ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লাখো পর্যটকের পদভারে মুখোরিত সৈকত রানী কক্সবাজার

প্রকাশিত: ০০:৪২, ১৯ মার্চ ২০১৬

লাখো পর্যটকের পদভারে মুখোরিত সৈকত রানী কক্সবাজার

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ লাখো পর্যটকের পদচারণায় মূখরিত হয়ে উঠেছে সৈকত রানী কক্সবাজার। টানা তিন দিনের সরকারী বন্ধে বৃহস্পতিবার থেকে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নামে। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু’র জন্মদিন অর্থাৎ জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে সরকারী ছুটি আর শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় টানা তিন দিনের বন্ধে পর্যটকে ভরে গেছে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার। শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি হাজার হাজার পর্যটক সৈকতের তরঙ্গে ও বালুচরে নেমে পড়ে। লাবণী পয়েন্ট, সীইন পয়েন্ট, হিমছড়ি থেকে ডায়াবেটিক পয়েন্ট পর্যন্ত অগনিত পর্যটকের ভিড় লেগে যায়। পরিবার-পরিজন ছাড়াও গাড়িভর্তি পিকনিক পার্টিও এসে জড়ো হয়েছে সাগর পাড়ে। স্থানীয়দের অংশগ্রহণ ভিড় আরও বাড়িয়ে দেয়। বিকেলে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মোড় থেকে কলাতলী মোড় পর্যন্ত শত শত গাড়ির দীর্ঘ লাইন লেগে যায়। লক্ষাধিক পর্যটকের কক্সবাজার বেড়াতে আসার কারণে শহর ও শহরতলীর সকল আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউস গুলোর সমস্ত কক্ষ পর্যটকে পরিপূর্ণ হয়ে কোথাও ঠাঁই নেই অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হোটেল মালিকরা বলছেন, রবিবার পর্যন্ত নতুন কোন অতিথিকে কক্ষ বুকিং দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। লক্ষাধিক পর্যটকের কক্সবাজার আগমনকে পুঁজি করে যথারীতি গলাকাটা ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। শহরে প্রায় সকল প্রকার পণ্যের দাম বর্তমানে বৃদ্ধি। ১৫-২০টাকার একটি ডামের মূল্য এখন ৫০-৬০টাকা। ইতোমধ্যে শহরের রাস্তাঘাটে সৃষ্টি হচ্ছে ট্রাফিক জ্যাম। বিপণী কেন্দ্র গুলোও বিকিকিনিতে দারুণ জমজমাট। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীরা পার করছেন লাভজনক কর্মব্যস্ততা। জানা গেছে, অনেকে একদিন ছুটি বাড়িয়ে নিয়ে টানা ৪ দিনের অবসর কাটানোর সুযোগ করে ছুটে এসেছেন কক্সবাজারে। শনিবারও অনেককে পরিবার পরিজন নিয়ে কলাতলি থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে রুম খুঁজতে দেখা গেছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কলাতলীর হোটেল-মোটেল গুলোতে রয়েছে এখনও প্রচন্ড চাপ। অধিকাংশ হোটেলে ছিল অগ্রিম বুকিং। যে সব হোটেলে বুকিং ছিলনা, তাও ভাড়া হয়েছে দ্বিগুন দামে। কোনটিতে দিগুণের চেয়েও বেশি। অনেকে আবার খালি ফ্ল্যাট ভাড়া দিচ্ছে পর্যটকদের থাকার জন্য। খাবারের দাম দ্বিগুন রাখা হলেও রেস্তোরা গুলোতে প্রচন্ড ভিড়। জানা যায়, টানা ৩ দিনের ছুটিতে লক্ষাধিক পর্যটক এসেছে কক্সবাজারে। বুধবার থেকে পর্যটকের আগমন শুরু হয়েছে। তবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার সবচেয়ে বেশি পর্যটক এসেছে এখানে। দলে দলে রিজার্ভ কিংবা প্রাইভেট গাড়িতে করে পর্যটকরা ভ্রমণে আসায় রাস্তাঘাটে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যাম। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ছাড়াও পর্যটকরা ইনানী পাথুরে সৈকত, হিমছড়ী ঝর্ণা, দরিয়ারনগর ন্যাচার পার্ক, ডুলহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক, আদিনাথ মন্দির, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনসহ জেলার অন্যান্য পর্যটন স্পটে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পর্যটকরা কক্সবাজার সৈকত ছাড়াও সেন্টমার্টিনকে পছন্দের তালিকায় নিয়েছে। এ কারণে টেকনাফ সেন্টমার্টিন দ্বীপে চলাচলকারী পর্যটক জাহাজ গুলোতেও অমি টিকিট বুকিং হয়েছে। কক্সবাজার হোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতি সূত্র জানায়, কলাতলী সব হোটেলই রবিবার পর্যন্ত বুকিং হয়ে গেছে। একারণে কক্সবাজারের কোথাও তেমন কোন রুম খালি নেই। কলাতলীর প্রতীক জিনিয়া এপার্টমেন্টের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, গত সপ্তাহে তার ২০টি এপার্টমেন্ট বুকিং হয়ে গিয়েছিল। তাই বুধবার ও বৃহস্পতিবার অনেক পর্যটককে ফেরত দিতে হয়েছে। টানা তিন দিনের ছুটি থাকায় পর্যটকের এ চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার থেকে আবারও স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে জানান তিনি। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার হোসাইন মোঃ রায়হান কাজেমি জানান, কক্সবাজার থেকে ইনানী সৈকত পর্যন্ত সব স্পটেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রাতের বেলায় হোটেল ও গেস্টহাউসগুলো পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে। সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও টহল পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
×