ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ এবং অর্থনৈতিক বিপ্লব

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২০ মার্চ ২০১৬

বাংলাদেশ এবং অর্থনৈতিক বিপ্লব

মূলত ’৯০-এর পরবর্তী সময়ে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির নীরব বিপ্লব সাধিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। কাক্সিক্ষত মাত্রায় না হলেও গণতন্ত্রের কল্যাণে বিকশিত হয়েছে বেসরকারী খাত। ব্যাপকহারে শস্য ফলাচ্ছেন কৃষক। ব্যক্তি উদ্যোগে বিদেশ গিয়েছেন প্রায় লাখ লাখ বাঙালী। সারা বিশ্বে এফডিআইয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান আজ অনেক ধাপ এগিয়েছে। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখন রয়েছে উন্নত পর্যায়ে। এসবই স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন দেখছে, পরিণত হয়েছে মধ্যম আয়ের দেশে। কৃষিভিত্তিক বাংলার অর্থনীতিতে কৃষক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা এবং নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়নে অসংখ্য ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী সংস্থা ও ব্যাংকের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ক্ষুদ্র ও স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এ খাত বিশ্বের বুকে কেবলই বিস্ময় নয়; অনুকরণযোগ্য এক মডেলও। অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষ ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালালেও এ খাতের ৮০ ভাগই নিয়ন্ত্রণ করে চারটি প্রধান সংস্থা গ্রামীণ ব্যাংক, আশা, প্রশিকা ও ব্র্যাক। ক্ষুদ্রঋণের সফলতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিতরণ করে চলছে। ব্যবসায়ী দৃষ্টিতে, পুঁজির পরিগঠনের এ সঞ্চয়ের বিশাল গুরুত্ব রয়েছে। মানব উন্নয়ন তথা সামাজিক খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্য চীন কিংবা ভারতের সঙ্গে তুলনীয়। কিছু ক্ষেত্রে আরও সন্তোষজনক। অবৈতনিক শিক্ষা, বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, বেসরকারী খাতের বিকাশ, সচেতনতার প্রসার সর্বোপরি গণতন্ত্রের চর্চা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের অঙ্গীকারের ফলে মানব উন্নয়নের প্রাথমিক শর্ত শিক্ষার বিকাশে ভূমিকা রেখেছে। শিশুমৃত্যুর হার নেমে এসেছে। জীবন রক্ষাকারী টীকার আওতায় এসেছে হাজার হাজার শিশু। নিরাপদ পানীয় ও স্যানিটেশনের আওতায় এসেছে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ; যা ভারত কিংবা চীনের তুলনায় বেশি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে রফতানি খাতের বিশাল রূপান্তর ঘটেছে। পাটের বদলে দেশের প্রায় ৮০ ভাগ রফতানি আয় আসছে পোশাক শিল্প থেকে। ১৯৭২ সালে রফতানি আয়ের প্রায় ৭০ ভাগ ছিল পাটের দখলে। কৃত্রিম তন্তু আবিষ্কারের ফলে সত্তরের দশকেই পাটের চাহিদা মারাত্মকভাবে কমে যায়। আশির দশকে ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে শ্রমঘন পোশাক খাত। এছাড়া তামাক, চামড়া, জাহাজ, চা, চিংড়ি,কাঁকড়া, ফুল, সবজি, বেত প্রভৃতি রফতানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। পণ্য রফতানির এ বৈচিত্র্য ও পোশাক রফতানির বিভিন্ন বাজারের জন্য মন্দার মধ্যেও অনেকটা স্বাভাবিক আছে দেশের রফতানি খাত। রক্তের দামে বিশ্বের যে কটি রাষ্ট্র স্বাধীনতা কিনেছে- তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। হিমালয়ের মাটি থেকে তিলে তিলে জেগে ওঠা এ বদ্বীপ এখন আর কেবল ভারতের পাশের দারিদ্র্যপীড়িত ভূমি নয়; বিশ্বমন্দার মধ্যেও প্রবৃদ্ধি অর্জন করা এক স্বাধীন জাতিগোষ্ঠী। সম্প্রতি সে অর্জন করেছে নিজের আয়তনের সমান আরেক ভাসমান বাংলাদেশ-যা বদলে দিতে পারে রাষ্ট্রটির রূপ-প্রকৃতি ও অর্থনৈতিক গতিধারা। মোঃ শাহজাহান
×