ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ আজ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২১ মার্চ ২০১৬

বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ আজ

মিথুন আশরাফ, ব্যাঙ্গালুরু থেকে ॥ তাসকিন আহমেদের জন্য কেঁদেই ফেললেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা! অঝোর ধারায় চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকল! একজন ক্রিকেটার অবৈধ বোলিং এ্যাকশনের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন। তারজন্য কোন অধিনায়ক কেঁদেছেন। এমন নজির কি পৃথিবীতে আছে? একটিও নেই। এতেই বোঝা যায়, শুধু দলের প্রতি নয়, দলের ক্রিকেটারদের প্রতিও মাশরাফির ভালবাসা কতটুকু। সেই ভালবাসায় আজ থেকে যেন প্রতিজ্ঞাও জড়িয়ে পড়ল। ‘সুপার টেনে’র একটি ম্যাচ গেছে তো গেছে। আজ যে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ রয়েছে, এরপর যে বাকি দুটি ম্যাচ আছে, ম্যাচগুলোতে প্রতিপক্ষকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে তাসকিন শুদ্ধ থাকার পরও যে অশুদ্ধ বানিয়ে দেয়া হলো, সেই প্রতিবাদ করা হবে। এছাড়া যে প্রতিবাদ করার ভাষা আর নেই ক্রিকেটারদের। সবার মুখে একটিই নাম, ‘তাসকিন, তাসকিন’। বাংলাদেশের বিশ্বকাপতো বলতে গেলে শেষ হয়ে গেল এ এক তাসকিনের জন্যই! আসলে তাসকিনের জন্য নয়, হবে আইসিসির জন্য। ব্যাঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি২০ বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে যখন নামবে বাংলাদেশ দল, এরআগে বাংলাদেশ শিবিরেও সেই ‘তাসকিন’ নামটিই শুধু উচ্চারিত হচ্ছে। আইসিসি শনিবার যেন বাংলাদেশ দলকে ওলোট-পালোটই করে দিয়েছে। বিপদে ফেলে দিয়েছে। তাসকিনের সঙ্গে আরাফাত সানিকেও অবৈধ বোলিং এ্যাকশনের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। সানিকে নিয়ে যতটানা চিন্তা করা হচ্ছে, তাসকিনকে নিয়ে সেই চিন্তা অনেক বেশি। কারণ, তাসকিন একের পর এক ম্যাচ ভাল খেলে চলেছেন। তাছাড়া আইসিসি যেভাবে তাসকিনের বোলিংয়ে সমস্যা দেখেছে, তা সমস্যার মধ্যে পড়ে না। সবমিলিয়ে সবার ভেতরই এখন একটা শঙ্কা তৈরি হয়ে গেছে। আইসিসি কেন এমন করল, সেই প্রশ্নও উঠছে। তাসকিনকে নিয়ে অফসোসও করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচসহ ভারতের বিপক্ষে ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেও যে তাসকিনকে প্রয়োজন ছিল। কোথায় বাংলাদেশ দল নামবে অস্ট্রেলিয়াকে জবাব দিতে। বাংলাদেশে খেলতে না আসায়, সফর বাতিল করায় দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে বুঝিয়ে দেবে হারের ভয়েই বাংলাদেশে খেলতে আসেনি অস্ট্রেলিয়া; উল্টো বাংলাদেশ দলই চাপের মধ্যে পড়ে গেছে। তাসকিন ও সানি অবৈধ বোলিং এ্যাকশনের জন্য নিষিদ্ধ হওয়ায় এখন বিপাকে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। তবে সেই বিপাক আবার কেটেও যেতে পারে। তাসকিনকে হারানোয় দলের মধ্যে একটা মানসিক দুর্বলতা কাজ করছে। বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত অবস্থাও বিরাজ করছে। তবে মুস্তাফিজুর রহমান যে আজ খেলবেন, তাতে কাজও হয়ে যেতে পারে। প্রথমবারের মতো টি২০ বিশ্বকাপে খেলে প্রথমবারেই অসিদের বিপক্ষে খেলবেন মুস্তাফিজ। এ ‘কাটার’ মাস্টার অসিদেরও ভোগাতে পারে। ভোগানো যদি যায়, তাহলেই তাসকিনের অভাববোধ দূর হবে। না হলে হাহাকার বাড়বে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এরআগে বাংলাদেশ তিনটি টি২০ খেলেছে। সবকটিতে হেরেছে। তিনটিই টি২০ বিশ্বকাপের ম্যাচে। ২০০৭, ২০১০ ও ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে হেরেছে বাংলাদেশ। আজও কি তাই হবে? বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন, ‘আমরা অবশ্যই মাঠে নামবো জয়ের জন্য। সেটা যেই খেলুক না কেন। আমাদের প্রথম কাজই হবে জয়ের জন্য মাঠে নামা।’ সঙ্গে প্রতিবাদও খেলার মাধ্যমেই জানাতে চান মাশরাফি। সেই প্রতিবাদ আইসিসিকেই জানাতে চান, ‘সবচেয়ে ভাল হয় মাঠে প্রতিবাদটা জানাতে পারলে। আমি কোন সময় বাড়তি কথা বলতে পছন্দ করি না, সামনে কি হবে না হবে। আমরা অবশ্যই চাই সামনের ম্যাচটায় আমাদের ভাল ক্রিকেট খেলা হোক। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, আমরা কি অনুভব করছি নির্দিষ্ট খেলোয়াড়কে নিয়ে এবং আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট কিনা এই বিষয়ে। তারপরে আমাদের একটা সিস্টেম আছে, ওই সিস্টেমের বাইরেও আমরা যেতে পারি না। আমাদের মন এক জায়গায়, আমাদের করতে হবে অন্য কিছু! সানির বিষয়টা আমরা গ্রহণ করেছি। কিন্তু মনে তাসকিনের বিষয়টা চেপে রেখে কাজ করা খুবই কঠিন কাজ।’ তবে তাসকিনের বিষয়টি বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের যেমন দুর্বল করেছে, তেমনি মনের ভেতর জেদও ঢুকিয়ে দিয়েছে। সেই জেদে এখন জয় তুলে নিলেইতো হয়। বাংলাদেশ এবার টি২০ বিশ্বকাপে টিকে থাকবে। না হলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারলে বিদায় হওয়াও বিচিত্র নয়।
×