ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্ত দিয়ে চোরাচালানে সন্ত্রাস শক্তিশালী হচ্ছে ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:০২, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সীমান্ত দিয়ে চোরাচালানে সন্ত্রাস শক্তিশালী হচ্ছে ॥ অর্থমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, চোরাচালানের মাধ্যমে সন্ত্রাস অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে পড়ে। এজন্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। শনিবার কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর আয়োজিত ‘চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকি রোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডি্েপ্লামা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশে এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালক ডক্টর মইনুল খান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশের মধ্যে যাতে শুল্ক বাধাগুলো না থাকে, সেজন্য আমরা বহুদিন ধরে বর্ডারলেস (সীমান্তহীন) দেশের কথা বলে আসছি। এটা আমাদের স্বপ্নও ছিল। কিন্তু বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির কারণে যতদিন যাচ্ছে সেই আশা তত দূরে সরে যাচ্ছে। বর্ডার দিয়ে বেশকিছু পণ্য প্রবেশ করে যেগুলো আমরা পছন্দ করি না। এমন তিনটি পণ্য হলো সোনা, কোকেন ও টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন পণ্য অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে দেশের ভেতর ঢোকে। এসব চোরাচালানের মাধ্যমে সন্ত্রাস অত্যন্ত শক্তিশালী হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মুক্তবাজারের কথা চিন্তা করে আমরা শুল্ক অনেক কমিয়ে দিয়েছি। এক সময় রাজস্ব আয়ে শুল্কের অবদান সব থেকে বেশি ছিল। এখন রাজস্ব আয়ে শুল্কের অবদান সব থেকে কম। তবে এখন কিছু শুল্ক রাখা হয়েছে। সন্ত্রাস বা অপরাধ আটকাতেই আমাদের এ ব্যবস্থা (শুল্ক আরোপ) করতে হয়েছে। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমেদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান, মেজর জেনারেল (অব) আব্দুর রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের স্বাধীনতায় যাতে হাত না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অপ্রয়োজনীয় আইনগুলো সংস্কার করতে হবে। ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা আমাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমেদ বলেন, দেশে অনেকভাবে চোরাচালান হচ্ছে। বাথরুমের মধ্যে সোনা পাওয়া যাচ্ছে। পেটের ভিতর থেকে জোর করে সোনা বের করা হচ্ছে। দেশের নাগরিক হিসেবে এটা দেশ ও আমাদের জন্য খুবই লজ্জার বিষয়। দুর্নীতি করলে এনবিআর কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী উভয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন-বিমানের সিট খুলে কীভাবে এতগুলো সোনা ভরা হলো কেউ কি জানে না? সংশ্লিষ্টদের ইন্ধন ছাড়া এটি সম্ভব না। তিনি বলেন, কাস্টম থেকে পণ্য ছেড়ে দেয়ার পর সীমান্তের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে আবার তল্লাশি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এটি বন্ধ করা উচিত। এ সময় অর্থমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে এফবিসিসিআই সভাপতি মাতলুব বলেন, কাস্টম কর্মকর্তারাই বলেছেন, এটি সীমান্ত থেকে ৫ কিলোমিটার পরে চেক করা হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের সীমান্তে মিয়ানমারকে ইয়াবা কারখানা করতে দেয়া হয়েছে। কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। কোথায় গেল বিজিবি। সীমান্তে আজ যা ধরা পড়ছে, তা গাছের একটি পাতা মাত্র। একটি পাতা পড়লে গাছের আরও ১০টি পাতা গজাবে। চোরাচালান বন্ধে মূল উৎপাটনে কেউ ব্যবস্থা নিচ্ছে না, বলে জানান আব্দুল মাতলুব আহমেদ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান বলেন, সীমান্ত থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে বিজিবি চেক করে যদি কোন অবৈধ পণ্য না পায়, তাহলে আমি বলব এটি অন্যায় হচ্ছে। কিন্তু যদি কাস্টম ছেড়ে দেয়ার পরও চেক করে অবৈধ পণ্য পাওয়া যায় তাহলে সেটার দায় নেবে কে? মেজর জেনারেল (অব) আব্দুর রশীদ বলেন, ভৌগোলিক অবস্থার কারণে বাংলাদেশ চোরাচালানের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বৈধ-অবৈধ একটি ব্যবসা রয়েছ। তা হলো সীমান্ত দিয়ে গরুর ব্যবসা। এ ব্যবসায় ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ রয়েছে। তিনি বলেন, চোরাচালান, সন্ত্রাসী ও সংগঠিত অপরাধচক্র এই তিনটি বিষয়ের সমন্বয় ঘটেছে। আমরা দেখছি অস্ত্রের চোরাচালান বন্দরের বাইরে দিয়ে হচ্ছে। কিন্তু এর ঝুঁকি দেশের ওপর পড়ছে। অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, চোরাচালান ও জঙ্গীবাদ দেশের জন্য হুমকি। সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়নের জন্য চোরাচালানকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
×