ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দায়িত্বশীলতা

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

দায়িত্বশীলতা

দায়িত্ব এবং কর্তব্যবোধে ঘাটতি থাকা বেমানান হয়ে ওঠে দ-মু-ের হর্তাকর্তাদের জন্য। কর্তব্যনিষ্ঠা তখনই আসে; যখন মানুষ কর্তব্য পালন বুঝতে পারে। কর্তব্য কী সে কথা তখনই ঠিকভাবে স্পষ্ট হয় যখন সমাজের যুক্তি গৃহীত হয়। নিজের দেশ ও সমাজের স্বার্থটা তারও স্বার্থ। দেশের স্বার্থ সাধন নিজেরও কর্তব্য। যদি তারা মনে করেন পেট্রোলবোমায় পুড়ছে যানবাহন, মরছে মানুষ, তাতে তাদের কী যায় আসে- এটা নিকটকালের স্মৃতি। সেক্ষেত্রে তাদের কাছে দেশ-জাতি ও সমাজের প্রতি কর্তব্যের কথা বলা অর্থহীন। যতদিন তাদের মাথায় জনগণ এবং তাদের প্রতি দায়িত্ব বিরাজ না করবে, ততদিন তাদের কর্তব্যবোধ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। আত্মবিশ্বাসী সমাজে যে মানুষদের দায়িত্ববান, কর্তব্যনিষ্ঠ ও যুক্তিবাদী বলা হয়, সময়ের পার্থক্যে; অবস্থার বৈগুণ্যে তারাই দায়িত্ব ও কর্তব্যবিচ্যুত এবং যুক্তিতে ভয় পেতে পারে। বাস্তব অবস্থা যখন বিশালভাবে পাল্টে যায় তখন বিরাট অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়। মানুষের জীবন সংগ্রাম ক্রমশই কঠিন হয়। একদিকে গ্রাসাচ্ছাদনের কষ্ট বাড়ে, অন্যদিকে মানুষের মনে অরাজকতা তৈরি হয়। এই ত্রিশঙ্কু সমাজে স্বাভাবিকভাবে অধিকাংশ মানুষ উচ্চাসনের মেজাজে পুরনো বিশ্বব্যাখ্যা; পরিচিত জীবন ধারাকে আঁকড়ে থাকতে চায়। এই আঁকড়ে থাকার জন্যই আবার সমাজে নতুন যুক্তি প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়। ক্ষমতাবান মানুষ সবসময় নিজের মেজাজ সম্পর্কে সচেতন নয় এবং নিজের অবস্থার জন্য দায়ী এমনও নয়। পুঞ্জীভূত মানসিক আলস্য সবসময় দেখা যায়, জ্ঞানের প্রসার সর্বদা সমান হয় না, মূল্যবোধও সহজে পাল্টায় না। প্রকৃতপক্ষে যুক্তি- ভীতু মানুষ সাধারণ মানুষ, অধিকাংশ মানুষ। কিন্তু ক্ষমতাবান মানুষ উচ্চাসনের মানুষ, সংখ্যায় অত্যল্প। যারা ক্ষমতাধর, সরকার পরিচালনা যারা করেন, মন্ত্রণালয়ের প্রধান যারা, সেসব মন্ত্রীর কাছে দেশ-জাতি ও জনগণের প্রত্যাশা যা, তা স্বাভাবিকের বাইরে নয়। মন্ত্রীরা হবেন দক্ষ, যোগ্য এবং পরিশ্রমী ও দেশের হিতসাধনে হবেন নিবেদিতপ্রাণ, নিবিষ্ট মনে সব করবেন পর্যবেক্ষণ ও পরিচালন- এমন প্রত্যাশা স্বাভাবিক। মন্ত্রীরা মহামানব না হতে পারেন কিন্তু অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ হবেন। যে দৃষ্টি তাকে জনগণের ভাষা, চাহিদা পূরণ করতে সহায়ক হবে। প্রতি সপ্তাহে মন্ত্রিসভার যে বৈঠক হয়, তাতে মন্ত্রীরা গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেবেন নানা বিষয়ে, নিজ মন্ত্রণালয় ছাড়াও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের এজেন্ডা নিয়ে করবেন আলোচনা, এটাই রীতি আর সেই কারণে বৈঠকের ক’দিন আগেই এজেন্ডাসহ ফাইল তারা পেয়ে থাকেন। এজেন্ডা তারা মনোযোগ সহকারে পাঠ করে সভায় মূল্যবান মতামত দেন। সবার মতামত নিয়েই এজেন্ডা গৃহীত হয়- এটাই দৃষ্টান্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পাঠবিমুখতায় হতাশাই ব্যক্ত করেছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ছাড়া অন্য মন্ত্রীরা আলোচনায় অংশ না নেয়ায় তিনি হতাশ হয়েই তাদের উদ্দেশে বলেছেন; তাহলে ফাইল পাঠিয়ে লাভ কী? এজেন্ডার ফাইল পাঠ না করার কারণে আলোচনায়ও অংশ নিতে পারেন না অন্য মন্ত্রীরা। ফাইল পড়ে সংশ্লিষ্ট বিষয় অবহিত হলে আলোচনায় অংশ নিতে পারেন তারা, এতে সকলের ধ্যান-ধারণার সমন্বয়ে অধিকতর ভাল করা সম্ভব যে হয় প্রধানমন্ত্রী তা স্পষ্টও করেছেন। ফাইল না পড়া ঐতিহ্যের মধ্যে নিজের জায়গা সহজেই আবিষ্কার তারা হয়ত করতে পারেন। কিন্তু ফাইল পড়ে হোমওয়ার্ক করে সভায় উপস্থিত হওয়ার রীতিটি ক্রমশ লুপ্ত হওয়া সুকাজ নয়। বর্তমান কালে মন্ত্রীরা হয়ত ধরে নিয়েছেন, ফাইল পড়া ও মতামত দানের কাজটি প্রধানমন্ত্রীই করবেন। এ নিয়ে হয়ত তাই তারা মাথা ঘামাতে অপারগ। হয়ত সেজন্য তারা সাধনশীল হয়ে উঠছেন না। দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ তাই হয়ে উঠেছে নড়বড়ে। আজ মনে হয় বাঙালীর ইতিহাসে শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ থাকবে। কিন্তু এই ফাইল না পড়াদের কোন উল্লেখ থাকবে না। কারণ অদম্য কর্মশক্তির সঙ্গে নেই সম্পর্ক। দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধে এবং সমাজধারাকে বদলাতে শেখ হাসিনা যে অবস্থানে ক্রমশ উন্নীত হচ্ছেন, তাতে মন্ত্রীদের অবস্থান দূরবর্তী দ্বীপে। এমনটা কাম্য হতে পারে না।
×