ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এ নিষেধাজ্ঞা সাময়িক;###;ত্রুটি দূর করতে পারলেই আবার দলে ফিরবে এ দুই কীর্তিমান বোলার ;###;এদের স্থলে যোগ দিচ্ছেন শুভাগত ও সাকলায়েন সজীব

আইসিসি বোমা! ॥ তাসকিন ও সানি নিষিদ্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২০ মার্চ ২০১৬

আইসিসি বোমা! ॥ তাসকিন ও সানি নিষিদ্ধ

মিথুন আশরাফ, কলকাতা থেকে ॥ মুহূর্তেই সব এফোড়-ওফোড় হয়ে গেল। ওলট-পালট হয়ে গেল। ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেল যেন বাংলাদেশ দলের অনেক স্বপ্ন, আশা! পরীক্ষা দিয়ে শেষপর্যন্ত বোলিং এ্যাকশনে যে ত্রুটি আছে, সেটাই ধরা পড়ল বাংলাদেশ দলের পেসার তাসকিন আহমেদ ও স্পিনার আরাফাত সানির। তাতে আইসিসি দুইজনকেই সাময়িক বোলিং থেকে নিষিদ্ধ করেছে। দুইজনেরই তাই বিশ্বকাপ মাঝখানেই শেষ হয়ে গেল। এ নিষিদ্ধের খবর মুহূর্তেই চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল। আইসিসি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েই তাসকিন ও সানির নিষিদ্ধের ঘোষণা দিল। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন চলে আসল, টি২০ বিশ্বকাপে বাকি ম্যাচগুলোর জন্য দুইজনের পরিবর্তে বাংলাদেশ থেকে কে কে ভারতে আসবেন? প্রশ্নটি বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনকে করতেই চটে গেলেন। বললেন, ‘ভাই আপনারা শুধু নিউজ নিয়েই আছেন। এখানে যে সব ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। দুইজন নিষিদ্ধ হয়ে গেল। দেশ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। শুধু নিউজ নিয়েই পড়ে থাকেন।’ সুজনের এমন অবস্থা থেকেই বাংলাদেশ দলের বর্তমান অবস্থা বুঝে নেয়া যায়। দুইজন যে নিষিদ্ধ হয়ে গেলেন, তাতে বাংলাদেশ দল যে বিপাকেই পড়ে গেল, তা আর না বোঝার কোন কারণ নেই। তাসকিনের পরিবর্তে শুভাগত হোম এবং সানির পরিবর্তে সাকলায়েন সজিব বাংলাদেশ থেকে ব্যাঙ্গালুরুতে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন আজ। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী এমনিতে বোলিং এ্যাকশনে ত্রুটি ধরা পড়ার পর ১৪ দিনের মধ্যে পরীক্ষা দিতে হয়। বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টে সেটি ৭ দিনের মধ্যে পরীক্ষা দিতে হয়। ৯ মার্চ হল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর তাসকিন ও সানির বোলিং এ্যাকশনে যে ত্রুটি আছে তা বাংলাদেশ দলের ম্যানেজারকে আম্পায়াররা জানান। তখন থেকেই সবার ভেতর আতঙ্ক তৈরি হয়ে যায়। যদি দুইজনই নিষিদ্ধ হয়ে যান! শেষপর্যন্ত তাই ঘটল। ১২ মার্চ ধর্মশালা থেকে চেন্নাইয়ে গিয়ে আইসিসি স্বীকৃত শ্রী রামচন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে বায়োমেকানিক্যাল পরীক্ষা দেন সানি। একদিনেই পরীক্ষা হয়ে যায়। পরের দিনই দলের সঙ্গে যোগ দেন। বাছাইপর্বে বাংলাদেশের খেলা শেষে ১৪ মার্চ তাসকিনও একই স্থানে পরীক্ষা দেন। পরের দিন কলকাতায় বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যোগ দেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচেও খেলেন। নিয়ম অনুযায়ী, পরীক্ষা দেয়ার ৭ দিনের মধ্যে আইসিসি জানিয়ে দেয় বোলিং এ্যাকশনে ত্রুটি আছে, কি নেই। পরীক্ষার ফল না আসা পর্যন্ত দলের হয়ে খেলতেও পারেন বোলার। কিন্তু বোলিং এ্যাকশনে ত্রুটি ধরা পড়ার ঘোষণা আসার পর থেকেই দলের হয়ে বোলিং করা সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। তাসকিন ও সানির বেলাতেও তাই হচ্ছে। আর যে বিশ্বকাপ খেলতে পারছেন না দুই বোলার, তাও নিশ্চিত হয়ে যায়। সানির বেলাতে ৭ দিনের মধ্যে ফল দিয়ে দিলেও তাসকিনের বেলাতে আরও আগেই ঘোষণা দিয়ে দেয়া হলো। এমন সময় ঘোষণাটি আসল, যখন আর একদিন বাদেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। ‘সুপার টেনে’ এরই মধ্যে পাকিস্তানের কাছে হারায় বিপাকে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। এমন সময় একসঙ্গে দুই বোলারকে হারানোয় শুধু দল ছন্নছাড়াই হয়ে পড়ল না, সবার মনে আঘাতও আসল। সেই আঘাতে দলের ক্রিকেটারদের মানসিকতাও দুর্বল করে দিল। দলের একাদশ তৈরি করতেও তো এখন হিমশিম খেতে হবে। দলে এর আগে দুই স্পিনার ছিলেন। সাকিব আল হাসান ও আরাফাত সানি। এখন শুধু থাকলেন সাকিব। তার সঙ্গে আরেক স্পিনার যোগ দেবেন ঠিক। কিন্তু যেভাবে একাদশ গঠন করা হয়, সেখানে সাকিব ও সানিকেই স্পিনার হিসেবে আমলে নেয়া হয়েছে। আর পেস আক্রমণ যে বাংলাদেশের শক্তিশালী, তাসকিন না থাকায় সেটি দুর্বল হয়ে পড়ল। একাদশ গঠনে নিশ্চিত পছন্দ ছিলেন তাসকিন। এখন তার স্থানে একজনকে নামাতে হবে। সেই নামানো নিয়ে অনেক হিসেব নিকেশও করতে হবে। যেটি বাংলাদেশ দলকে বেগও দেবে। এখন সানির পরিবর্তে সাকলায়েন সজিব ভারতে পৌঁছাবেন। তবে তাসকিনের পরিবর্তে পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বির কথাই বেশি শোনা যাচ্ছিল। যদিও ম্যানেজমেন্ট শেষপর্যন্ত একজন ব্যাটসম্যান নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেহেতু ভারতের উইকেট ব্যাটিং নির্ভর। তাই একজন পেসারের পরিবর্তে ব্যাটসম্যান দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। সেই ব্যাটসম্যানটি শুভাগত হোম। কে কে যোগ দেবেন, তা জানতে গেলেই চটে যান সুজন। কিছু করার নেই। এমন সময়ে যে দলের সবাই বিক্ষুপ্ত হয়ে আছেন। চটে আছেন। মন খারাপ করে শুধু এটিই ভাবছেন, একসঙ্গে দুই বোলার নিষিদ্ধ হয়ে গেল! দলও যে বিপাকে পড়ে গেল! নিয়ম হচ্ছে, বোলিং করার সময় যদি ১৫ ডিগ্রীর বেশি কনুই বাঁকে, তাহলে সেই বোলার বল করতে পারবেন না। নিষিদ্ধ হয়ে যাবেন। পরে আবার এ্যাকশন শুদ্ধ করে পরীক্ষা দিয়ে সঠিক প্রমাণিত হলে বোলিং করতে পারবেন। তাসকিন ও সানি, দুইজনেরই বোলিং করার সময় কয়েকটি ডেলিভারি ১৫ ডিগ্রীর বেশি কনুই বেঁকেছে। তাই সাময়িকভাবে তাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন বোলিং এ্যাকশন শুধরে আবার পরীক্ষা দিতে হবে দুই বোলারকেই। পরীক্ষা দেয়ার পর যদি শুদ্ধ হন, তাহলেই কেবল এরপর জাতীয় দলের হয়ে বোলিং করতে পারবেন তাসকিন ও সানি। আইসিসি তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে পরীক্ষায় তাসকিন ও সানির বোলিং এ্যাকশনে ত্রুটি খুঁজে পাওয়া গেছে। ফলে পরীক্ষা নিয়ে নিজেদের এ্যাকশন বৈধ প্রমাণিত না করা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে আইসিসি। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে আরও বলা হয়, আরাফাত সানির বেশকিছু ডেলিভারির সময় তার কনুই ১৫ ডিগ্রীর বেশি বাঁকা হয়ে যাচ্ছিল। আর তাসকিনের বিষয়ে বলা হয়েছে, তারও বেশ কিছু ডেলিভারি বৈধতার সীমা অতিক্রম করে। এ নিয়ে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘আরাফাত সানিকে আইসিসি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছে। তবে আইসিসি এষনও মেইলের মাধ্যমে বিষয়টি আমাদের জানায়নি। তারা জানানোর পর আমরা বিকল্প খেলোয়াড়ের বিষয়ে উদ্যোগ নেব।’ সকালে সুজন এমন কথা বলার পর বিকেলে আবার সুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানান, ‘দুইজনকেই (তাসকিন ও সানি) নিষিদ্ধ করেছে।’ যখন জিজ্ঞেস করা হলো, তাদের পরিবর্তে কে কে থাকছেন? তখনই রেগে গেলেন সুজন। তাসকিন ও সানি নিষিদ্ধ হওয়াতে দল যে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে, তা সুজনের এ রাগ থেকেই বোঝা গেল।
×