ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গানমেলা নয়, শিল্পকলায় বৈশাখী সঙ্গীতমেলা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২১ মার্চ ২০১৬

গানমেলা নয়, শিল্পকলায় বৈশাখী সঙ্গীতমেলা হচ্ছে

সাজু আহমেদ ॥ এমআইবির (মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) ‘গানমেলা’ নয়, সম্মিলিত সঙ্গীত শিল্পী সোসাইটির উদ্যোগে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে হতে যাচ্ছে ‘বৈশাখী সঙ্গীতমেলা’। শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আগামী ১০ এপ্রিল থেকে মেলার প্রথমপর্ব শুরু হবে। এ প্রসঙ্গে সম্মিলিত সঙ্গীত শিল্পী সোসাইটির অন্যতম নেতা আশরাফ উদাস জনকণ্ঠকে জানান, আগামী ১০-১২ এপ্রিল পর্যন্ত মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এর পর মাঝে পাঁচ দিনের বিরতি থাকবে শিল্পকলা একাডেমির নিজস্ব প্রোগ্রামের কারণে। এর পর আবার সঙ্গীতের এই মিলনমেলা শুরু হবে ১৮ এপ্রিল থেকে। চলবে টানা ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত। আশরাফ উদাস আরও জানান, ১০ দিনের এই সুরের মেলায় ১০ গুণী শিল্পীকে সম্মাননা দেয়া হবে। থাকবে এ্যালবাম প্রকাশনা। মেলায় প্রতিদিন জ্যামিং, মিউজিকফান, গিটার, ড্রাম, কি-বোর্ড এবং ভয়েস বিষয়ক ওয়ার্কশপ, সঙ্গীতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে থাকবে সেমিনার। গুণী শিল্পীদের ভিডিও ডকুমেন্টারি, বাংলা গানের ইতিহাস নিয়ে টাইমলাইন বোর্ড, সেলফি বুথ, স্মার্টফোন চার্জার জোন, ফ্রি ওয়াইফাই জোন, ইন্টারভিউ জোন, একদিন লাইভ টিভি অনুষ্ঠান, প্রতিদিন লাইভ রোডিও ব্রডকাস্টিং, লাইভ ওয়েবস্ট্রিমিং। সবার জন্য মেলায় প্রবেশ উন্মুক্ত। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে মেলায় শ্রোতাদের জন্য থাকছে লাইভ গান। এ উপলক্ষে আয়োজনে দর্শনার্থীদের সেবা দিতে অন্তত ৩০টি স্টল থাকবে। আয়োজক কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা, আয়োজনটি দেশীয় সঙ্গীতের জন্য বিশাল বড় চমক হবে। এদিকে, শিল্পকলায় ‘গানমেলা’ আয়োজন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার পেছনে এই সঙ্গীতমেলাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ গত বছরের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এবারও গানমেলার আয়োজনের জন্য শিল্পকলা একাডেমির অনুমতি চেয়েছিল এমআইবি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু উল্লিখিত সময়ে এমআইবির গানমেলার পরিবর্তে সম্মিলিত সঙ্গীত শিল্পী সোসাইটিকে বৈশাখী সঙ্গীতমেলা করার অনুমতি দিয়েছে শিল্পকলা কর্তৃপক্ষ। গানমেলা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই নানা আলোচনা চলছিল। কারণ বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলার মতো শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত ‘গানমেলা’ প্রথম আসরেই সঙ্গীত সংশ্লিষ্ট মানুষের প্রাণের মেলায় পরিণত হয়। এপ্রিল মাসেই ‘গানমেলা’ আয়োজনের কথা বলে আসছে এমআইবি (মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ)। এরই ধারাবাহিকতায় শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও করে। তবে শব্দ ও পরিবেশদূষণের অজুহাতে গানমেলা আয়োজনের অনুমতি দেয়নি শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। ফলে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকটাই আলোচনার পাশাপাশি শিল্পকলা একাডেমির ভূমিকা নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে। এ অবস্থায় গতবারের ভেন্যু শিল্পকলা একাডেমিতেই মেলার আয়োজন হবে কি-না, এটা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গানমেলার মতো একটি ব্যতিক্রমী আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতা না করার কোন কারণ নেই। বিশেষ করে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকও একজন সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার। সে হিসেবে সঙ্গীত নিয়ে যে কোন ভাল এবং গ্রহণযোগ্য উদ্যোগে তার সমর্থন থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। অতএব গানমেলা আয়োজকদেরও এ বিষয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ লিয়াকত আলী পরিপূর্ণ একজন সংস্কৃতিমনা মানুষ। তার যোগদানের পর পরই শিল্পকলা একাডেমিতে ব্যতিক্রমী এবং গ্রহণযোগ্য ও প্রশংসনীয় অনেক আয়োজন নিয়মিতই হচ্ছে। সুতরাং গানমেলা আয়োজন নিয়ে তার দিক থেকে সহযোগিতা থাকবে সেটা প্রত্যাশা করা যেতেই পারে। আর শিল্পকলার কাজই হচ্ছে ভাল কিছুকে প্রমোট করা। বিশেষ করে দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশ এবং এর প্রচারে শিল্পকলা একাডেমি সব সময় অগ্রগামী। সেক্ষেত্রে গানমেলার মতো জাতীয় পর্যায়ের একটি মৌলিক আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতা অবশ্যই থাকবে। সঙ্গীতমেলার অনুমতি দিয়ে থাকলে ‘গানমেলা’রও অনুমতি পাবেন এমআইবি কর্তৃপক্ষ। তবে এ আয়োজন প্রসঙ্গে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী জানিয়েছিলেন, গানমেলা আয়োজনের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় যদি অনুমতি দেয় তাহলে মেলা হবে, অনুমতি না দিলে আমাদের পক্ষ থেকে কিছুই করার নেই। এ বিষয়ে আয়োজক কর্তৃপক্ষ এমআইবি সেক্রেটারি এসকে শাহেদ আলী পাপ্পু জানান, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আমাদের শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছে। আমরা সে অনুযায়ী শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেছি, তিনি ফোন রিসিভি করেননি। এ বিষয়ে তিনি পরবর্তীতেও কিছু জানাননি। আমরা আরও দু-একটা দিন দেখব, তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। তাদের আবেদনকৃত সময়ে বৈশাখী সঙ্গীতমেলার আয়োজন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যে কোন মূল্যে গানমেলা করব। প্রয়োজনে সঙ্গীতমেলার পর আমরা আমাদের আয়োজন করব। মোট কথা ‘গানমেলা’ হবে বলে জানান তিনি।
×