ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের আশঙ্কা ॥ কমছে পর্যটক

১৭ স্থানে ধস ॥ বান্দরবান-থানচি সড়ক

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

১৭ স্থানে ধস ॥ বান্দরবান-থানচি সড়ক

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান, ১৪ ফেব্রুয়ারি ॥ বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রধান সড়কে ১৭টি স্থানে অসংখ্য ধস দেখা দিয়েছে। এ কারণে যে কোন সময় বান্দরবান-আনচি সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। জানা গেছে, বান্দরবান শহর থেকে থানচি সদরের দূরত্ব ৮২ কিমি। এই সড়কে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে স্থানীয়রা। গত বছরের ২৩ জুলাই টানা বর্ষণের কারণে জেলা সদর হতে ১২ কিলোমিটার দূরে সড়ক ধসে পড়লে ২৬ জুলাই থেকে জেলার সঙ্গে থানচির সড়ক যোগাযোগ একমাত্র বিচ্ছিন্ন থাকে। সড়ক পথের ১০টি স্থানে খানা খন্দক এবং ১৭টিতে ছোট বড় সড়ক ধস দেখা দিয়েছে। সতেরো মাইল, পুড়াবাংলা, গ্যালেঙ্গা রাস্তার মাথা, কাপ্রু পাড়া, নীলগিরি, জীবন নগর থেকে বলিপাড়া যাওয়ার পথে কলাই পাড়া ও সাখয়পাড়া পর্যন্ত সড়কের পাশ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় চলাচল বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্য হ্লা চিং মারমা জানান, মাসিক সমন্বয় সভায় জেলা প্রশাসক, পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি এবং সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের সড়কটি সংস্কারের ব্যাপারে অনেকবার বলার পরও এখনও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। দেখা যায়, কিছু কিছু স্থানে ধস ঠেকানোর জন্য ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। আর কোন কোন স্থানে বল্লি ড্রাইভ করে সড়ক ধস ঠেকানোর চেষ্টা করা হলেও তা ঠেকানো যায়নি, ফের নতুন করে ধসে যাচ্ছে সড়ক। আর এই ধসের মধ্যে দিয়ে প্রতিনিয়ত যান চলাচল করছে। স্থানীয়রা জানায়, গত বছর বৃষ্টিপাতে পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে সড়কটি বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১০-১৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। যান চলাচলের সময় যানবাহনের যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। ফলে উপজেলা থেকে কৃষি ও নিত্য পণ্য জেলায় আনা ও নিত্য দ্রব্য জেলা সদর থেকে নিতে ব্যবসায়ীদের গুনতে হচ্ছে কয়েকগুণ ভাড়া। থানছি বাজার কমিটি সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, সড়ক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে নিত্যপণ্য আনতে এখন দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হয়, ফলে উপজেলায় পণ্যের দামও বেশি। থানচির রেমাক্রি, নাফাকুম, বড়মদক, ছোটমদক,অমিয়কুম দর্শনীয় পর্যটন স্পট। প্রতিবছর পর্যটকের আগমনে মুখর হয়ে উঠে স্পটগুলো। এসব জায়গায় যেতে পর্যটকদের এই সড়ক পথ দিয়ে যেতে হয়। সড়কের দূরবস্থার কারণে পর্যটকদের সংখ্যা কমছে দিন দিন। ফলে বেকার হচ্ছে পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। থানচিতে কর্মরত পর্যটকদের গাইড ডাবলু বড়–য়া বলেন, সড়ক খানাপ হওয়ার কারণে থানচিতে এখন দূর-দূরান্তের পর্যটক আসছে খুব কম। জানা গেছে, গত নবেম্বরে সড়ক সংস্কারের কাজ সেনাবাহিনীর কাছ থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগে হস্তান্তর করা হয়। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়কটি সংস্কারের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সেনাবাহিনী এবং সড়ক বিভাগের টানাপোড়নের কারণে সড়কটি মেরামতের জন্য কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বলেন, গত বছর এক মাস বান্দরবান- থানচির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পর সেনাবাহিনীর ১৬ ইসিবি সড়কটি চালু করে, স্থায়ীভাবে সড়কটি মেরামত না করলে বন্ধ হতে পারে যোগাযোগ ব্যবস্থা। দুই প্রতিষ্ঠানের একে অপরের ওপর দায় চাপানো বাদ দিয়ে আগামী বর্ষার আগে পুনরায় সড়ক মেরামতের কাজ সম্পন্ন করা না হলেএবার মাসের পর মাস জেলার সঙ্গে থানচি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে পারে, এমন আশঙ্কা স্থানীয়দের।থানচি ১৬ ইসিবির মেজর হুমায়ুন কবির জানান, সড়কটি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে। বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ইউসুফ জানান, সড়কটি মেরামতের জন্য পুনরায় সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে।
×