ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভাষা শহীদদের নিবেদিত কবিতা পাঠের আসর

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ভাষা শহীদদের নিবেদিত কবিতা পাঠের আসর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফাগুনের রংমাখা বসন্ত বিকেলে বসেছিল কবিতাপাঠের আসর। কাব্যিক শব্দসম্ভারে স্মরণ করা হলো বায়ান্নর ভাষাশহীদদের। বর্ণমালার জন্য যারা সঁপে দিয়েছিল প্রাণ জানানো হলো তাদের প্রণতি। কবি ও আবৃত্তিশিল্পীর শিল্পিত উচ্চারণে নিবেদন করা হলো হৃদয়স্নাত শ্রদ্ধাঞ্জলি। মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের আয়োজনে হয়ে গেল একুশের কবিতা নিয়ে আবৃত্তি অনুষ্ঠান। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে পদ্যপাঠের এ আয়োজন করা হয় কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে । শুরুতেই মাহবুল উল আলম চৌধুরীর কবিতার আশ্রয়ে মঞ্চে আসেন বাক্শিল্পী ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। পড়ে শোনান একুশের প্রথম কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি।’ মিলনায়তন পরিপূর্ণ কবিতাপ্রেমীদের আলোড়িত করে উচ্চারিত হয়Ñ এখানে যারা প্রাণ দিয়েছে/রমনার উর্ধমুখী কৃষ্ণচূড়ার তলায়/যেখানে আগুনের ফুলকির মতো/এখানে ওখানে জ্বলছে অসংখ্য রক্তের ছাপ/ সেখানে আমি কাঁদতে আসিনি...। এভাবেই কবিতার দোলায়িত ছন্দে একুশের চেতনায় দীপ্ত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানটি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন সচিব ও কবি ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। কবিতা আবৃত্তিতে অংশ নেন নন্দিত কবিদ্বয় নির্মলেন্দু গুণ ও আসাদ চৌধুরী এবং আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল আলম, মাহিদুল ইসলাম, রূপা চক্রবর্তী, লায়লা আফরোজ, সামিউল ইসলাম পোলাক, অভিনয় ও আবৃত্তিশিল্পী আফজাল হোসেন। এ ছাড়াও কবিতাপাঠ করেন সাবেক সংস্কৃতি সচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি এম আজিজুর রহমান। রূপা চক্রবর্তীর কণ্ঠে উচ্চারিত হয় শামসুর রাহমানের কবিতা ‘বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’। মাতৃভূমির জন্য শিরোনামের কবিতা পড়েন মাহিদুল ইসলাম। সুকান্ত ভট্টাচার্য, শওকত ওসমান, শুভ দাশগুপ্ত, শেখ আকরাম আলী ও নির্মলেন্দু গুণের কবিতা থেকে চয়ন করেন রণজিৎ কুমার বিশ্বাস। হাবীবুল্লাহ সিরাজী রচিত একুশে ফেব্রুয়ারি শিরোনামের কবিতাপাঠ করেন আশরাফুল আলম। দাউদ হায়দায়ের একুশ নামের কবিতা পড়েন আফজাল হোসেন। আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরীর অমর কাব্য ‘একুশের গান’ উঠে আসে কবি আসাদ চৌধুরীর কণ্ঠেÑ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলি পারি...। রবিঠাকুরের বলাকা কাব্যগ্রন্থ থেকে পড়ে শোনান সামিউল ইসলাম। কামাল আবদুল নাসের চৌধুর পঠিত কবিতার শিরোনাম ছিল ‘অভয় মিনার’। প্রধান অতিথির বক্তব্যে কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ভাষা আন্দোলনকে আমি প্রত্যক্ষ না করলেও অনুভব করেছি সেই উত্তাপকে। ক্রমেই মনে হচ্ছে, বর্তমান প্রজন্ম যেন বঞ্চিত হচ্ছে সেই উত্তাপ থেকে। আগে একুশে ফেব্রুয়ারিতে দেয়াল পত্রিকা লেখা হতো, নগ্ন পায়ে প্রভাতফেরিতে অংশ নিত তরুণরা। এখন আর সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না। প্রাণ-মন ও আত্মায় ধারণ করতে একুশে ফেব্রুয়ারিকে। কারণ, ভাষার মর্যাদা রক্ষায় এ দেশের ছাত্র জনতা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল, তাদের স্মরণে কবিরা অজস্র্র কবিতা রচনা করেছেন। এসব কবিতা বাঙালীর সঙ্কট, দুঃসময়ে প্রেরণা যুগিয়েছে। একুশের পথ বয়ে বাঙালী ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতার সূর্য। একুশ অন্তহীন প্রেরণার উৎস। প্রয়াত নাট্যকার স্মরণানুষ্ঠান ॥ ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যত’ শিরোনামে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা স্টুডিও থিয়েটার হলে চলছে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত পাঁচ দিনের প্রয়াত নাট্যকার স্মরণানুষ্ঠান। আলোচনা ও নাট্য প্রদর্শনীর মাধ্যমে এ আয়োজনে স্মরণ করা হচ্ছে মুনীর চৌধুরী, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, সেলিম আল দীন, নূরুল মোমেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, আনিস চৌধুরী, জিয়া হায়দার, সাইদ আহমদ ও এসএম সোলায়মানকে। অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার স্মরণ করা হয় সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ও সেলিম আল দীনকে। বরেণ্য দুই নাট্যকারকে বক্তাদের আলোচনায় ও তাদের রচিত নাটক প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে স্মরণ করা হয়। আজ বুধবার বিকেল পঁাঁচটায় নুরুল মোমেন ও আবদুল্লাহ আল মামুনকে নিয়ে সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন শেষে থাকবে নেমেসিস ও মেরাজ ফকিরের মা নামের দুটি নাটকের প্রদর্শনী। রাখাইন সম্প্রদায়ের নিদর্শন জাদুঘরে হস্তান্তর ॥ পার্বত্য জেলার মহালছড়ি এলাকায় একুশের পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও মানবাধিকারকর্মী মংছেন চীং মংছিন রাখাইন সম্প্রদায়ের পোশাক-পরিচ্ছদ ও কিছু স্মারক মঙ্গলবার জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর কাছে উপহার হিসেবে প্রদান করেন।
×