ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৫০ মিটার ফ্রি পিস্তলে স্বর্ণ উপহার দিলেন শাকিল

চতুর্থ স্বর্ণ এলো শাকিলের হাত ধরে

প্রকাশিত: ০৯:০২, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

চতুর্থ স্বর্ণ এলো শাকিলের হাত ধরে

রুমেল খান ॥ তিন স্বর্ণপদক জয়ের পর কেমন যেন একটু ঝিমিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ দল। আসি আসি করেও আসছিল না কাক্সিক্ষত আরেকটি সোনার পদক। বুধবার সাউথ এশিয়ান গেমসে (এসএ গেমস) অবশেষে স্বর্ণের মুখটিও দর্শন করে ফেলল বাংলাদেশ ক্রীড়া দল। গুয়াহাটি থেকে এদিন দেশকে স্বর্ণপদক এনে দিয়েছেন বাংলাদেশের শূটার শাকিল আহমেদ। শূটিংয়ে ৫০ মিটার ফ্রি পিস্তল ইভেন্টে ১৮৭.৬০ স্কোর করে স্বর্ণ জিতে নেন শাকিল। ভারতের ওম প্রকাশ ১৮৭.৩০ স্কোর করে রৌপ্য এবং পাকিস্তানের কলিমুল্লাহ খান ১৬৫.৯০ স্কোর করে লাভ করেন তাম্রপদক। উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত এই আসরে সাঁতারে দুটি স্বর্ণ জিতেছেন মাহফুজা আক্তার শিলা। আর ভারোত্তোলনে দেশকে আসরের প্রথম সোনা এনে দেন মাবিয়া আক্তার সিমান্ত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শূটার শাকিলের পাশাপাশি তার সতীর্থ আনোয়ার হোসেন ও মহেন্দ্র কুমার সিংহ যদি ভাল করতে পারতেন, তাহলে এই ইভেন্টের দলগত স্বর্ণপদকটিও করায়ত্ত করতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু আনোয়ার ষষ্ঠ ও মহেন্দ্র অষ্টম হওয়ায় বাংলাদেশ দলগত তাম্রপদক লাভ করে। ভারত স্বর্ণ ও পাকিস্তান জেতে রৌপ্যপদক। বাংলাদেশ যে গুটিকয়েক খেলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সর্বোচ্চ সাফল্য পেয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শূটিং। নব্বই দশকে সার্ক সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শূটিংয়ে ছিল সবার চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন কারণে শূটিংয়ে অন্য দেশগুলোর চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। গোলা-বারুদের এ খেলাটিতে মাঝে মধ্যেই ঘুরে দাঁড়ায় এ ক্রীড়া ডিসিপ্লিনটি। কেউ কেউ মাঝে-মধ্যেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভাল নৈপুণ্য দেখান। কিন্তু তাদের নৈপুণ্যে নেই তেমন কোন ধারাবাহিকতা। ক্রিকেট ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রীড়া অঙ্গনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অর্জনগুলো এসেছে শূটারদের হাত ধরেই। কমনওয়েলথ গেমস কিংবা সাফ গেমসে বেশ কবার লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছেন এদেশের শূটাররা। কিন্তু এশিয়ান গেমসে এ ইভেন্টে এখনও পদকবঞ্চিত তারা। যে কোন বিষয়ে সাফল্য লাভের জন্য দরকার পূর্ব পরিকল্পনা, প্রয়োজনীয় উপাদান এবং দীর্ঘ প্রস্তুতি। গোলাবারুদের খেলা শূটিংয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চূড়ান্ত সাফল্য পাওয়ার জন্য শূটিং ফেডারেশনের টার্গেট হচ্ছে ২০১৬ রিও অলিম্পিক গেমস। এ লক্ষ্য থেকেই শূটারদের নিবিড় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় ২০১৪ সাল থেকে। কিন্তু গত দুই বছরে সে অনুযায়ী শূটিংয়ে আন্তর্জাতিক সাফল্য এসেছে হাতে গোনা। এসএ গেমসের আগের ১১ আসরে বাংলাদেশ একমাত্র ২০১০ ও ১৯৯৩ আসর ছাড়া কখনই দুই অঙ্কের স্বর্ণপদক জেতেনি। ২০১০ আসরে সর্বোচ্চ ১৮ সোনা জেতে বাংলাদেশ। আর ১৯৯৩ সালে জেতে ১১টি। সর্বশেষ ২০১০ আসরে স্বাগতিক ছিল বাংলাদেশ। সে আসর ও ১৯৯৩ আসর বাদ দিলে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি সোনা জিতেছে ১৯৯৫ আসরে। ভারতের মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত সে আসরে বাংলাদেশ সেবার জিতেছিল ৭ সোনা। চলমান এসএ গেমসে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত চার সোনা জিতেছে! যদিও গেমস শেষ হতে আরও ছয় দিন বাকি। কিন্তু স্বর্ণপদক প্রাপ্তির হার আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে অনেক, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। শূটার শাকিলের প্রসঙ্গে ফেরা যাক। কোন সন্দেহ নেই, ক্যারিয়ারে এটাই তার এখন পর্যন্ত সেরা অর্জন। এর আগে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক সাফল্য পেয়েছিলেন ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে, এই ভারতের মাটিতেই, দিল্লীতে, এশিয়ান এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপে। আব্দুল্লাহ-হেল বাকি এবং শারমিন আক্তার রতœার ব্যর্থতায় যখন রীতিমতো ধুঁকছিল বাংলাদেশ শূটিং দল, তখন শাকিল পুরুষদের (জুনিয়র) ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে ১৭৫.২ পয়েন্ট স্কোর গড়ে তাম্রপদক জিতেছিলেন। কিছুটা হলেও মুখ রক্ষা করেছিলেন বাংলাদেশের। এখন দেখার বিষয়, শাকিল আগামীতে এ রকম উদ্ভাসিত সাফল্য এনে দিতে পারেন কি না।
×