ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কথা রাখছে না মিয়ানমার, রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ০৫:০০, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

কথা রাখছে না মিয়ানমার, রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত

তৌহিদুর রহমান ॥ দেড় বছর হতে চললেও প্রায় আড়াই হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি রাখছে না মিয়ানমার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বার বার তাগিদ দেয়া হলেও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের কোন সাড়া নেই। সে কারণে রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাশুমারি শুরু হলেও রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে কোন বাধা নেই। কূটনৈতিক সূত্র এসব তথ্য জানায়। ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট ঢাকায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের অষ্টম বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে দুই হাজার ৪১৫ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় মিয়ানমার। তখন উভয় দেশের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল দুই মাসের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তবে দুই মাসের মধ্যে যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অনেকটাই পিছিয়ে যায়। এরপর সে বছরের নবেম্বর মাসে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। বাংলাদেশের কমিটির চূড়ান্ত তালিকা মিয়ানমার সরকারের নিকট পাঠানো হয়। তবে সেই থেকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের আর কোন সাড়া নেই। রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটির তালিকা মিয়ানমার সরকারের নিকট পাঠানো হয়। এরপর মিয়ানমার সরকার থেকেও একটি কমিটির তালিকা পাঠানোর কথা ছিল। মিয়ানমারের কমিটির তালিকা পাওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। দুই দেশের যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটির তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যৌথ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম ধাপে কক্সবাজারের কুতুপালং ও নোয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত দুই হাজার ৪১৫ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার। তবে রোহিঙ্গা নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে দুই দেশের পক্ষ থেকে পৃথক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দুই দেশের কমিটি থেকে একটি যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটিই বাংলাদেশ থেকে এই আড়াই হাজার রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেয়ার জন্য কার্যক্রম শুরু করবে। সে অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিটির প্রধানকে (আরআরআরসি) নিয়ে বাংলাদেশ অংশের কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির তালিকা মিয়ানমারকে পাঠানোর পর দেশটি আর কোন সাড়া দেয়নি। তাই কবে নাগাদ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে, সে বিষয়ে এখনই কেউ বলতে পারছেন না। এদিকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের গণনা শুরু হয়েছে। মিয়ানমার থেকে আসা এই জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে এমন ছয় জেলায় একযোগে শুমারি চলছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহায়তায় পরিসংখ্যান ব্যুরো এ শুমারি চালাচ্ছে। এই ছয়টি জেলা হলোÑ চট্টগ্রাম, কক্সবজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও পটুয়াখালী। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গাশুমারি শুরু হলেও আড়াই হাজার রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে কোন বাধা নেই। কেননা বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের প্রকৃত সংখ্যা বের করার জন্য শুমারি করা হচ্ছে। শুমারির মানে এই নয় যে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আটকে থাকবে।
×