ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৩ মার্চ পরবর্তী তারিখ ধার্য

নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন ॥ দুই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১ মার্চ ২০১৬

নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন ॥ দুই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সারাদেশে আলোচিত নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ৭ খুনের ঘটনায় দায়েরকৃত দুটি মামলার মধ্যে একটি মামলার বাদী ডাঃ বিজয় কুমার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। উভয় মামলায় অভিযুক্ত ৩৫ আসামির মধ্যে ২৩ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পলাতক ও উপস্থিত আসামিদের মধ্যে ২২ জনের আইনজীবী বাদীকে জেরা করেন। আগামী ৩ মার্চ সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছে আদালত। মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন, র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ও এম এম রানার পক্ষের আইনজীবীরা বাদীকে জেরা করতে সময় প্রার্থনা করলে আদালত তা মঞ্জুর করে আগামী ৭ মার্চ ধার্য করেছেন। অপর মামলার (নিহত প্যানেল মেয়র কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও তার ৪ সহযোগী হত্যার ঘটনায় সেলিনা ইসলাম বিউটির দায়ের করা মামলা) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ৩ মার্চ ধার্য করেছে আদালত। এদিকে আদালতে সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তাদের এজলাস থেকে বের করে দেয়া হয় এবং কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এতে নারায়ণগঞ্জে কর্মরত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে আনা হয় ৭ খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন, র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ২৩ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় আদালতে মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়। বেলা পৌঁনে ১১টার দিকে নিহত আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়ি চালক ইব্রাহিম হত্যা মামলার বাদী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য প্রদান শুরু করেন। তিনি এজাহারের বিবরণ উল্লেখ করে আদালতে বলেন, গণমাধ্যমে তারা জানতে পারেন, নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তারা তার শ্বশুর চন্দন সরকার ও গাড়ি চালক ইব্রাহিমকে অপহরণ ও হত্যার পর লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দিয়েছেন। পরবর্তীতে কাঠগড়ায় উপস্থিত পলাতক ও উপস্থিত আসামিদের মধ্যে ২২ জনের পক্ষে আইনজীবী বাদীকে জেরা করেন। এদিকে আদালতের কার্যক্রম শুরুর আগে এজলাসের ভেতর থেকে সাংবাদিকদের বের করে দেয়া হয়। কোন সাংবাদিককের এজলাসের ভেতর প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে কর্মরত সাংবাদিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সাত খুনের ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটির আইনজীবী জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আমরা শুরু থেকে অভিযোগ করে আসছি এই মামলায় প্রভাবশালী একটি মহল প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। আদালতের এজলাসে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশে বাধা দান একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। সারাদেশের মানুষ এই বিচারের দিকে তাকিয়ে আছে। সংবাদকর্মীদের প্রবেশ করতে না দেয়ায় ন্যায় বিচার পাওয়া প্রকাশ করেন তিনি। আমরা আশা করব আগামী শুনানির দিনগুলোতে গণমাধ্যম কর্মীদের শুনানি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে আদালতের এজলাস কক্ষে প্রবেশ করতে দেয়া হবে। নিহত চন্দন সরকার ও তার গাড়ির চালক ইব্রাহিম হত্যার মামলার বাদী তার জামাতা বিজয় কুমার পাল আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বের হয়ে সাংবাদিকদের জানান, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুর দেড়টায় আমার শ্বশুর আইনজীবী চন্দন সরকার আদালতের কাজ শেষে তার বাসার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। পথিমধ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে থেকে তাকে এবং তার গাড়ি চালকসহ অপহরণ করে নিয়ে হত্যা করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়া হয়। প্রাথমিকভাবে আমি মামলার এজাহারে এই হত্যাকা-ের জন্য অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তির আসামি করেছিলাম। পরবর্তীতে পুলিশ তদন্ত করে নূর হোসেন, তারেক সাঈদসহ ৩৫ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। বাদী হিসেবে আমি আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছে। আমাকে ২২ জন আসামির আইনজীবী জেরা করেছেন। আমরা এই হত্যাকা-ের সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার চাই। মামলার আসামি পক্ষের আইনজীবী আশরাফুজ্জামান ও ফরহাদ হোসেন জানান, মামলার বাদী কী ভাবে, কখন কোথায় হত্যা করা হয়েছে তার বিশদ বর্ণনা করতে পারেনি। এই মামলার অভিযোগপত্র গঠনের বিরুদ্ধে কয়েকজন আসামি ইতোমধ্যে উচ্চ আদালতে একটি আবেদন জমা দিয়েছেন। ওই আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাক্ষ্য গ্রহণ স্থগিত করার জন্য আবেদন করেছিলাম। আদালত তা না মঞ্জুর করেছেন। পরে আমরা আদালতে কয়েকজন আসামির পক্ষে জেরা করার জন্য সময় প্রার্থনা করেছি আদালত তা মঞ্জুর করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, ৭ খুনের দুটি মামলার মধ্যে একটি মামলার বাদীর সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। উপস্থিত ২৩ আসামির পক্ষে ১০ জন এবং পলাতক ১২ আসামিসহ মোট ২২ আসামির পক্ষের আইনজীবীরা বাদীকে জেরা করেছেন। সাংবাদিকদের এজলাসের ভেতের থেকে বের করে দেয়া এবং প্রবেশ করতে বাধা দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশনা ছিল সাক্ষ্য গ্রহণ চলাকালে আইনজীবী, সাক্ষী ও আসামি ছাড়া অন্য কেউ থাকবে না। তাই সাংবাদিকদের এজলাস ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। এখনও ১২ আসামি পলাতক সাত খুন মামলায় এখনও ১২ আসামি পলাতক রয়েছে। এরা হলো- অবসরপ্রাপ্ত র‌্যাব সদস্য কর্পোরাল মোখলেছুর রহমান, সৈনিক আব্দুল আলিম, মহিউদ্দিন মুন্সী, আল আমিন শরিফ, তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবির, এএসআই কামাল হোসেন, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান, নূর হোসেনের সহযোগী মোঃ সেলিম, সানা উল্লাহ ছানা, শাহজাহান ও জামাল উদ্দিন। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকা থেকে প্যানেল মেয়র ও ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার, নজরুলের বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান স্বপন, নজরুলের সহযোগী তাজুল ইসলাম, স্বপনের গাড়ি চালক জাহাঙ্গীর ও চন্দন সরকারের গাড়ি চালক ইব্রাহিমকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল নজরুল ও চন্দন সরকারসহ ৬ জন ও ১ মে সিরাজুল ইসলাম লিটনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে একটি ও আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ৭ খুনের দুটি মামলায় নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ২৩ আসামির উপস্থিতিতে আদালত অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন নির্ধারণ করেন।
×