ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্থান নির্ধারণী ম্যাচে লঙ্কানদের হার ৩ উইকেটে

শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে তৃতীয় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে তৃতীয় বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ কথায় আছে, ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো।’ বাংলাদেশ সেই ভালই পেল। ঘরের মাটিতে হচ্ছে অনুর্ধ-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ। যা আজ শেষ হয়ে যাবে। এ বিশ্বকাপে শিরোপা জেতার স্বপ্ন ছিল। তা ভেস্তে গেছে। ফাইনালে ওঠার স্বাদ পূরণ হতে পারত। তাও হলো না। তাই তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটিতে যখন খেলতে হচ্ছে, জয় হলেই ভাল হয়। অন্তত ১৬ দলের মধ্যে সেরা তিন দলের একটি তো হওয়া যাবে। বাংলাদেশ সেই কাজটি করে দেখাল। চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে শ্রীলঙ্কা যুব দলকে ৩ বল বাকি থাকতে ৩ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপের তৃতীয় হলো বাংলাদেশ যুব দল। ম্যাচে টস জিতে শ্রীলঙ্কা। আগে ব্যাট করে। ৪৮.৫ ওভারে ২১৪ রান করেই অলআউট হয়ে যায় লঙ্কানরা। অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ (৩/২৮), আব্দুল হালিম (২/২৬) ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন (২/৪৮) দুর্দান্ত বোলিং করেন। ব্যাট হাতে শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক চারিথ আশালঙ্কা সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেন। জবাবে ৭ উইকেট হারিয়ে ৪৯.৩ ওভারে ২১৮ রান করে জিতে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে মিরাজ সর্বোচ্চ ৫৩ রান করেন। ম্যাচটি সহজভাবেই জিততে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু কঠিন করে জিতল। ২১৫ রানের টার্গেট অনেক বড় নয়। বিশেষ করে যে দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখে তাদের কাছে তো নয়ই। কিন্তু হারের সম্ভাবনাও তৈরি হয়ে যায়! জিততে ১৮ বলে যখন ২৭ রানের প্রয়োজন থাকে। এমন মুহূর্তে গিয়ে পেন্ডুলামের মতো ম্যাচ যেন দুলতে শুরু করে। দুই দলের জয়ের সম্ভাবনা দেখা যায়। যেখানে বাংলাদেশ সহজেই জেতার কথা, সেখানে শ্রীলঙ্কার জয়ের সম্ভাবনা জাগে। ৪৮তম ওভারে গিয়ে রানও হয় যেমন, আবার উইকেটও পড়ে যায়। ওভারটিতে ১২ রান হয়। কিন্তু ভাল ব্যাটিং করতে থাকা মোসাব্বেক হোসেন (৯ বলে ১১ রান) আউট হয়ে যান। ১২ বলে যখন জিততে ১৫ রান প্রয়োজন, এমন সময়ে একটি নো ও একটি ওয়াইড হওয়াতে বাংলাদেশ ২টি রান এমনিতেই পেয়ে যায়। জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়। কিন্তু মুহূর্তেই সেটি তাড়াহুড়ো করে রান নিতে গিয়ে ভেস্তে যেতে থাকে। দলের ৪৯ রানের সময় ১৯ রান করে আহত হয়ে রিটায়ার্ড হার্ট হওয়া ব্যাটসম্যান জাকের আলী ব্যাট হাতে আবার নেমেই স্কুপ শট খেলে বাউন্ডারি হাকান। এ শটটিই যেন জয়ের আশা জাগিয়ে দেয় আবার। কিন্তু ৪৯তম ওভারের শেষ বলে গিয়ে ২ রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে যান সাইফুদ্দিন (১৯)। দল বিপাকে পড়ে যায়। শেষ ওভারে জিততে ৬ বলে ৪ রান লাগে। ¯œায়ুচাপ বেড়ে যায় তখন। সবার ভেতরই উত্তেজনা কাজ করে। যদি না পারে বাংলাদেশ! কিন্তু প্রথম বলে মেহেদী হাসান রানা এক রান নেয়ার পর দ্বিতীয় বলে জাকের ২ রান নেন। ম্যাচ টাই হয়। ৪ বলে যখন জিততে ১ রানের প্রয়োজন থাকে, তখন মিডউইকেট দিয়ে বাউন্ডারি হাকিয়ে ম্যাচই জিতিয়ে দেন জাকির (৩১*)। প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ¯œায়ুচাপ, উত্তেজনা সব সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়ে যায়। বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা তৃতীয় হওয়ার আনন্দ করতে থাকেন। এ অর্জনও কম নয়। এখন পর্যন্ত যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা প্রাপ্তি এটি। ২০০৬ সালে মুশফিকুর রহীমের নেতৃত্বে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। যা এ বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত সেরা অর্জন ছিল। মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বে এবার যখন সেমিফাইনালে ওঠে দল, তখনই নিশ্চিত হয়ে যায় সর্বোচ্চ প্রাপ্তি। অধিনায়কত্বে মুশফিককে ছাপিয়ে সেরা অর্জন মিরাজের ঝুলিতে যুক্ত হয়ে যায়। অন্তত সেরা চার হওয়া নিশ্চিত হয়। বাংলাদেশ হয়ে গেল তৃতীয়। ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে হয় ম্যাচটি। সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে যখন ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন মাটি হয়ে যায়, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যেন মনোবল হারিয়ে ফেলে। হতাশায় ভুগতে থাকে। কোচ মিজানুর রহমান বাবুল তখন ক্রিকেটারদের বোঝান। তৃতীয় স্থান হলেও অনেক প্রাপ্তি মিলবে, তা স্মরণে আনেন। অনেক অর্জন মিলেছে। এখন শেষটা ভাল করার দিকেই মনোযোগী করে তোলেন মিরাজ, নাজমুল হোসেন শান্ত, জাকির হাসান, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, সালেহ আহমেদ শাওনদের। সেই মনোযোগে তৃতীয় স্থানটি মিলেছে। বিশ্বকাপে ১৬টি দল খেলেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় দল কারা হবে, তা নিশ্চিত হবে আজ ফাইনাল ম্যাচের পর। চ্যাম্পিয়ন যে দল হবে তারা ১ নম্বর ও রানার্সআপ যে দল হবে তারা ২ নম্বর দল হবে। তিন নম্বর দল হয়েছে বাংলাদেশ। চার নম্বর হয়েছে শ্রীলঙ্কা। পাঁচ নম্বর পাকিস্তান, ৬ নম্বর ইংল্যান্ড, ৭ নম্বর নামিবিয়া, ৮ নম্বর নেপাল, ৯ নম্বর আফগানিস্তান, ১০ নম্বর জিম্বাবুইয়ে, ১১ নম্বর দক্ষিণ আফ্রিকা, ১২ নম্বর নিউজিল্যান্ড, ১৩ নম্বর আয়ারল্যান্ড, ১৪ নম্বর স্কটল্যান্ড, ১৫ নম্বর কানাডা ও ১৬ নম্বর হয়েছে ফিজি। ৫ থেকে ৮ নম্বর দল কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে। ৯ থেকে ১৬ নম্বর দল গ্রুপ পর্বই অতিক্রম করতে পারেনি। ৯ নম্বর দল প্লেট চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ১ থেকে ৪ নম্বর দল সেমিফাইনাল খেলেছে। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো যুব বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলেছে। যুব বিশ্বকাপে ১১ আসরের মধ্যে ১০ বার অংশ নেয় বাংলাদেশ। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ যুব দল অংশ নেয়নি। ১৯৯৮ সালে নবম (প্লেট চ্যাম্পিয়ন), ২০০০ সালে ১০ম, ২০০২ সালে ১১তম, ২০০৪ সালে নবম (প্লেট চ্যাম্পিয়ন), ২০০৬ সালে পঞ্চম (কোয়ার্টার ফাইনাল), ২০০৮ সালে অষ্টম (কোয়ার্টার ফাইনাল), ২০১০ সালে নবম (প্লেট চ্যাম্পিয়ন), ২০১২ সালে সপ্তম (কোয়ার্টার ফাইনাল), ২০১৪ সালে নবম (প্লেট চ্যাম্পিয়ন) ও এবার শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে তৃতীয় (সেমিফাইনাল) হয় বাংলাদেশ।
×