ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ১০ ও ১১ জুলাই

প্রকাশিত: ০৮:০৮, ২১ মার্চ ২০১৬

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ১০ ও ১১ জুলাই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কারণে ২০তম জাতীয় সম্মেলন সাড়ে তিন মাস পিছিয়ে দিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্ধারিত ২৮ মার্চের পরিবর্তে দলটির ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন হবে আগামী ১০ ও ১১ জুলাই। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনে আগামী তিন বছরের জন্য দলটির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। বৈঠকে স্পর্শকাতর বিষয়ে মন্ত্রী-নেতাদের অতিকথন না করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনায় দলের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ উল আলম লেনিনের দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাস, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে দুই মন্ত্রীর বক্তব্য এবং সর্বশেষ রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির বিষয়ে কিছু মন্ত্রী-নেতার অতিকথনের সমালোচনা করেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন নেতা। এ সময় নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিষয়ে নূহ উল আলম লেনিন দুঃখ প্রকাশ করেন বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানিয়েছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সবার বক্তব্য ধৈর্য সহকারে শুনেন। বৈঠকে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তব্য দিয়ে ‘ক্রাইসিস’ সৃষ্টি করছেন। কেউ কেউ কোর্টের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে কাঠগড়ায়ও দাঁড়াচ্ছেন। এতে একদিকে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে, অন্যদিকে বিরোধী দলের কাছে ইস্যু চলে যাচ্ছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যখন বিচক্ষণভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন, তখন সরকারের নীতির বাইরে গিয়ে বক্তব্য রেখে নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি করা হচ্ছে। মোহাম্মদ নাসিমের এসব বক্তব্যে বৈঠকে উপস্থিত অধিকাংশ নেতা সমর্থন জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা কেন এ ধরনের বক্তব্য রাখেন? বৈঠকের সূচনা বক্তব্যেই জাতীয় সম্মেলন পেছানোর ইঙ্গিত দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের পার্টির যে ডেলিগেট ও কাউন্সিলররা আসে, তা তৃণমূল থেকে আসে। আমরা নির্বাচনকে গুরুত্ব দেই। নির্বাচনকে গুরুত্ব দিই বলেই তারা নির্বাচন চলাকালীন সম্মেলনে আসতে পারবে না। আর সম্মেলনই একটা সময়, যখন সকলে মিলে আসে। তাই সেই সুযোগটা তাদের দিতে হবে। তাই তারিখটা একটু সমন্বয় করতে হবে। এরপর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সবকিছু বিবেচনা করেই আগামী ১০ ও ১১ জুলাই ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত হয়। রুদ্ধদ্বার বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী ইতোপূর্বে তাকে হত্যা প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে বলেন, বহুবার চেষ্টা করেছে, কিন্তু আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। আল্লাহ কাজ দিয়েছেন। যতক্ষণ আমার কাজ শেষ না হবে, ততক্ষণ আল্লাহই আমাকে হেফাজত করবেন। দেশবাসীর দোয়া চাই। নিশ্চয়ই দেশবাসীর কল্যাণের জন্য আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। সূত্র জানায়, ২০২০ সাল বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। এই জন্মশতবার্ষিকী জাতীয় ও দলীয়পর্যায়ে ব্যাপকভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বৈঠকে খুব দ্রুত জন্মশতবার্ষিকী পালনের জন্য একটি শক্তিশালী কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকেরা শীঘ্রই বৈঠকে বসে কমিটির বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন। এয়াড়া বৈঠকে কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, বাগেরহাট, পাবনা, টাঙ্গাইল, লক্ষ্মীপুরসহ ৯ জেলা কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল হয়েছিল চার বছর আগে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। সে অনুযায়ী গত ২৯ ডিসেম্বর বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও কাউন্সিল করতে তিন মাস সময় নেয় দলটি। গত ৯ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে ২৮ মার্চ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু দিন-ক্ষণ চূড়ান্ত করার পর পরই নির্বাচন কমিশন ইউনিয়ন পরিষদের তফসিল ঘোষণা করে। কয়েক দফায় এই নির্বাচন জুন মাস পর্যন্ত চলবে। এসব কারণেই আওয়ামী লীগ ফের তারিখ পরিবর্তন করে ১০ ও ১১ জুলাই সম্মেলনের দিন-ক্ষণ চূড়ান্ত করে।
×