ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শুরু পথনাটক উৎসব

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ২ মার্চ ২০১৬

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শুরু পথনাটক উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর ঢাকায় যেন শেষ নেই উৎসবের। স্বাধীনতার মাস মার্চের প্রথম দিন মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে উঠল মুখরিত। কথা, গান ও নাটকে ভাষাশহীদদের স্মৃতির মিনারে বারংবার উচ্চারিত হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাজাত বাংলাদেশের কথা। মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ ও আত্মত্যাগী নারী-পুরুষদের স্মরণে সূচনা হলো বাংলাদেশ পথনাটক উৎসবের। সপ্তাহব্যাপী এবারের উৎসবের সেøাগান ‘মুক্তিযুদ্ধের তথ্য বিকৃতকারীদের ক্ষমা নাই/যড়যন্ত্রকারীদের বিচার চাই’। সারা দেশের বিভিন্ন নাট্যদলের ৪১টি পথনাটকে সাজানো এ উৎসবের আয়োজক বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ। আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত চলমান আয়োজনে প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা থেকে শুরু হবে নাট্য প্রদর্শনী। ফাগুনের হাওয়ামাখা বসন্ত বিকেলে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধসহ সকল আন্দোলন-সংগ্রামের শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে প্রথমেই শহীদ মিনারের বেদীতে অর্পণ করা হয় পুষ্পাঞ্জলি। এরপর পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। অতিথিসহ সবাই মিলে এক সুরে গেয়ে শোনায় জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি ...’। এরপর মঞ্চে আসে বহ্নিশিখার শিল্পীরা। গৌরবের উচ্চারণে গীত হয়Ñ বিজয় নিশান উড়ছে ওই, বাংলার ঘরে ঘরে, মুক্তির আলো ওই জ্বলছে ...। একই দলের নৃত্যশিল্পীরা ‘গেরিলা আমরা গেরিলা’ গানের সুরে পরিবেশন করে সম্মেলক নাচ। নাচ-গান শেষে মুক্ত আকাশে উড়িয়ে দেয়া হয় উৎসবের স্মারক একঝাঁক বর্ণিল বেলুন। সপ্তাহব্যাপী উৎসব উদ্বোধন করেন আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্রের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ। পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরার সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক আবু সাঈদ খান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ঝুনা চৌধুরী, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আহ্্কাম উল্লাহ্্ ও পথনাটক পরিষদের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান খান। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন সংগঠনের পরিষদে সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ গিয়াস। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নাট্যকার মান্নান হীরা রচিত ‘মূর্খ্য লোকের মূর্খ্য কথা’, ‘পন্তা আকালী’ ও ‘মঙ্গা কাহিনী’ নাটকের সংকলন ‘পথনাটক ট্রিলজি’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে শ্রাবণ। উদ্বোধনী বক্তব্যে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, নাটক মানুষকে রাজনৈতিক সচেতন করতে পারে, আবেগে উদ্বেলিত করে, বিদ্রোহে প্রেরণা যোগায়। কিন্তু সেটি রাজনৈতিক সংলাপসর্বস্ব হয়ে গেলে আর নাটক থাকে না। আমাদের মনে রাখতে হবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের দায়িত্ব সাংস্কৃতিক কর্মীদের নয়, রাজনীতিকে এগিয়ে নেয়া আমাদের দায়িত্ব। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার যে আয়োজন এখানে হচ্ছে সেখানে কোন ভুল করা যাবে না। তাহলে পঁচাত্তরের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। সেটা হতে দেয়া যাবে না। আমরা চাই সেই বাংলাদেশ যেখানে থাকবে সাম্যের সমাজ, থাকবে মুক্তচিন্তার পরিবেশ। থাকবে না ধর্মান্ধতা ও অমানবিকতা। আর সেটাই হচ্ছে আমাদের কাক্সিক্ষত স্বদেশ। সেই কাক্সিক্ষত বাংলাদেশের জন্য শিল্পের লড়াই অব্যাহত থাকবে। সভাপতির বক্তব্যে মান্নান হীরা বলেন, পথনাটককে শুধু উৎসব বা দিবসকেন্দ্রিক আয়োজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। এটাকে নিত্যকর্ম হিসেবে এগিয়ে নিতে হবে। তাহলেই সারাদেশে জাগ্রত হবে সংস্কৃতি। রতন সিদ্দিকী পঠিত উৎসব ঘোষণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, বীর শহীদ ও লাঞ্ছিতা মা-বোনের আত্মত্যাগকে স্মরণে রেখে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ প্রতিবছর ১ থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজন করে বাংলাদেশ পথনাটক উৎসব । এ উৎসব মঞ্চ থেকে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি মহান ভাষা শহীদ, স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদ ও পরবর্তীকালে গণতান্ত্রিক সংগ্রামে, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদবিরোধী আন্দোলনের সকল ত্যাগী প্রাণকে। গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি স্বাধীনতা যুদ্ধে মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদৃঢ় নেতৃত্ব ও পরবর্তীকালে তাঁর আত্মত্যাগকে। এই যুদ্ধের মাসে দাঁড়িয়ে আরও স্মরণ করছি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যে সকল বীর, মুক্তমনা লেখক, ব্লগার ও প্রকাশক জঙ্গীবাদের হত্যার শিকার হয়েছে। ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, স্বাধীনতার সাড়ে চার দশকে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে গণতন্ত্রের দীর্ঘ যাত্রায় পা রেখেছে দেশ। যে যাত্রার প্রধান নিয়ামক শক্তি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। কিন্তু আমরা ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও তার দোসররা স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও তথ্যকে নির্লজ্জভাবে বিকৃত করে চলেছে। আমরা এই উৎসবমঞ্চ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও তথ্য বিকৃতকারীদেরও দ্রুত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার দাবি করছি। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবি- অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার অন্যতম সাংস্কৃতিক শক্তি পথনাটক চর্চাকে আরও প্রসারিত করার জন্য ঢাকাসহ প্রতিটি জেলা-উপজেলায় মুক্তমঞ্চ প্রতিষ্ঠা করা হোক। যেখানে নিয়মিত পথনাটক, গণসঙ্গীত, আবৃত্তিসহ নানা সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিবেশিত হবে। গোলাম মোহাম্মদ ইদুর ৮০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন ॥ বর্ণিল আয়োজনে উদীচীর আজন্ম সারথী ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা গোলাম মোহাম্মদ ইদুর ৮০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করল বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ছিল এই নিভৃতচারী শিল্পীর ৮০তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজন করা হয় আনন্দ অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানের শুরুতেই দু’টি গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। এরপর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে শুরু হয় শুভেচ্ছা জ্ঞাপন পর্ব। এ পর্বে গোলাম মোহাম্মদ ইদুকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদ, ঢাকা মহানগর সংসদ, লালবাগ শাখা, বাড্ডা শাখা, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ প্রভৃতি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ সময় উদীচীর পক্ষ থেকে গোলাম মোহাম্মদ ইদুকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান উদীচীর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শিবানী ভট্টাচার্য্য। উত্তরীয় পরিয়ে দেন উদীচীর সভাপতি কামাল লোহানী। আর কিছু উপহার সামগ্রী তুলে দেন উদীচীর সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম। এরপর ‘আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানের সঙ্গে ৮০টি প্রদীপ প্রজ্বলন করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। খুলনায় তিনদিনব্যাপী বসন্ত উৎসব শুরু ॥ স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস থেকে জানান, খুলনায় তিনদিনব্যাপী বসন্ত উৎসব আয়োজন করেছে এক্সক্লুসিভ কানিজ হেয়ার এন্ড বিউটি। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় নগরীর শামসুর রহমান রোডের সাবেক জোহরা খাতুন স্কুল প্রাঙ্গণে এ উৎসব শুরু হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে কেক কেটে উৎসবের উদ্বোধন করেন দৈনিক পূর্বাঞ্চল সম্পাদক বেগম ফেরদৌসী আলী।
×