ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টানা হেঁচড়ায় শরণার্থীরা!

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২১ মার্চ ২০১৬

টানা হেঁচড়ায় শরণার্থীরা!

তুরস্ক হয়ে গ্রীসে পৌঁছানো সব অনিয়মিত অভিবাসী প্রত্যাশীকে ফেরত নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে ২০ মার্চ রোববার থেকে। প্রতি একজন অ-সিরীয় শরণার্থীকে তুরস্কে ফেরত পাঠানোর বিনিময়ে একজন করে সিরীয় শরণার্থীকে ইউরোপে প্রবেশাধিকার দেয়া হচ্ছে। একে অভিহিত করা হয়েছে ‘একটির প্রবেশ, একটির প্রস্থান’ নীতি। এ নীতির আওতায় যে সব শরণার্থী গ্রীসে পৌঁছবেন কিন্তু অভিবাসনের অনুমতি পাবেন না, তাদেরই ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বিনিময়ে শরণার্থী সঙ্কট মোকাবেলায় ইইউ থেকে কোটি কোটি ইউরো অর্থ সহায়তা পাবে তুরস্ক। সেই সঙ্গে ইউরোপীয় দেশগুলোতে তুর্কি নাগরিকদের জন্য ভিসামুক্ত ভ্রমণের অনুমতি দেয়া হয়েছে, যা শর্তসাপেক্ষ। তদুপরি দেশটির ইইউর সদস্যপদ প্রাপ্তির ক্ষেত্রও উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের উত্থান, পশ্চিমা হস্তক্ষেপ ও সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের কারণে প্রতিদিনই হাজার হাজার শরণার্থী ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এদের মধ্যে বড় একটি অংশ তুরস্ক হয়ে গ্রীসের বিভিন্ন দ্বীপে যাচ্ছে। শরণার্থীদের অবাধ প্রবাহ বন্ধ করতে তুরস্কের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে শেষ পর্যন্ত একটি চুক্তিতে উপনীত হয়েছে ইইউ। ফেরত পাঠানোর তালিকায় অবশ্য কোন সিরীয় শরণার্থী থাকছে না। অন্য দেশীয় শরণার্থীদের নিজ দেশে বসবাসের ব্যবস্থা করবে তুরস্ক। গত ১৫ মাসে এ অঞ্চলে ১২ লাখেরও বেশি প্রবেশ করেছে। কেবল গ্রীসেই ১০ লাখের বেশি প্রবেশ করেছে। বেশি ধাক্কায় পড়েছে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল দেশ গ্রীস। তুরস্ক তাদের উপকূল থেকে আশ্রয়প্রত্যাশীরা যেন গ্রীসের উদ্দেশ্যে সাগর পথে পাড়ি দিতে না পারে, তা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। গ্রীসে শরণার্থীদের দুরবস্থা এখন চরমে। তারা মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন। সেখানে শরণার্থী শিবির শুধু নামেই অভিবাসন প্রত্যাশীদের আশ্রয়কেন্দ্র। আদতে সুস্থ জীবনযাপনের কোন সুযোগ-সুবিধাই নেই। মানুষের চাপে ভেঙ্গে পড়েছে সব ব্যবস্থা। শৃঙ্খলা, ব্যবস্থাপনাÑ সব কিছুরই অভাব প্রকট। কিন্তু বদলে গেছে পরিস্থিতি। ইউরোপের কয়েকটি দেশ সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে গ্রীসে এলেও মেসিডোনিয়ার সীমান্তে গিয়েই ধাক্কা খেয়ে ফিরছে জনস্রোত। ইইউ মনে করে, তুরস্কের সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া শরণার্থী সঙ্কট নিরসন সম্ভব নয়। সে কারণে তারা তুরস্ককে সর্বোচ্চ ছাড়ও দিয়েছে। সেই সঙ্গে চায় অবৈধ অভিবাসন বন্ধ এবং শরণার্থীদের জীবনমান উন্নয়ন করার সঠিক আস্থা উদ্ভাবন। অবশ্য জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা বলকান অঞ্চল দিয়ে শরণার্থীদের ইউরোপ প্রবেশ বন্ধ করার বিরুদ্ধে সংস্থা মনে করে, রাজনৈতিক ও আর্থিক সুবিধা দেয়ার বিনিময়ে আশ্রয় প্রার্থীদের তুরস্কে পাঠানোর বিষয়টি বেআইনীও বিবেচিত হতে পারে। অভিবাসী ইস্যুতে নেয়া ইইউর নয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘিত হবে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আশ্রয়প্রার্থীকে ফেরত পাঠানো বা দেশান্তরী করা নিষিদ্ধ ও আইনবহির্ভূত। কিন্তু জাতিসংঘ কী এই পরিকল্পনা অকার্যকর করার অবস্থানে নেই। থাকলে তারা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করত। শরণার্থীদের নিয়ে এহেন টানা হেঁচড়া কতটা মানবিকÑ সে নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। কেন তারা শরণার্থী, সে প্রশ্নের মীমাংসা করা জরুরী। যাতে তারা তাদের স্বদেশই নিজ জন্মভূমে প্রত্যাবর্তন করতে পারেÑ সেই পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী সর্বাগ্রে।
×