ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জাদুঘর মিলনায়তনে জমে উঠেছে ঋত্বিক ঘটক রেট্রোস্পেক্টিভ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

জাদুঘর মিলনায়তনে জমে উঠেছে ঋত্বিক ঘটক রেট্রোস্পেক্টিভ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যারা সিনেমা দেখতে ভালবাসেন তাদের জন্য চমৎকার এক আয়োজন চলছে রাজধানীতে। বাংলা চলচ্চিত্রের প্রবাদপুরুষ ঋত্বিক কুমার ঘটকের ৮টি ধ্রুপদী ছবি নিয়ে সাজানো হয়েছে আয়োজনটি। সব ছবির প্রদর্শনী রাখা হয়েছে সবার জন্য উন্মুক্ত। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে চলছে ঋত্বিক ঘটক রেট্রোস্পেক্টিভ। সেলুলয়েডে মানবিকতার কথা বলা এই চলচ্চিত্রকারের ৯০তম জন্মবার্ষিকী ও ৪০তম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে যৌথভাবে এ রেট্রোস্পেক্টিভের আয়োজন করেছে চলচ্চিত্র ফিল্ম সোসাইটি ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। রবিবার ছিল ছবি দেখার এ আয়োজনের তৃতীয় দিন। ছবিপ্রেমীদের আগমনে জমে ওঠা এই রেট্রোস্পেক্টিভে এদিন দেখানো হয় ঋত্বিক নির্মিত দুটি পূর্র্ণদৈর্ঘ্য ও একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি। পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি দুটি হলো বাড়ি থেকে পালিয়ে ও মেঘে ঢাকা তারা। স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিটির শিরোনাম ছিল ফিয়ার। বসন্ত বিকেলে দেখানো হয় বাড়ি থেকে পালিয়ে ছবিটি। শিবরাম চক্রবর্তীর ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৫৮ সালে ঋত্বিক নির্মাণ করেন তার এই তৃতীয় কাহিনী চলচ্চিত্রটি। আট বছরের শিশু কাঞ্চনের চোখে দেখা তৎকালীন কলকাতার বাস্তবচিত্র চিত্রিত হয়েছে ছবিটিতে। ছবির গল্পে এল দোরাদোর স্বপ্ন চোখে বাড়িয়ে থেকে পালিয়ে কলকাতায় আসে কাঞ্চন। নতুন শহরে এসে শিশুটিকে মুখোমুখি হতে হয় হতাশা আর দুঃখের। খেই হারানো বালক কাঞ্চন তাই চানাচুরওয়ালা হরিদাসের কাছে জানতে জানতে চায়Ñ ‘এই শহরে এত দুঃখ কেন?’ গোটা চলচ্চিত্রটির কাহিনী আবর্তিত হয় এই শিশুটির উপলব্ধির মাধ্যমে। ঋত্বিক ঘটকের চিত্রনাট্যের ছবিটিতে অভিনয় করেছেন কালী ব্যানার্জী, সতীন্দ্র ভট্টাচার্য, শ্রীমান দীপক, কেষ্ট মুখার্জী, পদ্মা দেবী, জ্ঞানেক মুখার্জী, জহর রায় প্রমুখ। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রদর্শিত মেঘে ঢাকা তারা ও ফিয়ার। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শক্তিপদ রাজগুরুর উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৬০ সালে ঋত্বিক নির্মাণ করেছিলেন মেঘে ঢাকা তারা ছবিটি। এটি ছিল দেশভাগের ট্রিলজির ওপর নির্মিত ঋত্বিকের প্রথম ছবি। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পূর্ববঙ্গ থেকে চলে আসা একটি শরণার্থী পরিবারের জীবন সংগ্রাম, সাংসারিক ও মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন দারুণ হৃদয়গ্রাহীভাবে চিত্রিত হয়েছে এই ছবিতে। মেলোড্রামার পাশাপাশি সংলাপ এবং ভারতীয় রাগসঙ্গীতের যুগল ব্যবহারে চমৎকারভাবে শিল্পিত রূপ পেয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। এই ছবিতেই ঋত্বিক প্রথম ব্যবহার করেছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত। ছবির মেলোড্রামাটিক চিত্রকল্পগুলো সহজেই স্পর্শ করে দর্শককে। জীবন্মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছবির প্রধান চরিত্র নীতা যখন বলে ‘দাদা আমি বাঁচতে চাই’ পাহাড় থেকে পাহাড়ে ধ্বনিত হয় তার এ বেঁচে থাকার আকুতি। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন সুপ্রিয়া চৌধুরী, অনিল চ্যাটার্জী, নিরঞ্জন রায়, বিজন ভট্টাচার্য ও জ্ঞানেশ মুখার্জী। একুশের অনুষ্ঠানমালার সপ্তম দিন ॥ রাষ্ট্র চলবে বাংলায় না বলা অন্যায় সেøাগানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা। ১৪ দিনব্যাপী এ আয়োজনের সপ্তম দিন ছিল রবিবার। এদিন বিকেলে অনুষ্ঠানের শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন একুশের অনুষ্ঠানমালা উদ্্যাপন কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে নন্দন, সুরসাগর ললিতকলা একাডেমি ও সুরধ্বনি। একক কণ্ঠে গান শোনান সুরাইয়া পারভীন ও মৌরিন সানজানা জামান। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করেন কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র ও চারুবাক। একক আবৃত্তি করেন কাজী রাজেশ, কামরুন নাহার হেলেন ও নূর উন নবী শান্ত। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যজান ও আনন্দলোকের শিল্পীরা। শিশু সংগঠনের পরিবেশনায় অংশ নেয় কল্পরেখা। সব শেষে ছিল মুক্তমঞ্চ থিয়েটারের পথনাটক নাট্যদ্বীপ। শাহ আবদুল করিমের জন্মশতবার্ষিকী আজ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা সুনামগঞ্জ থেকে জানান, অসংখ্য কালজয়ী, জনপ্রিয় গানের রচয়িতা বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের জন্মশতবার্ষিকী আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি। সচ্ছলতার হাতছানি ও বিত্তের মোহকে জলাঞ্জলি দিয়ে আবদুল করিম ধ্যানের আকাশ কালনী নদীর তীরের দিরাই উপজেলার ছায়াঘেরা উজানধল গ্রামকেই বেছে নিয়েছিলেন। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই কিংবদন্তি বাউলের জন্মশতবার্ষিকীতে আজ উজানধলে তেমন কোন আয়োজন না থাকলেও সুনামগঞ্জ-সিলেট-ঢাকাসহ সারাদেশে এমনকি বাংলা ভাষাভাষী ভারতের কলকাতা, শিলং, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পালিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জে সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় বৃহৎ পরিসরে সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রীর উপস্থিতিতে মার্চের ১ম অথবা ২য় সাপ্তাহে উদযাপন করা হবে বলে জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন। ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানায় আবদুুল করিমের জন্ম। দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করে বেড়ে ওঠেন তিনি। দরিদ্র পিতা ইব্রাহিম আলী শিশু করিমকে অন্যের বাড়িতে গরু রাখালের চাকরি দেন। আর সেই রাখাল বালক ছেলেবেলা থেকেই শুরু করেন সঙ্গীত সাধনা। বাউল সম্রাটের প্রেরণা স্থান ছিল তার স্ত্রী আফতাবুন্নেসা। তিনি তাকে আদর করে ডাকতেন ‘সরলা’। স্ত্রীর প্রয়াণের পর সরলাকে নিয়ে গান রচনা করেন তিনি। জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তার নিজ বাড়ি উজানধলে মিলাদ মাহফিল আলোচনা সভা ও বাউল গানের পারিবারিকভাবে আয়োজন করা হয়েছে। শাহ আবদুল করিমের সর্বক্ষণিক শিষ্য বাউল আবদুর রহমান তার স্মৃতিগুলো ধরে রাখার জন্য একটা মিউজিয়াম করে দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
×