওতে অতি মূল্যায়িত দরে বাজারে আইপিও ছাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানিটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। কোম্পানির বক্তব্য জানতে তার কাছে ই-মেইলে ছয়টি প্রশ্ন পাঠানো হয়। এছাড়া একাধিকবার তার মোবাইলে যোগাযোগ করেও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, একমি ল্যাবরেটরিজ ২০১২ সালের ২৯ এপ্রিল ৬০ টাকা (প্রিমিয়াম ৫০ টাকা) করে শেয়ার ইস্যু করার জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কাছে আবেদন করে। সেই কোম্পানিটি শুধু বুক বিল্ডিংয়ের কারণে এখন ৮৫.২০ টাকা করে সংগ্রহ করবে। এমতাবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতায় কারসাজি হয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। এর আগে বিভিন্ন কোম্পানির ক্ষেত্রে সেটি ঘটতে দেখা গেছে। কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে চলমান পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ ৫০.৮১ টাকা সংগ্রহের অধিকারী। চলমান পদ্ধতি অনুযায়ী, ৫ বছরের ওয়েটেড ইপিএসের সঙ্গে ১০ গুণ করে সর্বশেষ সময়ের শেয়ার প্রতি সম্পদ যোগ করতে হয়। এরপর ২ দিয়ে ভাগ করতে হয়। এ হিসাবে একমির দর হয় ৫০.৮১ টাকা। একমি কোম্পানি প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ৩ কোটি ৯৬ লাখ ৩১ হাজার ১০০টি শেয়ার ৫২ টাকা (প্রিমিয়াম ৪২ টাকা) দরে শেয়ার বিক্রি করেছে। আবার একই কোম্পানি এখন বাজার থেকে টাকা তুলতে যাচ্ছে ৮৫.২০ টাকা করে। কিন্তু সাধারণত প্লেসমেন্টের চেয়ে কম দরে শেয়ার ইস্যু করে থাকে কোম্পানিগুলো। এমতাবস্থায় যে কোম্পানি নিজে ৫২ টাকা করে প্লেসমেন্টে শেয়ার ইস্যু করে, সেই কোম্পানি পরবর্তীতে ৮৫.২০ টাকা করে ইস্যুর পেছনে সন্দেহজনক কারণ আছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, প্রতিটি শেয়ারে ৮৫.২০ টাকা টাকা করে একমিতে বিনিয়োগের চেয়ে ব্যাংকে স্থায়ী আমানত করা শ্রেয়। কোন ধরনের ঝুঁকি ছাড়াই বিনিয়োগকারীরা একমির থেকে বেশি মুনাফা করতে পারবে ব্যাংকে আমানতের মাধ্যমে। দেখা গেছে, একমির সর্বশেষ বছরের ইপিএস অনুযায়ী ৮৫.২০ টাকা ফেরত পেতে (পিই) ১৫ বছর ও ৫ বছরের ওয়েটেড ইপিএস অনুযায়ী ২৪ বছর সময় লাগবে। কিন্তু ব্যাংকে রাখলে ৯ শতাংশ হারে সুদ পেলেও ১১ বছর সময় লাগবে। কোম্পানিটির প্রসপেক্টাস যাচাই-বাছাই শেষে দেখা গেছে, আলফা ক্যাপিটাল প্লেসমেন্টে একমির ৫ লাখ শেয়ার কিনেছে। এছাড়া পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১০ লাখ, ঢাকা ব্যাংক ৫ লাখ, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স ৫ লাখ, সাউথ ইস্ট ব্যাংক ২৮ লাখ ৮৪ হাজার ৬০০টি, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স ১০ লাখ, ইউসিবিএল ৭৬ লাখ ৯২ হাজার ৩০০টি ও ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স ৫ লাখ শেয়ার কিনেছেন একই দরে। অথচ এই কোম্পানিগুলো একমির ইন্ডিকেটিভি দর নির্ধারণে ৮০ টাকা বলেছে। এক্ষেত্রে একমি যোগ্য না হলেও প্লেসমেন্টের শেয়ার বেশি দরে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ৮০ টাকা বলেছে বলে অভিযোগ আছে। কোম্পানিটির ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। রেজিস্টার টু দ্যা ইস্যু হিসেবে রয়েছে প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।
×