ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি হবে মীরসরাই, ব্যাপক কর্মযজ্ঞ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি হবে মীরসরাই, ব্যাপক কর্মযজ্ঞ

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বাংলাদেশে শিল্প এলাকা অনেক রয়েছে। কিন্তু নেই শিল্প শহর। বৃহত্তম ইকোনমিক জোন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামের মীরসরাই হতে যাচ্ছে স্বপ্নের ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি’। বঙ্গোপসাগরের পাড় ঘেঁষে চরাঞ্চলে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। সেখানে নির্মিত হবে ছোট-বড় ১২শ’র বেশি শিল্প কারখানা। থাকবে বন্দর জেটি সুবিধা, বিদ্যুতকেন্দ্র, ট্যুরিজম পার্কসহ নানা সুযোগ-সুবিধা। অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে পুরো মীরসরাইয়ে এখন থেকেই পরিলক্ষিত হচ্ছে প্রাণচাঞ্চল্য। প্রায় ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা সৃষ্টির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বেসরকারী উদ্যোগেও শুরু হয়ে গেছে নির্মাণ তৎপরতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন ‘মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল’ প্রকল্পের কাজ। এদিন তিনি আরও ৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ উদ্বোধন করবেন। তবে সর্ববৃহৎ প্রকল্প হওয়ায় সকলের দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে মীরসরাইয়ের দিকে। মীরসরাইয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়ে যায় বেশ ক’মাস আগেই। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সেই কর্মযজ্ঞের গতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে। সস্তা শ্রমের কারণে বিদেশী অনেক বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করায় সরকারও যত দ্রুত সম্ভব অনেকগুলো অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। অন্তত ১শ’টি ইকোনমিক জোন করার পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন অথরিটির (বেজা)। আর এর মধ্যে ১০টি জোন দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়নের দিকে এগোচ্ছে সরকার। এই ১০ অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় অঞ্চলটি হবে মীরসরাইয়ে। ধু ধু চরাঞ্চলে এখন দিন-রাত যন্ত্রপাতির শব্দ। আশবাদী হয়ে উঠেছে এতকাল ধরে অবহেলিত চরের মানুষ। অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়িত হলে তাদের কর্মসংস্থান হবে, বৃদ্ধি পাবে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক কর্মকা-। একসঙ্গে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে বিধায় শুধু মীরসরাই নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ সেখানে কাজ পাবে। রবিবার প্রধানমন্ত্রী যে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন তার মধ্যে চারটি সরকারী এবং ছয়টি বেসরকারী। সরকারী প্রকল্পগুলো হলোÑ চট্টগ্রামের মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, বাগেরহাটের মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কক্সবাজারের টেকনাফে সাবরাং পর্যটন অঞ্চল। আর বেসরকারী উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন ছয়টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হলোÑ নরসিংদীর পলাশে একে খান গ্রুপের ‘একে খান অর্থনৈতিক অঞ্চল’, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার চরবাউশিয়াতে আবদুল মোনেম লিমিটেডের ‘আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চল’, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে মেঘনা গ্রুপের ‘মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্থনৈতিক অঞ্চল’ ও ‘মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চল’, গাজীপুরে বে গ্রুপের ‘বে অর্থনৈতিক অঞ্চল’ এবং নারায়ণগঞ্জে আমান গ্রুপের ‘আমান অর্থনৈতিক অঞ্চল’। তবে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চলটির নাম ‘মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল’, যা বাস্তবায়িত হচ্ছে সরকারী উদ্যোগে। মীরসরাই থেকে শুরু করে ফেনীর সোনাগাজীর কিছু অংশ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার একর জমি। বেড়িবাঁধের কারণে প্রতি বছরই সেখানে জমির পরিমাণ বাড়ছে। প্রাথমিকভাবে চার হাজার ৮শ’ একর জমির দলিল বেজার কাছে হস্তান্তরিত হলেও পর্যায়ক্রমে অঞ্চলের ব্যাপ্তি ৩০ হাজার একর পর্যন্ত সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জনকণ্ঠকে জানান, মীরসরাইকে ঘিরে রয়েছে সরকারের অনেক বড় পরিকল্পনা। কারণ একসঙ্গে এতবেশি জমি আর কোথাও পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, অন্তত ৩০ হাজার একর জমি সেখানে পাওয়া যাচ্ছে শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য। প্রথম ধাপে ৬১০ একর জমির ভরাটকাজ শুরু হয়েছে, যা শেষ হবে জুন মাসের মধ্যে। এই ভূমির মধ্যে ৫৫০ একর হবে শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য, বাকি ৬০ একরে হবে সড়কবাঁধ ও অভ্যন্তরীণ সড়ক। তিনি আরও জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়তাকিয়া থেকে ইকোনমিক জোন পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত সংযোগ সড়কটি হবে চার লেনের। এর জন্য ১১৪ কোটি টাকা বরাদ্দও হয়েছে। ৩০ জুনের মধ্যেই সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া সাগর ঘেঁষে বামুনসুন্দর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটারের একটি সড়ক নির্মিত হতে যাচ্ছে, যার ভরাটকাজও শেষ হওয়ার পথে। চলতি বছরের মধ্যে সেখানে আরও দেড় হাজার একর জমির ভরাটকাজ সম্পন্ন হবে বলে জানান বেজা চেয়ারম্যান। বেজা সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যেই চীনের ১০টি প্রতিষ্ঠান ও ভারতের বিখ্যাত রিলায়েন্স গ্রুপসহ দেশী-বিদেশী অনেক উদ্যোক্তা মীরসরাই ইকোনমিক জোন পরিদর্শন করে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে। বেশকিছু প্রস্তাবও জমা হয়েছে। জমি ভরাটকাজের পাশাপাশি সে প্রস্তাবগুলোর যাচাই-বাছাই চলছে। যেসব বিনিয়োগকারীর প্রস্তাব উপযোগী মনে হবে সেসব প্রতিষ্ঠানকে ভূমি বরাদ্দ দেয়া হবে। তবে ইকোনমিক জোনে ইপিজেডের মতো শুধু বিদেশী বিনিয়োগকারীই নয়, দেশী-বিদেশী সকল উদ্যোক্তার সুযোগ থাকবে। মীরসরাইয়ের অবহেলিত চরাঞ্চল এখন পরিণত হয়েছে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। এর অবস্থান চট্টগ্রাম নগরী থেকে প্রায় ৬৭ কিলোমিটার দূরে। অর্থনৈতিক অঞ্চলটি হতে যাচ্ছে পীরেরচর, সাধুরচর, চরমোশাররফ ও ইছাখালিরচর এলাকায়। এখন কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছাড়াও অনেক আগ্রহী মানুষও প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছেন এই কর্মযজ্ঞ দেখতে।
×