ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশ্নবিদ্ধ বোলিং এ্যাকশনে সাময়িক নিষিদ্ধ তাসকিন ও সানি

বিশ্বকাপের মাঝপথে আইসিসির ধাক্কা

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২০ মার্চ ২০১৬

বিশ্বকাপের মাঝপথে আইসিসির ধাক্কা

মিথুন আশরাফ, কলকাতা থেকে ॥ ‘সুপার টেনে’ পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরে এমনিতেই বিপাকে আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এর মধ্যে আবার শনিবার এলো দুঃসংবাদ। বাংলাদেশ দলকে সেই দুঃসংবাদ ঘিরে ধরল। সবাই যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেল। একসঙ্গে পেসার তাসকিন আহমেদ ও স্পিনার আরাফাত সানি নিষিদ্ধ হয়েছেন। তাদের দুইজনের বোলিংয়েই সমস্যা ধরা পড়েছে। এবং দুইজনই আবার বোলিং এ্যাকশন শুধরে না আসার আগপর্যন্ত বোলিং করতে পারবেন না। সোমবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে যা বড় ধাক্কা হয়েই বাংলাদেশ দলের সামনে ধরা দিল। আইসিসি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েই এমন দুঃসংবাদ বাংলাদেশ দলের জন্য দিয়েছে। হল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পরই তাসকিন ও সানির বোলিং নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দুই আম্পায়ার। এরপর আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী ৭ দিনের মধ্যে বোলিং এ্যাকশনের পরীক্ষা দিতে হবে। সেই পরীক্ষা সানি ১২ মার্চ এবং তাসকিন ১৪ মার্চ দিয়েছেনও। চেন্নাইয়ে আইসিসির স্বীকৃত পরীক্ষাগারে সেই পরীক্ষা দিয়েছেন। শনিবার সকাল থেকেই শোনা যাচ্ছিল সানি নিষিদ্ধ হয়েছেন। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই তাসকিনের নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত হয়ে যায়। সানির স্থানে এখন সাকলায়েন সজিব দলের সঙ্গে যুক্ত হবেন। তবে তাসকিনের স্থানে কামরুল ইসলাম রাব্বির কথা শোনা গেলেও শুভাগত হোমও যুক্ত হতে পারেন এমন জানা যাচ্ছে। সোমবার অসিদের বিপক্ষে ম্যাচের আগেই সাকলায়েন ও রাব্বি দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে ফেলবেন। আইসিসির এমন ঘোষণা বাংলাদেশ দলের জন্য মেঘের গর্জনের মতোই হয়ে আসল। আইসিসি তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে পরীক্ষায় তাসকিন ও সানির বোলিং এ্যাকশনে ত্রুটি খুঁজে পাওয়া গেছে। ফলে পরীক্ষা নিয়ে নিজেদের এ্যাকশন বৈধ প্রমাণিত না করা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে আইসিসি। টি২০ বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে হল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে আরাফাত সানির সঙ্গে তাসকিনের এ্যাকশন নিয়েও সন্দেহ তোলেন আম্পায়াররা। পরে গত ১৫ মার্চ বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিকের সঙ্গে চেন্নাইয়ে গিয়ে বোলিং এ্যাকশনের পরীক্ষা দেন তাসকিন। এর দু’দিন আগে স্পিন কোচ চম্পাকা রামানায়েকের সঙ্গে পরীক্ষা দিতে যান সানিও। ওই পরীক্ষার পর এ দুজনের বোলিং এ্যাকশন ত্রুটিপূর্ণ বলে জানায় আইসিসি। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে বলা হয় আরাফাত সানির বেশকিছু ডেলিভারির সময় তার কনুই ১৫ ডিগ্রীর বেশি বাঁকা হয়ে যাচ্ছিল। আর তাসকিনের বিষয়ে বলা হয়েছে, তারও বেশি কিছু ডেলিভারি বৈধতার সীমা অতিক্রম করে। এ নিয়ে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘আরাফাত সানিকে আইসিসি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছে। তবে তারা এখনও মেইলের মাধ্যমে বিষয়টি আমাদের জানায়নি। তারা জানানোর পর আমরা বিকল্প খেলোয়াড়ের বিষয়ে উদ্যোগ নেব।’ সকালে সুজন এমন কথা বলার পর বিকেলে আবার জানান, ‘দুইজনকেই নিষিদ্ধ করেছে। এখনও বিকল্প ঠিক হয়নি। দ্রুতই তা হয়ে যাবে।’ বাংলাদেশ দল এমনিতেই পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের পর ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে। এর আগে তাসকিন ও সানিকে নিয়ে সবারই ভরসা ছিল, কোন সমস্যা হবে না। ঠিকই খেলতে পারবে। পেস বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক যেমন বলেছিলেন, ‘আমার তত্ত্বাবধানেই থাকে তাসকিন। যতদূর বোঝা গেছে, আমরা ভিডিও দেখেছি; তাতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আশা করছি, সানির বেলাতেও তাই হবে।’ কিন্তু তা আর হলো না। নিষিদ্ধই হয়ে গেলের দুইজনই। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজারও বিশ্বাস ছিল, ‘আমার বিশ্বাস কিছুই হবে না। যেমন ছিল তারা, তেমনই থাকবে।’ কিন্তু সব এখন ওলট পালট হয়ে গেল। এখন এমন দুঃসংবাদে বাংলাদেশ দলের খেলাতেও প্রভাব পড়বে। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাজেভাবে হেরেছে বাংলাদেশ। সামনে অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা। এর আগে আইসিসির এমন ঘোষণা বাংলাদেশ দলের খেলাতেও প্রভাব ফেলবে নিশ্চিত। তবে সুজন মনে করছেন সমস্যা হবে না। বলেছেন, ‘আসলে যা হওয়ার হয়েছে। তা নিয়ে বসে থাকলে তো আর লাভ হবে না। সামনে যে ম্যাচগুলো আছে, তা গুরুত্বপূর্ণ। যে করেই হোক এ অবস্থা থেকে দ্রুতই দলকে বের হতে হবে। তা ছেলেরা পারবেও। আশা করছি এর প্রভাব পড়বে না।’ তাসকিন ও সানির নিষিদ্ধ হওয়াতে দলের কম্বিনেশনেই তো সমস্যা হয়ে গেল। সেখানে প্রভাব না পড়ে কী আর উপায় আছে!
×